সংগীতের এক জাদুকরি রাত
হঠাৎ ঝিঁঝি পোকার ডাকে নীরবতা নেমে এল আর্মি স্টেডিয়ামজুড়ে। স্টেডিয়ামের মাঠ থেকে গ্যালারি কানায় কানায় শ্রোতা–দর্শকে পূর্ণ ছিল। হালকা শীতের শহুরে হেমন্তের সন্ধ্যায় ঝিঁঝি পোকা আর ব্যাঙের ডাক নিয়ে মঞ্চে এল মেঘদল।
কোক স্টুডিও বাংলায় ‘বনবিবি’ পরিবেশন করে ব্যান্ডটি। এরপর আলোচিত গান ‘এ হাওয়া’। শ্রোতা–দর্শকের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। শ্রোতাদের মধ্যে বেশির ভাগ তরুণ মুখ, বয়স ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে।
শুক্রবার ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘কোক স্টুডিও বাংলা লাইভ’ কনসার্টে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে। বিকেল চারটায় হাতিরপুল সেশনের ‘সেই পাখিটা’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কনসার্ট শুরু হয়।
তখনো স্টেডিয়ামের বাইরে শ্রোতাদের ভিড় ছিল। সন্ধ্যা নামার আগে স্টেডিয়াম পূর্ণ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর ‘মুড়ির টিন’ গানের তালে একটা মুড়ির টিনও হাজির হয়েছিল মঞ্চে। রং–বেরঙের টিনটি খানিকটা বাজালেন এক শিল্পী। লালনের ‘সব লোকে কয়’ গানের তালে একতারা হাতে শিল্পীদের পরিবেশনা গানটিকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
‘নাসেক নাসেক’ কিংবা ‘নাহুবো’ গানের সঙ্গেও পরিবেশনা ছিল। এদিন গান শুনতে এসে দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলেন সংগীত অনুরাগীরা। শ্রোতারা কান খাড়া করে ছিলেন; গানের সঙ্গে দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে চোখও খোলা রাখতে হয়েছে।
অনেকটা মিউজিক ভিডিওর আদলে ব্যতিক্রমধর্মী এমন পরিবেশনা নিয়ে এসেছে কোক স্টুডিও বাংলা।
রাত ৮টা ১৫ মিনিটে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানটি পরিবেশন করা হয়েছে। ছিল মমতাজ বেগম, বাপ্পা মজুমদার, শায়ান চৌধুরী অর্ণব, ইসলাম উদ্দিন পালাকার, ফজলু মাঝি, অনিমেষ রায়, পান্থ কানাই, মিজান রহমান, ঋতু রাজ, সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা, নিগার সুলতানা সুমি, জালালি সেট, রিপন কুমার সরকার (বগা), সুনিধি নায়েক, সৌম্যদীপ শিকদার (মুর্শিদাবাদী), কানিজ খন্দকার, মাখন মিয়া, রুবাইয়াত রেহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস আকবর, শানিলা ইসলাম, আরমীন মুসা ও ঘাসফড়িং কয়্যার, রিয়াদ হাসান, পল্লব, মেঘদল, জহুরা বাউল, সোহানা, মুকুল মজুমদার ঈশান, প্রীতম হাসান, ইমন চৌধুরী, এরফান মৃধা শিবলু, আলেয়া বেগম, ফুয়াদ আল মুক্তাদির, হামিদা বানুসহ কোক স্টুডিও বাংলার দুই মৌসুমের শিল্পীদের পরিবেশনা।
কনসার্টটি ছিল পাঁচটি অংশে বিভক্ত, প্রতিটি অংশে কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম ও দ্বিতীয় সিজনের গানগুলো উপভোগ করেন দর্শক–শ্রোতারা। কনসার্টে পরিবেশিত গানগুলো শুধু এই কনসার্টের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এর জন্য মূল গানগুলোর কথার সঙ্গে নতুন কিছু চরণ যুক্ত করা হয়েছে। কোক স্টুডিও বাংলার সংগীত প্রযোজক শায়ান চৌধুরী অর্ণব কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোক স্টুডিও বাংলা সব সময়ই নতুন কিছু করার, বাংলা সংগীতকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে এসেছে। প্রতিটি গানে বৈচিত্র্য আছে, নতুন কিছু যোগ করার চেষ্টা হয়েছে।
কনসার্টে কোক স্টুডিও বাংলার শিল্পীদের পাশাপাশি লালন ও আর্টসেলের দুর্দান্ত পরিবেশনাও ছিল। রাত ১১টার দিকে একটি ব্যতিক্রম পরিবেশনার সাক্ষী হন শ্রোতারা। যেখানে কোনো গান নয়, শুধু সুর বেজেছে গিটারে ও ড্রামসে। সুরটি আইয়ুব বাচ্চুর সৃষ্টি করা। কোক স্টুডিও বাংলার এই আয়োজনে আইয়ুব বাচ্চুকে প্রায় ১০ মিনিটের শ্রদ্ধা জানান সংগীত পরিচালক ইমন চৌধুরী। এবির কয়েকটি কালজয়ী গান তিনি গিটারেই বাজিয়েছেন। ড্রামসে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন মিঠুন চক্র।