কৈশোরের প্রেমকে সুরে বেঁধেছেন মোহন

মোহন শরীফছবি: খালেদ সরকার

কৈশোরের ঘোর লাগা সময়ে মোহন শরীফের মনকে রাঙিয়ে তুলেছিল এক কিশোরী। প্রজাপতির মতো চঞ্চল সেই কিশোরীর প্রেমে একেবারে মশগুল হয়ে পড়েছিলেন এই তরুণ গায়ক। প্রজাপতির পিছু পিছু ছুটছেন দিনমান কিন্তু ধরি ধরি করেও তাকে ধরা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল, তা জানা যায়নি।

তবে কিশোরবেলার সেই প্রেমকে ‘প্রজাপতি’ গানের কথা আর সুরে বেঁধেছেন মোহন শরীফ। গানের কথার মায়া আর সুরের জালে ফিরে ফিরে এসেছে সেই প্রেম।

‘প্রজাপতি’ লেখার গল্পটা মোহন শোনালেন, ‘আমি তার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি, সে নিজেকে আরও বড় ভাবছে। তাকে হারানোর ভয়ে আমি ছুটে চলেছি। সেই ভাবনা থেকেই গানটা লিখেছি।’ এই গানে তরুণ শ্রোতারা নিজেদের প্রজাপতিকে খুঁজে পেয়েছেন। অক্টোবরে নতুন করে গানটি প্রকাশের পর শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।

মোহন শরীফ
ছবি: প্রথম আলো
কাঁচা প্রেমটা ভেঙে যাওয়ার পর হারানো হৃদয়টাকে খুঁজছিলেন মোহন। সেই যন্ত্রণাকাতর সময়ে লেখা ‘যন্ত্রণা’ গানটি বহু তরুণ শ্রোতার যন্ত্রণার উপশম দিয়েছে।

বরাবরই মোহনের গানে মেলে বিচ্ছেদ, বিষাদ আর হৃদয় ভাঙার সুর। ব্যক্তিগত যন্ত্রণা নিয়ে আছে আরেকটি আলোচিত গান ‘যন্ত্রণা’। বয়স তখন আর কত, বড়জোর ১৬ বছর। কাঁচা প্রেমটা ভেঙে যাওয়ার পর হারানো হৃদয়টাকে খুঁজছিলেন মোহন। সেই যন্ত্রণাকাতর সময়ে লেখা গানটি বহু তরুণ শ্রোতার যন্ত্রণার উপশম দিয়েছে।

২০১৯ সালে ন ডরাই সিনেমায় গানটি প্রকাশের পর রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান মোহন। এর আগে ২০১৮ সালে কমলা রকেট সিনেমায় প্রথম গান ‘মোমবাতি’ প্রকাশ করেন। ‘যন্ত্রণা’ ও ‘মোমবাতি’—ক্যারিয়ারজুড়ে এ দুটি গান প্রকাশ করেই সংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন মোহন।

ঘুমানোর আগে গান, উঠেও গান

২০১৯ সালে পড়াশোনা করতে কানাডায় চলে যান মোহন। পড়াশোনা শেষ করে ২০২২ সালের দিকে ঢাকায় ফিরে একটি কোম্পানিতে চাকরি নেন। মাইনেও ভালো ছিল। তবে গানে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। গানটা ঠিকঠাক করার জন্য তাই চাকরিটা ছেড়ে দেন মোহন।

আমি বাসাতেই গান করি। আমার বেডরুমেই স্টুডিও সেটআপ রয়েছে। ঘুমাতে যাওয়ার আগপর্যন্ত মিউজিক করি।
মোহন শরীফ, সংগীতশিল্পী

মাঝখানে প্রায় পাঁচ বছর আর কোনো গান প্রকাশ করেননি। নিজের লেখা ও সুর করা ৪০টির মতো গান রয়েছে। গত এক বছরে ‘প্রজাপতি’সহ ১৫টির মতো গান রেকর্ড করেছেন। নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন।

অক্টোবর থেকে ‘মোমবাতি’, ‘প্রজাপতি’সহ নতুন চারটি গান প্রকাশ করেছেন তিনি। সামনে আরও কয়েকটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এখন থেকে নিয়মিত গান প্রকাশ করবেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি বাসাতেই গান করি। আমার বেডরুমেই স্টুডিও সেটআপ রয়েছে। ঘুমাতে যাওয়ার আগপর্যন্ত মিউজিক করি। আবার ঘুম থেকে উঠেই গান রেকর্ড শুরু করি। প্রযোজনা করি।’

‘প্রজাপতি’ ছাড়াও ‘জ্বলন্ত আগুন’, ‘মূর্তি’সহ মোহনের কয়েকটি গান স্পটিফাইসহ বেশ কয়েকটি ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে গানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো প্রকাশ করেননি মোহন। বন্ধুদের আড্ডায় গানগুলো গাইতেন, সেখান থেকে কেউ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘বন্ধুরা প্রকাশ করেছে, তবে এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

মোহনের গানের অনুরাগীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে চাইছেন, গানগুলোর রেকর্ড ভার্সন কবে আসবে? তাঁদের অনুযোগ আমলে নিয়ে মোহন বলেন, শিগগিরই গানগুলো প্রকাশ করবেন।

আগামী বছরের মাঝামাঝির দিকে অ্যাকুয়াস্টিক ভার্সনের একটি অ্যালবাম বের করবেন। এর গানগুলো বাংলা ও ইংরেজির মিশ্রণে করা হয়েছে। পরে ‘প্রজাপতি’, ‘জ্বলন্ত আগুন’, ‘মূর্তি’র মতো গান নিয়ে আরেকটি অ্যালবাম করবেন।

মোহন শরীফ
ছবি: প্রথম আলো

‘হিপহপের সঙ্গে মিশে গেছি’

মূলত হিপহপ গান করেন মোহন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই হিপহপ শুনে বেড়ে উঠেছি। হিপহপ থেকেই মিউজিকের টেস্টটা এসেছে। পরে কানাডায় গিয়ে হিপহপ আর্টিস্টদের সঙ্গে পরিচয়। হিপহপ জনরার সঙ্গে মিশে গেছি।’

সামনে হিপহপ নিয়ে অ্যালবামেরও পরিকল্পনা করেছেন তিনি। স্বপ্ন কী, জানতে চাইলে বলেন, বিদেশের বড় আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করতে চান। সেটা ভোকালিস্ট হিসেবেই হোক, প্রযোজক হিসেবেই হোক। ইতিমধ্যে কয়েকজন বিদেশি আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ শুরুও করেছেন।

নিয়মিত গান প্রকাশ করলেও কনসার্টে মোহনকে কম দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘শো আমার কাছে অনেক পরিশ্রমসাধ্য মনে হয়। শোর চেয়ে ইউটিউবে গান প্রকাশেই বেশি মনোযোগ দিতে চাই।’

আরও পড়ুন

মোহনের জন্ম সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। তাঁর বাবা (শরীফ সান্টু), মা (শরীফ মনিকা) ও বড় ভাই (শরীফ মিরন) জুরিখে থাকতেন। ছয় বছর বয়সে ঢাকায় আসেন তাঁরা। শৈশবেই তাঁকে গানের স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবা। ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।

পরে ঢাকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পড়াশোনা আর চালিয়ে যাননি। ২০১৯ সালে কানাডায় পড়তে যান। ভিএফএক্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় এসে থিতু হয়েছেন।