২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ব্যান্ডের ডিজিটাল অ্যালবাম বাড়ছে

গানে নিয়মিত হওয়ার পর ডিজিটাল অ্যালবামে ঝুঁকেছে শিরোনামহীন, ইন্দালো, অ্যাশেজের মতো ব্যান্ডছবি: কোলাজ

ক্যাসেট ও সিডির দিন ফুরানোর পর ডিজিটাল যুগে খেই হারিয়েছিল ব্যান্ড সংগীত। টালমাটাল সময় পেরিয়ে আবারও গানে নিয়মিত হয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যান্ডগুলো। গানে নিয়মিত হওয়ার পর ডিজিটাল অ্যালবামে ঝুঁকেছে শিরোনামহীন, দলছুটের মতো ব্যান্ড।
শিরোনামহীনের ‘বাতিঘর’, দলছুটের ‘সঞ্জীব’, আরবোভাইরাসের ‘রিপাবলিক অব আরবোভাইরাস’, ইন্দালোর ‘উত্তর খুঁজেছি দক্ষিণে’, জলের গানের ‘আয়না জলের গান’, অ্যাশেজের ‘বিভ্রম’সহ বেশ কয়েকটি অ্যালবামের গান প্রকাশ্যে এসেছে।

আরও পড়ুন
শিরোনামহীন ব্যান্ডের সদস্যেরা
ছবি: ফেসবুক থেকে

এর মধ্যে কয়েকটি গান শ্রোতাদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বাতিঘর অ্যালবামের শিরোনাম সংগীত ‘বাতিঘর’ শ্রোতৃমহলে আলোচিত হয়েছে। ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত অ্যালবামের দ্বিতীয় গান ‘জানে না কেউ’–এর ভিডিওচিত্র ইউটিউবের ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায় রয়েছে; এই গানের ইংরেজি ভার্সনও প্রকাশ করবে শিরোনামহীন। বাতিঘর অ্যালবামে মোট ১০টি গান থাকবে; বেশির ভাগ গানেই একাকিত্ব, বিষাদের কথা–সুর থাকবে।
দলছুটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীকে উৎসর্গ করে সঞ্জীব অ্যালবামের ঘোষণা দিয়েছে ব্যান্ডটি। ব্যান্ডের সপ্তম অ্যালবামে ১১টি গান রয়েছে। এর মধ্যে ফেসবুকে ‘সঞ্জীব চৌধুরী’, ‘তুমি যাও’, ‘গানের শুরুটা’, ‘তুমি আছো নাকি’ ও ‘মন কারিগর’ প্রকাশ করেছে দলছুট।

দলছুটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীকে উৎসর্গ করে সঞ্জীব অ্যালবামের ঘোষণা দিয়েছে ব্যান্ডটি
ছবি: ফেসবুক থেকে
আরও পড়ুন

মার্চের শেষ ভাগে চতুর্থ অ্যালবাম ‘রিপাবলিক অব আরবোভাইরাস’–এর তৃতীয় গান ‘ইন্দ্রিয়’ প্রকাশ করেছে হার্ড রক ব্যান্ড আরবোভাইরাস। এই গান দিয়ে ভোকালিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন গিটারিস্ট ও গীতিকার মুনতাসির মামুন। ২০১১ সাল থেকে আরবোভাইরাসে রয়েছেন মামুন। এখন থেকে মামুনকে নিয়মিত শোনা যাবে, সঙ্গে ভোকালিস্ট হিসেবে শাহান কামালও থাকবেন।
ইন্দালোর ‘উত্তর খুঁজেছি দক্ষিণে’ অ্যালবামের ‘ব্যক্তিগত গোলাপ’ নিয়ে শ্রোতৃমহলে চর্চা চলছে। ১২ এপ্রিল প্রকাশিত গানটি ইউটিউবের ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায় রয়েছে; এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৩০ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে গানের ভিডিওটি।
এই ঈদে আয়না জলের গান অ্যালবাম নিয়ে এসেছে গানের দল জলের গান। গানের দলের পঞ্চম অ্যালবাম এটি। অ্যালবাম প্রথম গান ‘চাঁদমামা’ প্রকাশ্যে এসেছে। অ্যালবামে ১১টি গান থাকবে। পর্যায়ক্রমে বাকি গান প্রকাশিত হবে। অ্যালবামের বাকি ১০ গানের মধ্যে ৭টির রেকর্ডিং শেষ হয়েছে, ৫টির ভিজ্যুয়ালও করা হয়েছে। শিগগিরই দ্বিতীয় গান ‘প্রেমপত্র’ প্রকাশ করবে জলের গান। প্রতি মাসেই একটি গান প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে জলের গানের।

