ভাইয়ের ড্রয়ার থেকে চুরি করা লিরিক, ৫০ বছর পর সামনে আনছেন নকীব
পেশাদার সংগীতজীবনের ৫০ বছর পার করছেন রেনেসাঁ ব্যান্ডের জনপ্রিয় গায়ক নকীব খান। এ উপলক্ষে কয়েকটি গান প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তবে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, যাত্রা শুরু হবে জীবনের প্রথম সুর করা গানটি দিয়ে। ৫০ বছর আগে সুর করা সে গান আজও প্রকাশিত হয়নি। কিছুদিন আগে হঠাৎ তাঁর মনে হলো, গানটি প্রকাশের এটাই সবচেয়ে সুন্দর সময়। তাই উদ্যোগ নিয়েছেন সেই গান প্রকাশের। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুরে লন্ডন থেকে প্রথম আলোকে খবরটি নিশ্চিত করেন নকীব খান।
এই মুহূর্তে স্টেজ শো করতে লন্ডনে আছেন নকীব খান। সাবেক ব্যান্ড সোলসের সঙ্গে দুটি স্টেজ শোতে গান পরিবেশন করতে তাঁর সেখানে যাওয়া। এরই মধ্যে লন্ডনের শো শেষ করেছেন, বাকি আছে বার্মিংহামের একটি শো। এরপরই দেশে ফিরবেন।
জানা গেছে, দীর্ঘ ৪০ বছর পর আবার যুক্তরাজ্যে স্টেজ শো করতে গেলেন নকীব খান।
লন্ডন থেকে গতকাল দুপুরে কথা প্রসঙ্গে নকীব খান জানান, তখন তিনি চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওই সময়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে জীবনের প্রথম গানের সুর করেন তিনি। হেনা ইসলামের লেখা সেই গানের শিরোনাম ‘একাকী যখন নির্জনে আমি’। জীবনের প্রথম সুর করা গান সংগীতজীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশ করতে যাচ্ছেন নকীব খান।
গানের গল্প প্রসঙ্গে নকীব খান বলেন, ‘আমার বড় ভাই জিলু খান (জালাল উদ্দিন খান জিলু) ও হেনা (ইসলাম) ভাই বন্ধু ছিলেন। ভাইয়াকে তখন হেনা ভাই সুর করার জন্য কয়েকটা লিরিক দিয়েছিলেন। বড় ভাই এসব লিরিক ড্রয়ারে রেখেছিলেন। তিনি যখন বাসার বাইরে যান, অফিসে গেলেন—তখন মনে মনে ভাবলাম, আমি একটা সুর করার চেষ্টা করে দেখি না। ড্রয়ার থেকে ঝুঁকি নিয়ে চুরি করে একটা লিরিক নিলাম, এরপর সুর করলাম। বড় ভাই বাসায় আসার পর বললাম, একটা অন্যায় কাজ করছি। ড্রয়ার থেকে আপনার একটা গান চুরি করে নিয়ে সুর করছি। এরপর বড় ভাই বললেন, “তাই নাকি! তাই নাকি! কই দেখি, শোনাও তো।” শোনানোর পর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, “অনেক দোয়া করি, খুব ভালো হয়েছে গানটা।”’
নকীব খানের বড় ভাই জিলু খান তাঁর চেয়ে বয়সে ১০ বছরের বড়। তিনিও একসময় ব্যান্ড সংগীত করতেন।
সেই সময়ের কথা মনে করে নকীব খান বললেন, ‘আমরা তিন ভাই (জিলু খান, নকীব খান, পিলু খান) মিউজিক করতাম। আমাদের প্রথম ব্যান্ড কিন্তু বালার্ক, যার অর্থ ভোরের সূর্য। এই ব্যান্ড করতে গিয়ে কি-বোর্ড বাজানো থেকে সুর করা, সব শিখেছি। ১৯৭২ সালে এই ব্যান্ডের হয়ে প্রথম শো করি, কক্সবাজারে। তখন আমরা তিন ভাই বাজাই। আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি, পিয়ানো আর অ্যাকর্ডিয়ন বাজাতাম। পিলু পড়ত ক্লাস ফোরে, সে ড্রামস বাজাত। আর বড় ভাই কি-বোর্ড বাজাত। এটাই প্রথম ব্যান্ড আমার। বড় ভাইয়ের চাকরির ব্যস্ততায় এরপর ব্যান্ডটা ভেঙে যায়। ১৯৭৪ সালে আজকের ব্যান্ড সোলসে যোগ দিই, তখন অবশ্য সেটির নাম ছিল সুরেলা।’
জীবনের প্রথম সুর করা গান প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে নকীব খান বলেন, ‘হয়তো কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমরা তো আসলে অতটা পেশাদারভাবে কাজও করি না। মনে হয়, ভুলেও গিয়েছিলাম। অথবা ও রকম সিরিয়াসনেসও আমার মধ্যে ছিল না। এখন মনে করছি, ৫০ বছর একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার, গানটা প্রকাশ করা উচিত। এ গানটা স্মৃতিময় একটা ব্যাপার। জীবনে প্রথম সুর করা গানটা তো মানুষের কাছে আসা উচিত, শোনা উচিত।’ সবশেষে নকীব খান জানালেন, কথা ও সুর তখনকার হলেও শোনার পর মনে হবে, আধুনিক ও সমসাময়িক। তবে সংগীতায়োজনে একটা নতুনত্ব থাকবে।