নজরুলের গানের ঝরনাধারা গুলশান লেকের পাড়ে
নজরুল মিলিয়েছিলেন দ্রোহ আর প্রেম। গুলশানের লেকের পাড়ে পাকুড়গাছের পাশে মঞ্চ বেঁধে কবির সেই গানের অমিয় ঝরনাধারা বইয়ে দিলেন দুই বাংলার খ্যাতনামা ও নবীন প্রতিভাবান শিল্পীরা। গত দুই দিন ধরে বিকেল থেকে বেশ খানিকটা রাত পর্যন্ত এখানে অনুষ্ঠিত হলো নজরুল উৎসব।
শুক্রবার বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থার আয়োজনে গুলশানের লেকপার্কে শুরু হয়েছিল তৃতীয় নজরুল উৎসব। এতে সহায়তা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন, ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও গুলশান সোসাইটি। উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, মূল বক্তা ছিলেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক।
শনিবার সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। আলোচনাপর্বে অংশ নেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, গুলশান সোসাইটির মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবিব ও নজরুল সংগীত সংস্থার সভাপতি শিল্পী ইয়াকুব আলী খান। আলোচকেরা বলেন, নজরুল ইসলাম মাত্র দেড় দশকের মতো সময় সংগীত নিয়ে কাজ করতে পেরেছিলেন। সব ধরনের গান রচনা ও বৈচিত্র্যময় সুর সৃষ্টি করেছেন তিনি। তাঁর অসামান্য প্রতিভায় এই অল্প সময়ে বাংলা গানের ভুবন পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল।
আলোচনাপর্বের পর একটি ভিডিওতে নজরুলসংগীত নিয়ে সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। বিশেষত, সংস্থা যে অনলাইনভিত্তিক নজরুলসংগীত কোষ তৈরি করেছে, তার বিস্তারিত এখানে তুলে ধরা হয়। এই কোষে কবির ১ হাজার ৮০০ গানের স্বরলিপি, মূল সুরে বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত রয়েছে। এটি আরও নবায়নের কাজ চলছে বলে জানানো হয়।
দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল গান, নৃত্য ও আবৃত্তি দিয়ে। অব্যয় ঋদ্ধি গেয়েছেন জয় আনন্দ ভৈরব, মনিষ সরকার গেয়েছেন বসন্তমুখর আজি, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সির পরিবেশনা ছিল ছেড়ে দাও মোরে, আমি পথ-মঞ্জরী গেয়েছেন শ্রাবন্তী ধর, রেজাউল করিম গেয়েছেন বল রাঙা হংসদূতি। পরপর এই পাঁচটি গানের পরে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ গানের সঙ্গে ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন ধৃতি নর্তনালয়ের শিল্পীরা। তারপর আবৃত্তি করেন আলী।
নজরুল উৎসবের আহ্বায়ক শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল জানালেন, এবার তৃতীয় নজরুল উৎসব করছেন তাঁরা। উৎসবের প্রস্তুতি চলে সারা বছর। সংস্থার শিল্পী ও প্রশিক্ষকেরা দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন। তাঁদের মধ্য থেকে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী বেরিয়ে আসেন। এই নবীন প্রতিভাদের বিকাশে সহায়তা দিতে ঢাকায় উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ভারতের কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীরাও এই উৎসবে অংশ নেন।
এবার কলকাতার ছয় শিল্পী উৎসবে অংশ নিয়েছেন। প্রথম দিনে সংগীত পরিবেশন করেছেন মনোময় ভট্টাচার্য, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবারতী দত্ত। গতকালে গেয়েছেন রাঘব চট্টোপাধ্যায়, পায়ের কর ও পণ্ডিত তুষার দত্ত। উৎসবের দুই দিনে ৮০ জন শিল্পী একক সংগীত পরিবেশন করেছেন।
সমাপনী দিনে ইয়াকুব আলী খান গেয়েছেন কত ফুল তুমি পথে, খায়রুল আনাম শাকিল গেয়েছেন সাধ জাগে মনে, তানভীর আলম সজীব শুনিয়েছেন যেন ফিরে না যায়। শেষ হয়েছিল জাতীয় সংগীত দিয়ে।