অবশেষে পুতুলের বোনের খোঁজ মিলেছে, আছেন খাবার ও পানির সংকটে

বোনের সঙ্গে সন্তানসহ গায়িকা পুতুল
ছবি : পুতুলের ফেসবুক

বন্যায় ফেনীতে থাকা ভাই ও বোনের পরিবারের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না, এমনটাই জানিয়েছিলেন গায়িকা পুতুল। গত শুক্রবার দুপুরে এমন কথা জানানোর পর গভীর রাতে জানান, ভাই ও তাঁর পরিবারের খোঁজ পেয়েছেন। একই সঙ্গে এও জানান, বোন ও তাঁর পরিবারের কোনো খোঁজ তখনো পাননি। আজ রোববার বেলা তিনটার পর পুতুল জানালেন, বোনের খোঁজও পেয়েছেন। তবে এখনো তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি। এদিকে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছেন পুতুলের মা–বাবা।

ছবিতে গায়িকা পুতুলের ভাই–বোন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা
কোলাজ

জানা গেছে, বাড়ির পাশের আরেকটি তিনতলা বাড়িতে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন। একজন সেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে বোনের খবর জানতে পেরেছেন। এদিকে পুতুল তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার বোনের পরিবারের খোঁজ পেয়েছি। ঠিকঠাক আছে জেনেছি। খাবার, পানির সংকটে আছে, যা হোক, বেঁচে আছে এটাই বড় কথা...।’

ফেসবুক পোস্টে পুতুল আরও লিখেছেন, ‘যাঁরা খোঁজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন গত কয়েক দিন, ফোনে বা মেসেজে প্রতিনিয়ত জানতে চেয়েছেন আপডেট, আপনাদের সবার প্রতি ঋণী রইলাম। যাঁরা আমার পোস্টগুলো শেয়ার করে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁদের প্রতি ভালোবাসা। যাঁরা দূর থেকে প্রার্থনা করেছেন কৃতজ্ঞতা তাঁদের প্রতিও। বাংলাদেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠুক, বন্যার্ত মানুষগুলোর প্রতি সবাই সহমর্মী হই। কী অবর্ণনীয় কষ্টে তাঁরা আছেন, তা ডাঙায় থাকা মানুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব।’

এদিকে বোনের কোনো খোঁজখবর না পেয়েও ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন পুতুল। তাতে লিখেছেন, ‘বোন, দুলাভাই, এক পুত্র, এক কন্যা। নিচে তাঁদের বাড়ির ঠিকানা দিচ্ছি। কেউ যদি কোনো সন্ধান পান চারজনের (হাসান মাহমুদ সজল, সানজিদা আক্তার কণা, সুরেলা, সাহিত্য) মধ্যে একজনেরও, প্লিজ একটু জানান। ঠিকানায় লেখা আছে, তুলাতলি, মঠবাড়িয়া ইউনিয়ন (আমতলী বাজারের কাছে), ফেনী সদর।’

আজ দুপুরে পুতুল প্রথম আলোকে জানান, বোনের সঙ্গে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয়। এর পর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আজ খোঁজ মিললেও এখনো কথা হয়নি।

পুতুল বললেন,‘সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের কয়েকজনকে ঠিকানা দিয়েছিলাম, চেষ্টা করছেন, কিন্তু কী হচ্ছিল, কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। আসলে ওই এলাকার প্রকৃতচিত্র কী, সেটাও বুঝতে পারছি না। শহর থেকে একটু দূরে তো। ফেসবুকে কয়েকটা ভিডিওতে দেখলাম, ওখানে প্রচুর পানি। তবে ভিডিওগুলো কবেকার তা বুঝতে পারছি না। গতকাল শনিবার সারা দিন ফেনীতে বৃষ্টি হয়নি। শহর থেকে নামছে। এই কয় দিন আম্মা–আব্বাকে মানিয়ে রাখা গেছে। এখন তাঁরা অস্থির হয়ে পড়েছেন।’

পুতুলের মা–বাবার বাড়ি ফেনী শহরের উকিলপাড়ায়। এই বাড়ি থেকে তাঁর বোনের বাড়ির দূরত্ব ৩৫ মিনিটের।

পুতুল বললেন, ‘প্রথম দিকে খুব একটা চিন্তা হচ্ছিল না। ভাবছি, বন্যার পানি নেমে যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই কয় দিন কোনো খবর না পাওয়ায় চিন্তা বেড়ে যায়। বাচ্চারা যেহেতু ছোট, খাওয়াদাওয়া পাচ্ছে কি না, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বাড়িঘরের তো কিছুই নাই, ওদিকে দোকানপাট যা–ও ছিল, সবই তো শেষ। একদম শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। আমার বোনদের পাকা বাড়ি। কাউকে বলতে শুনেছি, ২০ ফুট আবার কেউ বলেছে ১৮ ফুটের মতো পানি উঠেছে। ও রকম অবস্থা হলে তো পুরা বাড়ি পানির নিচে। আমি আজকে একটা ভিডিও দেখলাম, আমাদের শহরের বাড়ির। ওখানে আড়াইতলা পর্যন্ত পানি, তিনতলার ছাদ থেকে দেখা যাচ্ছে। তাহলে গ্রামের দিকের বাড়ির অবস্থা যে কী, ভাবতেই অস্থির লাগে।’

ফেনী শহরের বেড়ে ওঠা পুতুলের। ২০০৬ সালে গানের রিয়েলিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পেশাদার গানের জগতে যাত্রা শুরু তাঁর। দেড় যুগ ধরে স্থায়ীভাবে ঢাকাতে থাকছেন।