রফির মতো কেউ আর আসবে না
হিন্দি সিনেমার প্লেব্যাকে তিনি কিংবদন্তি। সেই ১৯৫০-এর দশক থেকে বলিউডে বলা যায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তাঁর। হিন্দি সিনেমার প্লেব্যাকে হয়তো অন্য অনেক কিছুই হবে, কিন্তু একটা কথা নিশ্চিত, মোহাম্মদ রফির মতো কেউ আর আসবে না। আজ ২৪ ডিসেম্বর প্রয়াত এই সংগীতশিল্পীর জন্ম শতবর্ষ। হিন্দুস্তান টাইমস, ডিএনএ অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক রফি সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য।
তাঁকে বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্লেব্যাক গায়ক মনে করা হয়। ২০০১ সালে ‘স্টারডাস্ট’ ম্যাগাজিনের উদ্যোগে পাঠকদের ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি ‘শতাব্দীর সেরা গায়ক’ নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে সিএনএন-আইবিএন সমীক্ষায় রফিকে হিন্দি সিনেমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী নির্বাচিত করা হয়।
মোহম্মদ রফির জন্ম ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর, অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবের কোটলা সুলতান সিং নামের একটা ছোট্ট গ্রামে। মাঝা অঞ্চলের অমৃতসর জেলার সেই গ্রাম অন্যান্য গ্রামের মতোই ছিল। এখানকার বাসিন্দারা গবাদিপশু পালন করতেন। তাঁর বয়সী অন্য শিশুদের মতো ফিকোও (রফির ডাকনাম ফিকো) স্কুলের পর প্রতিবেশীর গবাদিপশু চরাতে নিয়ে যেতেন, আর গুনগুন করে লোকগীতি গাইতেন। সেই গ্রামে আসা এক ফকিরের গান শুনে অল্প বয়সে গানের প্রতি ঝুঁকে পড়েন মোহম্মদ রফি। তিনি ফকিরের ভজনগান অনুকরণ করে গাইতে থাকেন।
পরবর্তী সময়ে ফিকো (রফি) তাঁর বাবা হাজী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কাজে যোগ দেন। যিনি কিনা লাহোরে একটা ধাবা চালাতেন। এরপর রফি কাজ শুরু করেন ভাইয়ের সেলুনে। গ্রাহকদের আড্ডা দিতে গিয়ে ওয়ারিস শাহের ‘হীর’ ও পিল্লুর ‘মির্জা’ গাওয়ার লোভ সামলাতে পারতেন না রফি। তাঁর মিষ্টি কণ্ঠ নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করত। সেখানকার এক স্থানীয় লাহোরের অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্টুডিওতে ঘুরতে গিয়ে রফির সুরেলা কণ্ঠের গল্প করেন আকাশবাণী প্রধান জীবনলাল মাট্টুর কাছে। এরপর একদিন মাট্টু ওই নাপিতের দোকানে গিয়ে নিজের কানে ওই যুবকের গলা শুনতে পেলেন। এরপর তিনিই মুগ্ধ হয়ে রফিকে অডিশনের জন্য ডেকে পাঠান। এরপর তিনি পাঞ্জাবের লোকগায়ক হিসেবে অনুমোদন পেলেন।
১৫ বছর বয়সে একটি ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। রফি আর হামিদ গায়ক কে এল সায়গলের একটা অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কে এল সায়গল সাউন্ড সিস্টেম ছাড়া গান গাইতে অস্বীকার করেন। তখন হামিদ আয়োজকদের রাজি করিয়ে রফির গান গাওয়ার ব্যবস্থা করেন। রফি খালি গলায় গান গেয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। শ্রোতারা রফির কাছে একের পর এক গান গাওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক শ্যাম সুন্দর। তিনি রফির প্রতিভায় মুগ্ধ হন। তরুণ রফিকে তাঁর সিনেমায় গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র ‘গুল বালুচ’-এ জিনাত বেগমের সঙ্গে গাওয়া ‘সোনিয়ে নি হেরিয়ে নি’ গানের মাধ্যমে রফির সংগীতজীবনে আত্মপ্রকাশ। এর কিছুদিন পর লাহোরের অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাওয়ার সুযোগ হয় তাঁর।
১৯৪৪ সালে রফিকে নিয়ে বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) চলে যান হামিদ। সেখানে গিয়ে রফি বিখ্যাত সংগীতজ্ঞদের কাছ থেকে তালিম নিতে শুরু করেন। ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান, ওস্তাদ আবদুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবন লাল মটটু ও ফিরোজ নিজামির মতো মহান সংগীতজ্ঞদের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন তিনি। ‘গাঁও কি গোরি’ সিনেমায় গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর নতুন পথচলা শুরু হয়। পরের গল্প তো সবার জানা। মোহাম্মদ রফি নিজেকে তখনকার হিন্দি সিনেমার ভুবনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।