লাইফ সাপোর্টে থাকা জুয়েলের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানালেন স্ত্রী

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলফাইল ছবি

কয়েক দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকা সংগীতশিল্পী ও অনুষ্ঠান নির্মাতা হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তাঁর শরীরে রক্তের সংক্রমণের হার কমেছে। রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা যে কমেছিল, তা–ও আজ বাড়ছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে এমনটাই জানিয়েছেন জুয়েলের উপস্থাপক ও সংবাদ পাঠিকা স্ত্রী সংগীতা আহমেদ।
১৩ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাসেবাও চলছিল। এখন তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন তিনি।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় সংগীতা আহমেদ বললেন, ‘চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রক্তের সংক্রমণের মাত্রা কমলে এবং রক্তের প্লাটিলেট মাত্রা বাড়ার হার অব্যাহত থাকলে হয়তো চিকিৎসকেরা লাইফ সাপোর্ট খুলে দেবেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতির এভাবে চলতে থাকলে, স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারবে। তবে এর সঙ্গে ক্যানসারের উন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই।’

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে জুয়েলের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর স্ত্রী সংগীতা আহমেদ জানান, শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২৩ জুলাই রাত থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। জানা গেছে, ২০১১ সালে জুয়েলের লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও সেটি ক্রমেই সংক্রমিত হয়।

শুরু থেকেই দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাসেবা চলছিল। পরিচিতজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তদের কাছে জুয়েলের জন্য দোয়া প্রার্থনাও করেছে তাঁর পরিবার।
ব্যান্ড সংগীত যখন তুমুল আলোচনায়, ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী কণ্ঠ নিয়ে হাজির হন শিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। ব্যাংকার বাবার চাকরির কারণে ছোটবেলায় তাঁকে থাকতে হয়েছিল দেশের বিভিন্ন জায়গায়। মা-বাবার অনুপ্রেরণাতেই গানের জগতে পা রাখেন জুয়েল। প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী একজনের কাছে গান শিখেছিলেন আর মঞ্চে প্রথম গান করেছিলেন তখন তিনি পড়েন চতুর্থ শ্রেণিতে।
১৯৮৬ সালে ঢাকায় চলে আসেন জুয়েল। এসেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-কেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। তখনই বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটতে শুরু করে।

জুয়েলের প্রথম অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘এক বিকেলে (১৯৯৪)’, ‘আমার আছে অন্ধকার’ (১৯৯৫), ‘একটা মানুষ’ (১৯৯৬), ‘দেখা হবে না’ (১৯৯৭), ‘বেশি কিছু নয়’ (১৯৯৮), ‘বেদনা শুধুই বেদনা’ (১৯৯৯), ‘ফিরতি পথে’ (২০০৩), ‘দরজা খোলা বাড়ি’ (২০০৯) এবং ‘এমন কেন হলো’ (২০১৭)।

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল

একটি করে গান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আরও দুটি অ্যালবাম ‘তাতে কি বা আসে যায়’ (২০১৬) এবং ‘এই সবুজের ধানক্ষেত’ (২০১৬)। ১০টি একক অ্যালবামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘এক বিকেলে’ অ্যালবামটি। এটি প্রকাশের পর তাঁর নাম হয়ে যায় ‘এক বিকেলের জুয়েল’। জুয়েল একই সঙ্গে সংগীতশিল্পী, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কারণ, হিসেবে তিনি বলেছিলেন, আর্থিক ও মনের কথা বিবেচনা করে তিনি তাঁর পেশাকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন। গান করতেন হৃদয়ের টানে। শিল্পী জুয়েল হিসেবে পরিচিত হতেও পছন্দ করতেন। তাই গান করার সময় যাতে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়তে না হয়, সে জন্য আরেকটি পেশা বেছে নিয়েছিলেন।