১৮ বছর আগে পাওয়া ভক্তের চিঠি পড়লেন আসিফ, মিলল সেই মেয়ের খোঁজ
বিনোদন জগতের পছন্দের তারকাদের ঘিরে ভক্তদের নানা ধরনের উন্মাদনা দেখা যায়। ফেসবুক যুগের আগে অনেক ভক্তই পছন্দের তারকাকে চিঠি লিখতেন। সারা দেশ থেকে পাওয়া এমন হাজারো চিঠির কয়টির আর উত্তর দিতে পারেন তারকারা! সম্প্রতি সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরের কল্যাণে জানা গেছে ভক্তের চিঠি নিয়ে একটি ঘটনা।
আসিফ আকবরের বাসা ভক্তদের চিঠিতে ভর্তি। বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা ভক্তদের অনেক চিঠিই তাঁর পড়া হয়নি। প্রায় ১৮ বছর আগে শারমীন আক্তার মুন্নী নামে এক ১৩ বছরে কিশোরী আসিফকে চিঠি লিখেছিলেন। হঠাৎ করেই গত বুধবার ড্রয়িংরুমে বসে ধুলাপড়া একটি চিঠি তাঁর নজরে আসে। তিনি দেখেন যে ১৮ বছর আগের চিঠি এটি। চিঠিতে ওই ভক্তের তাঁর গানের প্রতি, তাঁর পরিবারের প্রতি ভালোবাসার মুগ্ধতা দেখে অবাক হয়ে যান আসিফ। সঙ্গে ওই ভক্তের একটি ছবিও ছিল চিঠির মধ্যে।
ভক্তের ভালোবাসায় আবেগাপ্লুত আসিফ তাঁর ফেসবুক পেজে সেই কিশোরীর ছবিসহ একটা লম্বা স্ট্যাটাস দেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১৯ ঘণ্টায় প্রায় ৪৫ হাজার লাইক এবং প্রায় ৩ হাজার মন্তব্য পড়েছে পোস্টটিতে।
স্ট্যাটাসের একাংশে আসিফ লিখেছেন, ‘আইদাহ্ (আসিফের মেয়ে) দুপুরে আমার সঙ্গেই খেলে। ওর সঙ্গে খেলার সময় ড্রয়িংরুমে হঠাৎ করে একটা মুখবন্ধ খামের ওপর চোখ গেল। তারিখ লেখা ০৯/০৫/২০০৫। খুলে দেখলাম ভেতরে ছবি, সঙ্গে একটা চিঠি। ওর নাম শারমীন আক্তার মুন্নী। আমাকে “চাচ্চু” সম্বোধন করে লেখা। আমার ব্যক্তিজীবন, গান, পরিবার সব তাঁর পছন্দ। একদিন অনেক বড় গায়িকা হওয়ার ইচ্ছা তাঁর। চিঠিটা অন্য কারও হাতে পড়লে অবশ্যই যেন আমাকে পৌঁছে দেয়, এটা তার আকুতি। সেই চিঠি আঠারো বছর পর আজ খুলে দেখলাম।’
কীভাবে চিঠিটা আসিফের সামনে এল? জানতে চাইলে প্রথম আলোকে আসিফ বলেন, ‘আমার বাসায় চার কার্টন, চার ব্যাগ ভর্তি ভক্তদের চিঠি আছে। এগুলো আমার বউ সংরক্ষণ করে রেখেছে। ব্যস্ততার কারণে পড়ার সময় পাইনি। সম্প্রতি বাসা পরিবর্তন করেছি। নতুন বাসায় জিনিসপত্র এখনো অগোছালো। চিঠির ব্যাগগুলো ড্রয়িংরুমেই এলোমেলো পড়ে আছে। মেয়ের সঙ্গে খেলতে খেলতে হঠাৎ ব্যাগের ওপর এই চিঠির খামটি দেখতে পাই। খুলে দেখি এই কাণ্ড। নিজের কাছে তখন খুবই অপরাধী মনে হচ্ছিল।’
