বলা হতো ‘গোল্ডম্যান’, কত কেজি সোনা রেখে গেছেন বাপ্পি লাহিড়ী
সানগ্লাসে ঢাকা চোখ। ঘাড় পর্যন্ত চুল। গলায় নানা রকমের সোনার চেইন। হাতে একাধিক সোনার ব্রেসলেটও চোখে পড়ার মতো। মুখে সব সময় হাসি। সব মিলিয়ে সংগীত পরিচালক তথা গায়ক বাপ্পি লাহিড়ীর কথা বললে এমন একটা চেহারাই ভেসে ওঠে। অন্য রকম, সহজেই নজর কাড়তেন।
‘আই অ্যাম আ ডিসকো ড্যান্সার’ গান শোনেননি, এমন সংগীতপ্রিয় মানুষ পাওয়া যাবে না। এমনকি ‘চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখ না, কভি অলবিদা না কেহ না’ হিন্দি গানের পাশাপাশি বাংলা সিনেমা ‘অমরসঙ্গী’র ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’সহ অসংখ্য শ্রোতৃপ্রিয় গানের জন্ম দিয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ী। ভারতের মতো বাংলাদেশেও জনপ্রিয় ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তিনি জাগতিক ভ্রমণ শেষ করেছেন ২০২২ সালেই এই দিনে, ১৫ ফেব্রুয়ারি। ২০২২ সালেই ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মুম্বাইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন—৬৯ বছরের পথচলা শেষ হয় তাঁর।
আশির দশকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ী। বলিউডের ‘ডিসকো ড্যান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শারাবি’, বাংলায় ‘অমর সঙ্গী’, ‘আশা ও ভালোবাসা’, ‘আমার তুমি’, ‘অমর প্রেম’ প্রভৃতি ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন। গেয়েছেন বেশ কিছু জনপ্রিয় গান।
২০২০ সালে তাঁর শেষ গান ‘বাগি-৩’-এর জন্য। জীবনকালে গান নিয়ে তিনি যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তেমনই তাঁর পোশাকও ছিল বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রে। বাপ্পি লাহিড়ী মানেই ভক্তদের কাছে আদ্যোপান্ত ‘সোনায় মোড়া’ এক মানুষ। তাঁর গয়না ব্যবহার নিয়ে নানা রসিকতাও শোনা গেছে। কেন গয়না পরতেন, সেটাও জানিয়েছেন তিনি।
একাধিক সাক্ষাৎকারে বাপ্পি তাঁর সোনার গয়না প্রতি দুর্বলতার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর সংগ্রহ ছিল যেকোনো গয়নাপ্রেমীর কাছে ঈর্ষণীয়। তাঁকে বলিউডের ‘গোল্ডম্যান’ বলা হতো। কোনো সময়ই সোনার হার, ব্রেসলেট, আংটি ছাড়া দেখা যেত না তাঁকে। তিনি জানিয়েছিলেন, মূলত বিখ্যাত সংগীতশিল্পী এলভিস প্রিসলির দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত।
তিনি বলেছিলেন, ‘এলভিস প্রিসলি সোনার হার পরতেন। আমি প্রিসলির বড় ভক্ত ছিলাম। আমি ভাবতাম, যদি কোনো দিন সফল হই, তাহলে নিজের অন্য রকম ভাবমূর্তি গড়ে তুলব। স্রষ্টার আশীর্বাদে সোনার মাধ্যমে সেটা করতে পেরেছি। আগে মানুষ ভাবত, আমি সবাইকে দেখানোর জন্যই সোনার গয়না পরি। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। সোনা আমার কাছে সৌভাগ্যের বাহক, আমার এগিয়ে যাওয়ার সাহস।’
বাপ্পির ভাষায়, ‘আমার স্রষ্টার নাম সোনা! যখন থেকে সোনার গয়না পরা শুরু করেছি, আমার একের পর এক গান হিট করা শুরু করেছে। সোনা আসলে আমার জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই এত সোনার গয়না কিনি আর পরি।’
আপনি কি জানেন, প্রয়াত এ সংগীতশিল্পীর রেখে যাওয়া সোনার পরিমাণ কত? ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর ব্যবহৃত সোনা-রুপার পরিমাণ ৫ কেজি ৩৫৪ গ্রাম। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এই গায়ক। সেই সময় মনোনয়নপত্রে সোনা-রুপার পরিমাণ উল্লেখ করেন। তখন জানা যায়, ভারতীয় এই গায়ক ৭৫৪ গ্রাম সোনা ও ৪ কেজি ৬২০ গ্রাম রুপার মালিক। এই সবই তাঁর গলার চেইন, ব্রেসলেট, হাতের ঘড়িসহ অন্যান্য ব্যবহৃত অলংকার বা গয়না। বাপ্পির এসব গয়না তাঁর স্ত্রী চিত্রাণী লাহিড়ীও পরতে ভালোবাসেন। তবে বাপ্পি লাহিড়ীর চেয়ে তাঁর স্ত্রীর সোনার গয়নার পরিমাণ আরও বেশি। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চিত্রাণী ৯৬৭ গ্রাম সোনা, ৮ কেজি ৯০০ গ্রাম রুপার গয়না রয়েছে।
কিশোর কুমার ছিলেন বাপ্পির সম্পর্কে মামা। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁশরী লাহিড়ী—দুজনেই সংগীতজগতের মানুষ। ফলে একমাত্র সন্তান বাপ্পি ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা–বাবার কাছেই পেয়েছিলেন প্রথম গানের তালিম। মা-বাবা নাম দিয়েছিলেন অলোকেশ, কিন্তু জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন বাপ্পি নামে।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি। এরপর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন, সুর দিয়েছেন। ছিল গায়কির নিজস্ব কায়দা, যা তাঁকে হিন্দি ছবির জগতে অন্য রকম পরিচিতি দিয়েছিল। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার এবং সম্মান। বাপ্পি লাহিড়ী রাজনীতিতেও নেমেছিলেন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে কখনোই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি তিনি।