এটা অন্য জায়গায় হলে চুলের মুঠি ধরে বের করে দিত...

ইমন চক্রবর্তীছবি: প্রথম আলো

কলকাতার একটি মঞ্চে তখন গান গাইছিলেন পশ্চিমবঙ্গের গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। এমন সময় দর্শকের আসন থেকে গায়িকার কণ্ঠে বাংলা গান শুনতে অস্বীকৃতি জানানো হয়।

চিৎকার করে এক যুবক বলে ওঠেন, ‘হিন্দি গানা গাইয়ে, নাচেঙ্গে’। এতে মোটেও অবাক হননি ইমন চক্রবর্তী। দৃঢ় কণ্ঠে করলেন প্রতিবাদ। ভারতের বাংলা গানের এই গায়িকার প্রতিবাদের সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পশ্চিমবঙ্গের বিনোদন অঙ্গনের কেউ কেউ আবার ইমনের এই প্রতিবাদের সমর্থন জানিয়েছেন।

মঞ্চে গান গাওয়ার সময় হিন্দি গানই গাওয়ার অনুরোধ আসে। কোনো কোনো শিল্পীকে সেসব অনুরোধ রক্ষা করতেও দেখা যায়। কেউ আবার স্টেজে হিন্দি গান গাওয়ার সেসব ভিডিও চিত্র নিজেদের ফেসবুকে পোস্টও করেন। আবার কোনো শিল্পী আয়োজকদের এসব অনুরোধ মানেন না। পশ্চিমবঙ্গের এই গায়িকাও মানেননি। বাংলা গান গাওয়ার সময়ে ভিন্ন ভাষার শ্রোতার দাবি ছিল, হিন্দি গান গাইতে হবে। তাঁকেও জবাব দিয়েছেন ইমন।

ইমন চক্রবর্তী লোকগানের পাশাপাশি আধুনিক কিংবা রবীন্দ্রসংগীত, সব ধরনের গান গেয়ে থাকেন। বাংলা গান গেয়ে তিনি অর্জন করেছেন ভারতের জাতীয় পুরস্কারও। পাশাপাশি বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় এসে পরিবেশনা করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন
ইমন চক্রবর্তী। ইনস্টাগ্রাম থেকে

গত শুক্রবার কলকাতার রাজারহাটের একটি কনসার্টে ইমনকে বাংলা গান না গাওয়ার অনুরোধ করেন এক শ্রোতা। গায়িকাও অনুরোধ উপেক্ষা শ্রোতাদের উদ্দেশে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বাংলায় থাকতে হলে বাংলা গান শুনতে হবে।

ক্ষিপ্ত ইমন চক্রবর্তী মঞ্চ থেকে বলে ওঠেন, ‘জোরের সঙ্গে বলছি, আমি বাংলা গান শুনব না, এটা অন্য কোনো জায়গা হলে চুলের মুঠি ধরে ক্যাম্পাস থেকে বার করে দিত। বাংলায় থাকছ, বাংলায় রোজগার করছ; বাংলা গান শুনবে না বলছ? ফালতু জিনিস করবে না। এই রাজ্যের নাম বাংলা। পাঞ্জাবি গান শোনো, মারাঠি গান শোনো, ইংরেজি গান শোনো বাড়িতে। কিন্তু তোমার সাহস হলো কী করে, আমাকে বাংলা গান গাইতে না বলতে? সাহস কে দিল? এই ভণ্ডামিগুলো কোরো না। সাহস থাকলে স্টেজে এসো। বাংলায় থাকছ, বাংলায় চাকরি করছ, বাংলায় রোজগার করছ, এদিকে বাংলা গান শুনবে না বলছ!’

আরও পড়ুন

এদিকে কলকাতার সংবাদমাধ্যমকে ইমন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি জানতাম, ওখানে অবাঙালি শ্রোতা থাকবেন। আমরা যে শুধুই বাংলা গান গাই, তা কিন্তু নয়। আমি একজন সংগীতশিল্পী, সব ভাষার গান গাইব। কিন্তু আমার ভাষাকে অসম্মান করা হলে, তা মেনে নিতে পারব না। গতকালের অনুষ্ঠানেও ওই ছেলে অবাঙালি ছিল, আমি নিশ্চিত। সে যেভাবে আমাকে বলল, “হিন্দি গান গাইয়ে, নাচেঙ্গে”, তাতে আমি অপমানিত। বাংলায় থাকছে, রোজগার করছে। এই ভাষার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা থাকবে না?’

আরও পড়ুন
ইমন চক্রবর্তী। ইনস্টাগ্রাম থেকে

ভারতের অন্য শহরের সঙ্গে তুলনা করে ইমন বলেন, ‘প্রতিটি রাজ্যে নিজের ভাষাকে যথেষ্ট সম্মান করা হয়। চেন্নাই হোক বা দিল্লি—যেকোনো শহরেই প্রত্যেকে নিজের ভাষায় কথা বলেন। সেই জন্যই ওঁদের ছবি, সংস্কৃতি উচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। এটা কিন্তু নিজের ভাষার প্রতি সম্মানের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আর কারও যদি বাংলা গান শুনতে ইচ্ছাই না করে, তাহলে বাঙালি শিল্পীর অনুষ্ঠানে আসছেন কেন? এসে এগুলো করার তো কোনো অর্থ নেই।’