রাজনৈতিক আদর্শ থাকতেই পারে, তাই বলে বঞ্চিত হতে হবে? মনির খানের প্রশ্ন

মনির খানছবি : প্রথম আলো

একটা সময় ছিল যখন নিয়মিত বাংলাদেশ বেতারে যেতেন সংগীতশিল্পী মনির খান। গাইতেন নতুন সব গান। দীর্ঘ ১৫ বছর তা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকার আগারগাঁওয়ের বেতার ভবনে গেলেন। স্টুডিওতে গাইলেন গানও। তবে একটি নয়, তিন দিনে চারটি গানে কণ্ঠ দেন এই সংগীতশিল্পী। এত বছর পর বেতারে গাইতে পেরে আনন্দিত এই শিল্পী। জানা গেছে, গানগুলোর সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন মাকসুদ জামিল মিন্টু। দেশের গানের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়েও একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

মনির খান
ছবি : মনির খানের সৌজন্যে

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে আজ বুধবার দুপুরে কথা হয় মনির খানের। তিনি জানান, ‘সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রেডিওতে যাওয়ার শুরু। এর মধ্যে তিনবার গিয়েছি, চারটি গানে কণ্ঠ দিয়েছি।’

কেন লম্বা সময় ধরে যাওয়া হয়নি সেই কারণটা জানালেন এভাবে, ‘যাওয়া হয়নি পরিস্থিতির কারণে, ভিন্নমতের রাজনীতি করতাম বলে। আমি বিএনপির রাজনীতি করতাম। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। নট অনলি রেডিও, শিল্পকলা, বিটিভিসহ সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে আমাদের অবস্থান ছিল না। আমার দুঃখ ছিল, আমি তো তিনবার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, জনগণের ভালোবাসায় মনির খান হয়েছি। সেখানে গণতান্ত্রিক একটি দেশে কী এমন অপরাধে করেছিলাম যে আমি কোনো জায়গায় দাওয়াত পর্যন্ত পাইনি! গান গাওয়ার সুযোগও পেতাম না। কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যবসায়ী মহল তো আমাকে মনির খান বানায়নি। তাই কষ্টটা আমার এই জায়গায় ছিল। আমি জনগণের মনির খান, দেশের মনির খান—তাহলে আমি গান গাইতে সুযোগ পাব না কেন। আমার তো রাজনৈতিক আদর্শ থাকতেই পারে, তাই বলে আমাকে বঞ্চিত হতে হবে!’

স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরে নিজের বাগানবাড়িতে মনির খান
ছবি: সংগৃহীত

মনির খান বললেন, ‘বরাবরই আমি রেডিওতে গান গাইতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। রেডিওর পরিবেশ–পরিস্থিতি সবকিছু মিলিয়েই আমার কাছে আগে থেকেই ভালো লাগত। সেখানে গানের একটা চমৎকার পরিবেশও আছে। নামীদামি এবং গুণী যন্ত্রশিল্পীরাও আছেন। দেশে এখনো সবচেয়ে বেশি অ্যাকুস্টিক যন্ত্রপাতি বেতার কিংবা টেলিভিশনে আছে, যেগুলো অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল। সেখানে রেকর্ডিংয়ের মানও ভালো। সবকিছু মিলিয়ে সেখানে লাইভ গান গাওয়ার সুন্দর পরিবেশ আছে। এমন পরিবেশে গাইতে পারাটা নিজেকে পরীক্ষা করার মতোও বলা যায়।’

শিল্পী হিসেবে ১৫ বছর মনির খান ভুগলেও অন্য শিল্পীদের ভাগ্যে যেন এমনটা না ঘটে, সেটাই চাওয়া তাঁর। তবে যাঁরা তাঁদের মতো অন্য শিল্পীদের কারণ ছাড়াই বঞ্চিত করেছেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনার কথাও বললেন। মনির খান বললেন, ‘আমার একটা কথা খুব পরিষ্কার, যাঁরা বঞ্চিত করার এই সংস্কৃতি ও পরিবেশ সৃস্টি করার জন্য উলঙ্গ ভূমিকা রেখেছেন, ন্যক্কারজনক ভূমিকা রেখেছেন—তাঁদের মেনে নেওয়া সত্যিকার অর্থে কষ্টকর। কিন্তু দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করার জন্য সবার উপস্থিতি এবং সবার একসঙ্গে কাজ করার বিকল্প নেই। কারণ, আমি একা মনির খানের পক্ষে সংস্কৃতির এই জায়গা পূরণ করা সম্ভব নয়। আমাদের সবাইকে দরকার। আবারও বলছি, যাঁরা এই পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের প্রতি আমার কথা আছে। তাঁদের কাজ করতে হলে কথাবার্তা বলে আসতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ রকম ন্যক্কারজনক কাজ যেন না করে।’