মৃত্যুর আগে হাসপাতাল থেকে ভিডিও বার্তায় যা বলেছিলেন শাফিন
সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। আয়োজকদেরও প্রস্তুতির কমতি ছিল না। গান শুনতে ছুটে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের সংগীতপ্রেমীরাও। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন হঠাৎ শাফিন আহমেদের অসুস্থতায় পরিকল্পনা পাল্টাতে হয় আয়োজকদের। সেদিন একই মঞ্চে গান গাওয়ার কথা ছিল দেশের আরেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরীর। তিনি গান শুরুর আগে মঞ্চে থাকা এলইডি পর্দায় হাজির হন শাফিন আহমেদ। হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি একটি ভিডিও বার্তায় অনুষ্ঠানে না থাকতে পারার কথা জানান।
২০ জুলাই ভার্জিনিয়ার একটি স্টেজ শোতে গাওয়ার কথা ছিল শাফিন আহমেদের। এদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাঁকে সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তিনি আর সুস্থ হয়ে ফেরেননি। গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর।
তার আগে আয়োজকদের একটি ভিডিও বার্তা দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেছিলেন এই কথাগুলো, ‘আজকে কনসার্টে আপনাদের সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল। তবে শারীরিক কিছু লক্ষণের জন্য আমি একটু মেডিকেল চেকআপ করতে আসি। মেডিকেল চেকআপ করতে এসে হাসপাতালের চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী সময় লাগছে। তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চেকআপ করতে হচ্ছে। আপনারাও দেখতে পাচ্ছেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি আছি। আপনাদের সাথে হয়তো আজকে আর দেখা হচ্ছে না। দুঃখিত আমার সব শ্রোতা এবং ভক্তদের কাছে, একই সঙ্গে আয়োজকদের কাছেও। আগামীতে নিশ্চয় আপনাদের সাথে দেখা হবে। আমি আশা করব আপনাদের সাথে দেখা হবে। ধন্যবাদ।’
এরপর সেদিন রাতে শাফিন আহমেদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। গভীর রাতে গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তিনি আর কারও সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারেননি। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, শাফিন আহমেদকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ভার্জিনিয়ার সেই হাসপাতালের চিকিৎসক, এমনটাই জানিয়েছেন বড় ভাই দেশের আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা হামিন আহমেদ।
শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম ও বাবা সংগীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত।
এই পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত। এরপর বড় ভাই হামিন আহমেদসহ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্য সংগীতের সংস্পর্শে এসে ব্যান্ড সংগীত শুরু করেন। দেশে ফিরে গড়ে তোলেন ‘মাইলস’। যা দেশের শীর্ষ ব্যান্ডের একটি এখনো। এই ব্যান্ডের নব্বই ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তিনি কণ্ঠের পাশাপাশি ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন।
তবে বড় ভাই হামিন আহমেদের সঙ্গে দীর্ঘ বিবাদের জেরে গত কয়েক বছর তিনি মাইলস থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গড়ে তোলেন।
শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে—‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি। তিনি তাঁর বাবা কমল দাশগুপ্তর কিছু গান নিয়েও একক অ্যালবাম করেছিলেন। মাঝখানে কিছুদিন রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েও আলোচনা সৃষ্টি করেছিলেন।
দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেন ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। কত পরিকল্পনা, দেশটির এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে গানে গানে শ্রোতা মাতাবেন। শুরুটা হয়েছিলও তেমন সুন্দর। দ্বিতীয় কনসার্টের আগে যেন খেলেন ধাক্কা। যে ধাক্কা তাঁর জীবনের সব হিসেব–নিকেশ নিমেষেই পাল্টে দেয়। সামলে উঠতে পারেননি আর। বরণ করে নিতে হয় মৃত্যুকে।