স্ট্যাটাসের আরেক অংশে সংগীতশিল্পী লিখেছেন, ‘চিঠিটি পড়তে গিয়ে চোখের কোণে পানিই চলে এল। অদ্ভুত অপরাধবোধ আর শূন্যতায় বুকটা হাহাকার করে উঠল। মেয়েটা নিশ্চয়ই এখন ম্যাচিউরড, নিশ্চয়ই তার মনে একটা গুমোট অতৃপ্তি রয়ে গেছে, যেটার দায়ভার সম্পূর্ণ আমার। পরিত্যক্ত ট্রাভেল স্যুটকেস আর কার্টনভর্তি লাখো চিঠি বেগমের সংগ্রহে। সেগুলো খোলার সময়ই মেলেনি। ফ্যানরা যেভাবে আমার অ্যালবামগুলো আগলে রেখেছে অসীম আবেগ দিয়ে, বেগমের কাছেও তাদের সব চিঠি সযত্ন রাখা রংবেরঙের স্মৃতি নিয়ে।’
আসিফ বলেন, ‘সত্য কথা কি, আমি আজ আসিফ হয়েছি এই সব ভক্তের কারণেই। এই চিঠি পড়ার পর আমার খুব খারাপ লাগছিল। মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়ে। আমার কাছে সংরক্ষণ করা লাখো চিঠির মধ্যে হয়তো আরও এ ধরনের অনেক চিঠি আছে। সেই অপরাধ ঘোচাতে তার ছবিসহ আমি ফেসবুকে এটি লিখেছি। যদি কখনো মুন্নীর চোখে পড়ে, কৈশোরের স্বপ্ন হয়তো পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু এত দিন পরও যে আমি তাকে স্মরণ করেছি, তাতেও হয়তো তার অভিমানী মন ভাগবে। সে কিছুটা হলেও খুশি হবে।’
এদিকে পোস্টটি করার পরপরই মুন্নীর এক বান্ধবী আসিফের সঙ্গে যোগযোগ করেন। ঠিক দুই ঘণ্টার মাথায় পোস্টের নিচে, মন্তব্যের ঘরে ওই ভক্ত মুন্নীও সাড়া দেন। তিনি ভালোবাসার ইমোতে মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘এই যে চাচ্চু আমি।’ আসিফও তাঁর সাড়ায় মন্তব্য লিখতে দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে মুন্নীর মন্তব্যের নিচে আসিফ লিখেছেন, ‘মুন্নী, তোমার জন্য সবাই উদ্গ্রীব। আমাদের ভুবনে স্বাগতম। আমি খুবই আনন্দিত। আশা করছি, সবাই তোমাকে উইশ করবে। আনন্দে বাঁচো।’
আসিফ বলেন, ‘মেয়েটির সংবাদ পেয়েছি। ওর বয়স এখন ৩১ বছর। আমার ছেলের কিছুটা বড়। ও এখন দুই সন্তানের মা। থাকে চট্টগ্রামে। স্বামী ব্যাংকের কর্মকর্তা। ভালো আছে, এখনো সে আমার গান শোনে।’
স্ট্যাটাসের শেষ অংশে আসিফ আকবর লিখেছেন, ‘বহু বছর পর মনে হলো, আমার আসলে গোছানো কোনো অবসরের সুযোগ নেই। শান্ত, স্নিগ্ধ, সৌম্য, টাইপ শব্দগুলো আমার সঙ্গে যায় না। কলোরাডো নদীর মতো স্বগর্জনে গিরিখাত কাঁপানো গতিপথই আমার নিয়তি। তবু পড়তে হবে, এই হাজার হাজার চিঠির ভেতর আটকে থাকা আবেগগুলোর নির্যাস নেওয়ার সময় এসেছে। সব ধুলা মুছে আবারও একাকার হয়ে যাব পুরোনো ভালোবাসায়।’
সংগীততারকা বলেন, ‘এখন থেকে ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে পুরোনো চিঠিগুলো পড়ব। এটি আমার বেগমের কড়া নির্দেশ। কারণ, ভক্তদের ভালোবাসায় আমি আজও আসিফ হয়ে বেঁচে আছি। কারণ, একজন তারকার ভক্তরাই প্রাণ, ভক্তরাই মান। তাই চিঠিগুলো পড়ে ভক্তদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই।’
আসিফ আকবর জানান, এই লক্ষাধিক ভক্তের লেখা চিঠি থেকে বাছাই করা চিঠি নিয়ে বই আকারে একটি সংকলন প্রকাশ করতে চান তিনি।