বিরতির পর ফিরছে লালন
বেশ কিছুদিন ধরেই ‘লালন’–এ টানাপোড়েন চলছিল। আর মার্চে তো ব্যান্ডকে বিদায়ই বলে দেন দলনেতা ও ড্রামার থিন হান মং তিতি। ‘ব্যান্ডের চেয়ে ব্যক্তির প্রাধান্য’ বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তখন। এরপর আর ব্যান্ডটিকে কোনো কনসার্টে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
বর্তমান লাইনআপ
বেজ: তাহজিব উর রশীদ
কি–বোর্ড: আরাফাত বসুনিয়া
গিটার: মহন্ত সরকার
হারমোনিক ভোকাল: শারুফ ইসলাম ফায়াস
লিড ভোকাল: নিগার সুলতানা সুমি
ড্রামস: থিন হান মং তিতি
বলা চলে, একরকম বন্ধই ছিল ব্যান্ডের কার্যক্রম। অভিমান ভেঙে মে মাসেই ব্যান্ডে ফেরেন তিতি। এবার ভক্তদের জন্য আরও এক সুখবর নিয়ে আসছে লালন।
১৭ অক্টোবর ফকির লালন শাহর ১৩৪তম তিরোধান দিবস। এদিনই মুক্তি পাবে লালন ব্যান্ডের নতুন অ্যালবাম ‘বাউলস অব বেঙ্গল’। এতে থাকছে সাতটি গান। ২০১৮ সালে বাজারে আসে ব্যান্ডের সর্বশেষ অ্যালবাম ‘সাদা কালো’, সময়ের হিসাবে ছয় বছর পর নতুন অ্যালবাম নিয়ে আসছে লালন। লালন ব্যান্ডের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম গান ‘একটা বদ হাওয়া’ এসেও গেছে গত শুক্রবার।
বাউলস অব বেঙ্গল-এ লালন শাহর চারটি গানের সঙ্গে রাধারমণ দত্ত, বিজয় সরকার ও শাহ আবদুল করিমের একটি করে গান রয়েছে। নতুন অ্যালবামের সংগীতায়োজন করেছেন লালন ব্যান্ডের দলনেতা ও ড্রামার তিতি। গত শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৭ অক্টোবর সাঁইজির তিরোধান দিবস।
আগে এই দিবসে প্রায়ই আমাদের কুষ্টিয়ায় লালন আখড়ায় যাওয়া হতো। কয়েক দিন আগে জানতে পারি, এবার সেখানে যাওয়া হবে না। তাই মন কিছুটা ভারাক্রান্ত। এদিকে বছরখানেক ধরে আমাদের গান তৈরির কাজ চলছিল। দেখলাম, ৯-১০টি গান তৈরি আছে। ভাবলাম, যেহেতু যাওয়া হচ্ছে না, অ্যালবাম করি। গানগুলো থেকে বাছাই করে সাতটি গান নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিই।’
আগের অ্যালবামগুলো থেকে ‘বাউলস অব বেঙ্গল’কে আলাদা বলতে চাইছেন তিতি। তাঁর মতে, ‘অন্য সব অ্যালবাম বা গান বাণিজ্য ও দর্শকের চাহিদার কথা ভেবে প্রকাশ করা হলেও এবারের অ্যালবাম নিজেদের শিকড়ের প্রতি দায়বদ্ধতা ও আত্মসন্তুষ্টির জন্যই তৈরি করা হয়েছে। গানগুলো তৈরির সময় কোনো চাপও তাই অনুভব করেনি কেউ। আমাদের বাউল ইতিহাস ৬০০ বছরের বেশি পুরোনো, এর ওপরই আমাদের সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে আছে। সেই শিকড়ের কাছে আমরা ফিরতে চেয়েছি।’
অ্যালবাম নিয়ে উচ্ছ্বসিত ব্যান্ডটির ভোকাল নিগার সুলতানা সুমি। গানগুলোতে কণ্ঠ দিতে গিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, জানালেন তিনি। প্রথম আলোকে সুমি বলেন, ‘আমার কাছে এটি শুধু একটি অ্যালবাম নয়, উপন্যাস। যে উপন্যাসের দুর্বল চরিত্র আমি। যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও গানগুলোর অ্যারেঞ্জমেন্টের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কণ্ঠ দিতে পারিনি। আমৃত্যু এই আক্ষেপ আমার থেকে যাবে, কম্পোজিশন যতটা উচ্চমানের হয়েছে, তার সঙ্গে তাল মেলানোর মতো যোগ্য শিল্পী আমি হয়ে উঠতে পারিনি। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছি। আমি বিশ্বাস করি, এই অ্যালবাম মানুষের মনে সারা জীবন থেকে যাবে।’
‘একটা বদ হাওয়া’ ছাড়াও অ্যালবামটিতে লালন শাহর লেখা ও সুরে ‘অধর চাঁদ’, ‘সত্য বল সুপথে চল’ ও ‘মান তরঙ্গ’ গান রয়েছে। এর মধ্যে ‘অধর চাঁদ’ গানে অতিথি শিল্পী হিসেবে গেয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল। এ ছাড়া রাধারমণ দত্তের ‘বন্ধু দয়াময়’, বিজয় সরকারের ‘আমি যারে বাসি ভালো’ ও শাহ আবদুল করিমের ‘তোমারও পিরিতে বন্ধুরে’ গানগুলো রয়েছে। চলতি মাসে লালন ব্যান্ডের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে বাকি সব কটি গান প্রকাশিত হবে। অ্যালবামের প্রচ্ছদ করেছেন খন্দকার নাসির আহাম্মেদ।
আগামী মাসে কনসার্টেও ফিরছে লালন। এরই মধ্যে কয়েকটি স্টেজ শোর প্রস্তাব এসেছে। তবে আরও সময় নিয়ে অনুশীলন সেরে মঞ্চে ফিরতে চায় তাঁরা।