মা এবং বোনের মৃত্যুতে হতাশায় ডুবে যান শিল্পী
কালজয়ী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। রবীন্দ্রসংগীতের জন্য উৎসর্গ করেছেন পুরো একটি জীবন। পরিবার-সংসারের টানাপোড়েন—কোনো কিছুকেই গানের সামনে আসতে দেননি বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই শিল্পী। অথচ তাঁর মনে এত অভিমান, জমাটবাঁধা কষ্ট, ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি দেশ-বিদেশে থাকা তাঁর অগণিত ভক্তরা। পরিবার আর কাছের কিছু বন্ধুই কেবল জানতেন তাঁর হৃদয়ের লুকানো অভিমান, পাওয়া না–পাওয়া। শিল্পীর শেষ সময়ের দিনগুলো যেভাবে কেটেছে, এমন প্রশ্নের জবাব চ্যানেল আইকে দিয়েছেন নৃত্যশিল্পী ও পারিবারিক বন্ধু শামীম আরা নিপা।
সবশেষ সাদি মহম্মদের মানসিক অবস্থা নিয়ে শামীম আরা নীপা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই বিষণ্নতায় ভুগছিলেন, শিবলী আমাকে বলেছিল, তুই একটু আয়, আমরা সাদি ভাইকে একটু বোঝাতে চাই, তুই থাকলে সাদি ভাই কথা শোনে। এসেছিলাম, অনেকক্ষণ কথা হলো, কথা দিয়েছিল আর ডিপ্রেশনে যাবে না। তখন বলছিলাম, তুমি একজন চিকিৎসকের কাছে যাও, উত্তরে বলেছেন, “না, আমারটা আমি বুঝব। তোমরা আমাকে নিয়ে ভেবো না”।’
শুধু তা–ই নয়, হতাশা-মনের কষ্টগুলো ভুলে থাকতে শিল্পীকে অনুষ্ঠান করারও পরামর্শ দেন নীপা। তিনি জানান, ‘বলেছি তুমি অনুষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে যাও। তাহলে এই যে তোমার কষ্ট হচ্ছে, খালাম্মার জন্য বিভিন্ন কারণে, সেটা কেটে যাবে। বলেছেন, করবেন। আমি বললাম, তাহলে পয়লা বৈশাখেই করি, উত্তরে বললেন, “না, আমি চৈত্রসংক্রান্তিতে করব।”
আমি বললাম, তাহলে আমরা এর মধ্যে এসে তোমার সঙ্গে বসব, একটা অনুষ্ঠান করব। তারপর সবাই মিলে ওকে জড়ায়ে ধরলাম, শিবলী ধরল, নাসরিন ছিল ওর বোন, এত সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হলো যে মনে হয়েছে ও আর ডিপ্রেশনে নেই। ও আমাদের এটাই বোঝাতে চাইল যে ও একদম স্বাভাবিক। তোমরা এ নিয়ে ভাইবো না। তোমরা যা বলবা তাই করব।
সেই মানুষটা এমন একটা কাজ করবে, আমরা ভাবি নাই, এটা আমাদের ব্যর্থতা যে ওর অনেক কষ্ট ছিল যে সেটাকে আমরা পূর্ণ করতে পারি নাই, এটা আমাদের জাতিগতভাবে ব্যর্থতা, ওর অভিমানটা থেকেই গেল। এ দেশকে সে অনেক দিয়েছে, পাওয়ার জায়গাটা অনেক কম ছিল।’
গত বছরের জুলাইয়ে মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ এবং পরে বোনের মৃত্যুতে হতাশায় ডুবে যান শিল্পী। পাশাপাশি গানের জগতে পুরো জীবনটা উৎসর্গ করেও না পাওয়ার বেদনা কুরে কুরে খেত শিল্পীকে। সবশেষ সেই বেদনা থেকে মুক্তি পেতে বুধবার স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন অভিমানী শিল্পী সাদি মহম্মদ।