প্রশ্নপত্রে ব্যান্ডের নাম: হামিন বললেন, অন্তরে যখন জায়গা করে নেয় তখনই সম্ভব
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যান্ড মিউজিক–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে গত রোববার অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র শোভা পাচ্ছে। হঠাৎ কী এমন হলো যে এমনটা হচ্ছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন সেট সাজানো হয়েছে দেশের জনপ্রিয় সব ব্যান্ডদলের নামে। কেউ বলছেন, সম্ভবত যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনি নব্বইয়ের দশকের রুচিশীল শ্রোতা ছিলেন। কেউবা বলছেন, যিনি প্রশ্নের প্যাটার্ন তৈরি করেছেন, তিনি অবশ্যই ব্যান্ড মিউজিক ভালোবাসেন। দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডদলের সদস্যরাও এই প্রশ্নপত্র নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত রোববার শুরু হয়েছে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন সেট সাজানো হয় বিভিন্ন ব্যান্ডের নামে। অ্যাশেজ ব্যান্ডের সদস্য জুনায়েদ ইভান তাঁর ফেসবুক পেজেও এটি পোস্ট করেছেন। পোস্টটি এরই মধ্যে দুই হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। ব্যান্ডের নামসংবলিত প্রশ্নপত্র ফেসবুকে পোস্ট করে জুনায়েদ ইভান লিখেছেন, ‘২০২৪ এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নকোড সাজানো হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যান্ডের নাম অনুসারে। এবার প্রশ্নের সেট সাজানো হয়েছে অ্যাশেজ, মাইলস, ওয়ারফেজ, চিরকুট, লালন, আভাস, অবসকিউর ব্যান্ডের নাম দিয়ে। নিশ্চয়ই বাংলা ব্যান্ডের জন্য এই উদ্যোগ মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
মাইলস ব্যান্ডের সদস্য হামিন আহমেদ ফেসবুকে প্রশ্নপত্র পোস্ট করে বিষয়টিকে চমৎকার বলে উল্লেখ করেছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘আমি তো জানতাম না। ভক্তরা পোস্ট করে ট্যাগ করেছে। কেউ কেউ জানতেও চেয়েছে, “হামিন ভাই, দেখছেন এটা?” আমি দেখে প্রথমে ভাবলাম, কেউ হয়তো বানিয়ে করছে। অনেকে আবার এমনও মন্তব্য করছে, “আমি মাইলস সেটের প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এলাম!”’
হামিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যান্ডের একটা দারুণ বিপ্লব ঘটেছে। ব্যান্ড থেকে যে গানগুলো হয়েছে, সারা পৃথিবীতে ব্যান্ডদল যে পারফর্ম করে বেড়াচ্ছে, এটার একটাই কারণ—মানুষের জীবনের সঙ্গে ব্যান্ডের এই গানগুলো মিশে আছে। গানগুলো সত্যিই ভালো গান। মানুষ কখনো ব্যান্ডের এই গানগুলো ছেড়ে যাবে না। এই যে গানগুলো থেকে ব্যান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, তা সত্যিই অতুলনীয়। বিষয়টা হচ্ছে, আমরা তো ব্যান্ডের সবাই বাংলাদেশ ও বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছি। তারুণ্যকে উদ্দীপ্ত করছি। যে ভদ্রলোক প্রশ্নপত্র তৈরিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁর অনুভূতি কতটা গভীর হলে যেখানে নদীর নাম বা ফুলের নাম ব্যবহার করা হতো, সেখানে ব্যান্ডের নামে প্রশ্নপত্রের সেটের নাম দিয়েছেন! তিনি কিন্তু একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, যেটা এমন—ব্যান্ডের নামটাও এভাবে উচ্চারিত হওয়া উচিত। অবশ্যই এটা প্রশংসার দাবিদার।’
কথা প্রসঙ্গে হামিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আজকে জেমস কানাডায় পারফর্ম করছে, তার আগে যুক্তরাষ্ট্রে কতগুলো শো করে আসছে, এগুলো কি কারও চোখে পড়ে না? বাংলা গান নিয়ে তারা পৃথিবী ভ্রমণ করছে। দেশ–বিদেশের এমন এমন জায়গায় ব্যান্ড মিউজিক এবং শিল্পীরা বাংলা গান নিয়ে যাচ্ছে, তা সত্যিই দারুণ খবর। যেখানে একটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি সংগঠিত নেই, সেখানে একজন আর্টিস্ট, একটা ব্যান্ড, একটা এলআরবি, সোলস, মাইলস, জেমস, ওয়ারফেজ—এরাই বাংলা গান নিয়ে ঘুরছে দেশ থেকে দেশ! কোক স্টুডিও ওয়ারফেজের একটা গান ছেড়েছে, পুরো যেন বিপ্লব শুরু হয়েছে। অনেকে ইগনোর করতে পারে। বড় বড় চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিরাও ইগনোর করতে পারে, কিন্তু কোনো লাভ নেই—সাধারণ মানুষ বারবার দেখিয়ে দেবে, তাদের জন্য কী ম্যাটার করে। বিদেশে ডলার দিয়ে টিকিট কেটে শো দেখে, এটা কারও দরকার আছে নাকি। মাইলসের শোতে সান ফ্রান্সিসকোতে অফিস ছুটি নিয়ে ফ্লাইটে এসে গান শুনছে শ্রোতারা! কেন এটা করে? তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী, একমাত্র গান।’
হামিন আহমেদ আরও বলেন, ‘বাংলা গান বলে যে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি, এই গান পৃথিবীর মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছে কে বা কারা? কাউকে ছোট করছি না। ব্যান্ড মিউজিকের একটা বড় অবদান রয়েছে। ব্যান্ড যখন পারফর্ম করছে, একসঙ্গে ১০ থেকে ২০ হাজার দর্শক বিদেশেই হয়ে যাচ্ছে। আমরা তো অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাজালাম, কয়েক মাস আগে, সেখানে ১২ হাজারের বেশি দর্শক ছিল।’
সবশেষে প্রশ্নপত্রে ব্যান্ডের নাম প্রসঙ্গে এটাও বলেন, ‘ব্যান্ডের গানগুলোকে শ্রোতারা যেভাবে হৃদয়ে ধরে রেখেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এগুলো কালজয়ী গান। সৃষ্টিশীলতার পরিষ্কার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। বাণিজ্যিক শিল্প যেভাবে এগোয়, সেটারও প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। ব্যান্ডের গান ও ব্যান্ড অন্তরের অন্তস্তলে যখন জায়গা করে নেয়, তখনই এটা সম্ভব।’