যত দিন বাংলা গান, তত দিন মাজহারুল আনোয়ার: তথ্যমন্ত্রী

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভায় উপস্থিত অতিথিরাছবি : সংগৃহীত

যুগ–যুগান্তরে যত দিন বাংলা গান থাকবে, তত দিন গাজী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর কালজয়ী গানের মাঝে বেঁচে থাকবেন। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে প্রয়াত গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভায় এভাবেই তাঁকে বর্ণনা করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সদ্য প্রয়াত বহুমুখী সাংস্কৃতিক প্রতিভা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কালজয়ী গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন। তাঁর ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ যেমন মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জুগিয়েছে, তেমনি ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’—এমন সব গান আমাদের আনমনা করে দেয়। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের মধ্যে তাঁর তিনটি গান রয়েছে। ‘নান্টু ঘটক’ থেকে শুরু করে অনেক সিনেমার পরিচালক-প্রযোজক এবং আরও অনেক সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

শুরুতে স্মৃতিচারণ করেন সংগীত শিল্পী মনির খান। তিনি বলেন, ‘মনের চাহিদার সঙ্গে তাঁর লেখা, বাস্তবতা, বস্তুনিষ্ঠ বিষয়গুলো কলমের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেত। আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে চিৎকার করে বলতে পারি, আর সম্ভব নয়।’

গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘আমরা যারা তাঁকে আদর্শ মানতাম তারা তার কাজ দেখে অনুপ্রেরণা পেতাম।’

বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফেডারেশন (বিএমএফ) সভাপতি গাজী আব্দুল হাকিম বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার যদি শুধু একটি গানই লিখতেন 'জয় বাংলা, বাংলার জয়' তাহলে আমার মনে হয় না আর কোনও গান লেখার প্রয়োজন! একটা মানুষের ২০ হাজার গানের ভেতর ১৮ হাজার গানই সুপার হিট কীভাবে হয় আমার বুঝে আসে না। তাঁর মতো গাজী ভাই হাজার বছরে একবার আসেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভায় কথা বলছেন রফিকুল আলম

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় গাজী ভাইয়ের আরেকটি জীবন শুরু হলো। সেই জীবনের দায়িত্ব আমাদের কাছে। যদি তার ২০ হাজার গান আমরা সত্যিকার অর্থে সংগ্রহ করতে সক্ষম হই, হয়তো ৬-৭ খণ্ড হবে, আসুন না সবাই মিলে চেষ্টা করি। আমাদের স্বার্থে না হলেও পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে কাজটি করি।’

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে স্মরণ করেন তাঁর স্ত্রী জোহরা গাজী, পুত্র সরফরাজ আনোয়ার আনোয়ার, কন্যা দিঠি আনোয়ার, গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুরস্রষ্টা শেখ সাদী খান, গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনির।

গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য ও বরেণ্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেন, ‘গাজী মাজহারুল আনোয়াররের সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য ১১ দিনের। আমাকে ফোন করে তাঁর বইয়ে একটি লেখা দিতে বলেছিলেন। তাঁর বইয়ে নাকি আমার লেখা থাকতেই হবে। তিনি যখন বলেছিলেন, আমি তখন মনে মনে ভাবলাম যে থাকতেই হবে। আমার যত অনুভূতি তাঁর সম্পর্কে, আমার হৃদয়ে তাঁর যে স্থান— সেই সম্পর্কে আমি লিখেছি আমার লেখার মধ্যে। গাজী মাজহারুল আনোয়ার হৃদয়ের কোথায় স্থান করে নিয়েছে আপনারা তা সহজেই অনুধাবন করতে পারেন।’

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভায় কথা বলছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী

গীতিকবি সংঘের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বিদেশে থাকায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে লিটন অধিকারী রিন্টু, মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটির সভাপতি কণ্ঠশিল্পী নকীব খান, গীতিকবি সংঘের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, খুরশীদ আলম প্রমুখ কথা বলেন।

এ ছাড়া ইয়াকুব আলী খান, শহীদুল্লাহ ফরায়জী, রিপন খান, রবি চৌধুরী, আশরাফ বাবু, কাজী হাবলু, কোনাল, পুলক অধিকারীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে এ স্মরণসভায় যোগ দেন।