তারপর শ্রেয়া গাইলেন, স্লোগান উঠল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস!’
কনসার্টে শেষ গান হিসেবে সাধারণত ‘মেরে ঢোলনা’ গেয়ে শোনান শ্রেয়া ঘোষাল। বছরের পর বছর এভাবেই নিজের পরিবেশনা শেষ করেন শ্রেয়া। কিন্তু ১৯ অক্টোবর রাতে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দেখা গেল একদম ভিন্নচিত্র। শেষ গানে করলেন আর জি কর–কাণ্ডের প্রতিবাদ।
শেষ গান শুরুর আগে দর্শকের উদ্দেশে শ্রেয়া বলেন, ‘আমি একটি কিছু তৈরি করে নিয়ে এসেছি, একটা গান। আমি চাই, আপনারা শুনুন। আমার একটা ছোট্ট অনুরোধ, গানটা শোনা শেষ হলে আপনারা কেউ হাততালি দেবেন না। শুধু শুনুন। আরেকটা কথা, প্রয়োজনে আরেকবার গানটা বাজাবেন, কিন্তু হাততালি নয়। আমার অন্তরের কিছু শব্দ দিয়ে এই গান বানানো। আর আমি এটা উৎসর্গ করলাম এই শহর এবং সবার উদ্দেশে।’
তারপর শ্রেয়া ঘোষাল গাইলেন, ‘যত সন্ধ্যার যাওয়া মানা, যত রাত্রির অভিসন্ধি’। সঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন শিল্পীর প্রতিবাদ একদম অন্য রকম। গান শেষ হলে নিঃশব্দে স্টেজ ছাড়েন শ্রেয়া ঘোষাল। গান গেয়ে শ্রেয়া মঞ্চ ছাড়ার পর করতালির বদলে দর্শকের আসন থেকে স্লোগান উঠল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস!’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরই মধ্যে ভাইরাল গায়িকার এই পারফরম্যান্স। ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করে শোভন মণ্ডল লিখেছেন, ‘এমন প্রতিবাদের নজির আগে কখনো দেখেনি শহর কলকাতা।’ সন্দীপ দাশ নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘কলকাতায় প্রতিবাদের সুর তীব্রতর হতে দেখলাম আজ। জয় হোক শ্রেয়া আর শ্রেয়ার সুরসাধনা।’
হিন্দুস্তান টাইমস সূত্রে জানা গেছে, কলকাতায় শ্রেয়া ঘোষালের এই কনসার্ট করার কথা ছিল গত ১৪ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেই সময় তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘কলকাতার বুকে যে বর্বর এবং পাশবিক ঘটনা ঘটেছে, সেটার জন্য আমি ভীষণ দুঃখিত। মেয়েটার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, যে বর্বরতার শিকার সে হয়েছে, আমি একজন নারী হয়ে সেটার কথা ভাবলেই যেন শিরদাঁড়া দিয়ে হিমস্রোত বয়ে যাচ্ছে। তাই ব্যথিত হৃদয় এবং অত্যন্ত মনঃকষ্ট নিয়ে জানাচ্ছি যে আমি এবং ইশক এফএম আমাদের কনসার্ট শ্রেয়া ঘোষাল লাইভ, অল হার্টস ট্যুর ইশক এফএম গ্র্যান্ড কনসার্ট পিছিয়ে দিচ্ছি। এটা অক্টোবর মাসে হবে।’ সেই প্রতিবাদী স্ট্যাটাসের ধারাবাহিকতাই যেন ১৯ অক্টোবরের শেষ গান।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ৯ অগস্ট থেকে বিচারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। চলছে অনশন। গত শুক্রবার ন্যায়বিচারের দাবিতে নির্যাাতিতার বাড়ি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত রিলে মিছিল করেছেন জনতা। প্রতীকী অনশনে বসেন টলি অভিনেতারাও। সেই প্রতিবাদের আঁচ ছড়িয়ে পড়ল শ্রেয়ার কনসার্টে৷
এরই মধ্যে শ্রেয়ার এই পারফরম্যান্স নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুণাল লেখেন, ‘শ্রেয়ার গান যথাযথ। যাঁরা এ নিয়ে রাজনীতি করতে নেমেছেন, তাঁরা মনে রাখুন, শ্রেয়া প্রথম দিন থেকে বলেছেন, নারী নির্যাতনের সমস্যাটা গোটা দেশের সমাজের। তিনি বাঙালি, কলকাতায় গেয়েছেন, ঠিক করেছেন, স্বাগত জানাই। শিল্পী তাঁর মানসিকতা আগে থেকেই বলেছেন। নিজেদের কুৎসার একতরফা লাইনে ব্যবহার করবেন না। এখানে গণতন্ত্র আছে, শিল্পী গাইতে পারেন। অন্য রাজ্যে নেই।’