ইন্দালোর ‘উত্তর খুঁজেছি দক্ষিণে’ অ্যালবামের ‘ব্যক্তিগত গোলাপ’ নিয়ে শ্রোতৃমহলে চর্চা চলছে
ছবি: ফেসবুক থেকে

ডিজিটাল অ্যালবামের যুগে সিডিতে অ্যালবাম প্রকাশের চল উঠে গেছে; ডিজিটাল অ্যালবামের চল এসেছে। এসব অ্যালবাম মূলত ইউটিউব, স্পটিফাইয়ের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়। ডিজিটাল অ্যালবাম নিয়ে জলের গানের দলনেতা রাহুল আনন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকগুলো গান মিলে একটা বইয়ের মতো। আটটা, দশটা কিংবা বারোটা গান মিলে একটা বক্তব্য প্রকাশ করে। সময়ের কথা তুলে ধরা হয়। সব গান মিলে একটা অর্থ তৈরি করে। সে কারণেই অ্যালবাম করা হয়।’
এই ঈদে অ্যাশেজ ব্যান্ডের বিভ্রম অ্যালবামের তৃতীয় গান ‘পাগল’ প্রকাশ্যে এসেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গানটি প্রায় পাঁচ লাখবার দেখা হয়েছে। অ্যালবামের বাকি গান ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে।

অ্যাশেজ ব্যান্ডের সদস্যেরা
ছবি: ফেসবুক থেকে

গানে ফেরা
ক্যাসেট প্লেয়ারের রমরমা সময় পেরিয়ে সিডির যুগে থিতু হওয়ার আগেই ডিজিটাল মাধ্যমের উত্থান। ডিজিটাল মাধ্যমে কীভাবে গান প্রকাশ করা যাবে, শ্রোতারা কীভাবে শুনতে পারবেন—এসব নিয়ে ব্যান্ডগুলো যেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। ফলে শূন্য দশকের শেষ ভাগ থেকে গত দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যান্ড সংগীত অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।
এই সময়ে ব্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘হতাশা’য় ছিলেন বলে মনে করেন মাইলসের সদস্য হামিন আহমেদ। এর আগে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা একটি সিস্টেম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আগে অ্যানালগ সিস্টেমে কাজ হতো। এরপর ডিজিটাল সিস্টেম আসার পর কীভাবে গান হবে, সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলাম।’

ফলে ছয় থেকে আট বছরের মতো ব্যান্ড সংগীত অনেকটা নিশ্চল ছিল বলে জানান হামিন আহমেদ। বছর দুয়েক ধরে মৌলিক গানে ফিরতে শুরু করেছে ব্যান্ডগুলো। তাঁর ভাষ্যে, স্পটিফাই, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ব্যান্ডগুলো মৌলিক গান প্রকাশে উৎসাহ পাচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে।
অ্যানালগ যুগে অ্যালবাম প্রকাশে ব্যান্ডকে গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী থাকতে হতো, একটি অ্যালবাম রেকর্ড করা থেকে ক্যাসেট ও সিডি আকারে বিপণনে হ্যাপা ছিল।
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যান্ডের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। মাকসুদ ও ঢাকার দলনেতা মাকসুদুল হক বলছিলেন, ব্যান্ডগুলো নিজেরা গান রেকর্ড করে নিজেরাই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দিতে পারছে।
সহজেই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে মেধাস্বত্ব বাবদ অর্থও মিলছে বলে জানালেন হামিন আহমেদ।

আরও পড়ুন