তাঁদের কাছে আমার ঋণের শেষ নেই: কুমার বিশ্বজিৎ
গত সোমবার রাতে কানাডার টরন্টোয় গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের একমাত্র ছেলে নিবিড় কুমার। বাংলাদেশে খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বিনোদন অঙ্গনের মানুষ থেকে সাধারণ ভক্ত, শ্রোতারা নিবিড়ের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন। টরন্টো থেকে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কঠিন সময়ে তাঁর পরিবারের পাশে থাকার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ।
গত সোমবার কানাডার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় দুর্ঘটনার সময় নিবিড় চালকের আসনে ছিলেন। সড়ক বিভাজকে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি উল্টে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে চার আরোহী ছিলেন। নিবিড় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও একই দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
একমাত্র ছেলের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্ত্রী নাঈমা সুলতানাসহ কানাডায় ছুটে গেছেন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি কানাডার টরন্টোতে পৌঁছেছেন বলে জানায় শিল্পীর পরিবার। সেখান থেকেই তিনি জেনেছেন, নিবিড়ের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন তাঁর সহকর্মী, ভক্তরা।
এ প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কৃতজ্ঞতা ও ঋণের শেষ নেই। আমার মনে হচ্ছে, ৪১ বছর ধরে মানুষকে আনন্দ দিয়েছি, সেটা সার্থক। কারণ, আমার ছেলের এই দুর্ঘটনার খবরে সবাই যেভাবে দোয়া–প্রার্থনা করেছেন, তা আমার মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মানুষের প্রত্যাশা যেন পূরণ হয়। সবার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা। তাঁদের দোয়া শেষ পর্যন্ত আমার কাছে থাকবে। আমি সত্যি অনেক মনোবল পেয়েছি সবার এমন ভালোবাসা দেখে। তাঁদের কাছে আমার ঋণের শেষ নাই। সারা জীবন তাঁদের কাছে আমার মাথা অবনত থাকবে।’
নিবিড়ের যে তিন বন্ধু দুর্ঘটনার প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য এবং তাঁদের পরিবারের জন্যও সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি বললেন, ‘ওরা সবাই আমার ছেলের বন্ধু। তারা সব সময় একসঙ্গে থাকত, খাওয়াদাওয়া করত। ঘুরতে যেত। স্বাভাবিক আমার পরিবারের তিনজন সদস্যকে হারালাম। এই বেদনা আমি সারাজীবন ভুলব না। তাদের সবার আত্মার শান্তি কামনা করছি। তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা বোঝাতে পারব না, তারাও আমার সন্তানের মতো।’
নিবিড়ের সবশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিবিড়ের চিকিৎসার এখনো দুইটা স্টেজ আছে। সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় যদি সেই দুটি স্টেজ সুন্দরভাবে পার করে আসতে পারি, তখন বলব, শতভাগ সফল।’
দুইটা পর্যায় কী কী, জানতে চাইলে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, দুইটা স্টেজের মধ্যে আছে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস এবং জ্ঞান ফিরে পাওয়ার বিষয়টি। ওর শরীরে ব্যথা আছে। এর মধ্যে আজ রাতে (কানাডা সময় বুধবার দিবাগত রাত) পাকস্থলীর একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে।
কুমার বিশ্বজিৎ জানান, দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর নিবিড়ের শরীরে দুটো অস্ত্রোপচার হয়েছে। প্রথমটা মস্তিষ্কে, মস্তিষ্কে যে রক্ত জমাট ছিল, তা বের করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টা পাকস্থলীতে। আরও কয়েকটা স্টেজ রয়ে গেছে। সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
কুমার বিশ্বজিৎ কথায় কথায় আরও জানান, নিবিড়ের আরও একটা অস্ত্রোপচার হতে পারে। চিকিৎসকেরা ভাবছেন, ওর একটা স্ট্রোকও হয়তো হয়েছে। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিলে এবং জ্ঞান ফিরলে এই অস্ত্রোপচার করা হবে।
কুমার বিশ্বজিৎ বললেন, নিবিড়ের অবস্থা এখন অপরিবর্তিত। কোনো অবনতি নেই। কানাডার ডাউন টাউনের সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। আর নিবিড়ের সার্জারির দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি নিউরোর সবচেয়ে ভালো সার্জন।