'দেশের এই পরিস্থিতিতে আমরা কষ্ট পাচ্ছি’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, নাট্যকারের পর এবার একাত্ম ঘোষণা করে মাঠে নামলেন দেশের সংগীতশিল্পীরা। সাবিনা ইয়াসমিন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, নাট্যকারের পর এবার একাত্ম ঘোষণা করে মাঠে নামলেন দেশের সংগীতশিল্পীরা। ‘গেট আপ, স্ট্যান্ডআপ’—স্লোগানে শনিবার ধানমন্ডি রবীন্দ্রসরবেরে একত্র হন তাঁরা। শিল্পীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতাও যোগ দেন সেখানে। একটা পর্যায়ে পুরো রবীন্দ্রসরোবর এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক উপস্থিত থাকার পর শিল্পীদের একটি দল শহীদ মিনারের দিকে মিছিল নিয়ে রওনা হয়। আরেক দল ধানমন্ডি বেঙ্গল গ্যালারির দিকে।
বেঙ্গল গ্যালারিতে বিকেল পাঁচটার দিকে প্ল্যাকার্ড হাতে শিল্পীরা দাঁড়িয়ে অবস্থান করেন। সেখানে এই আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তাঁরা।    

নীরবতা শেষে ছাত্রদের বুকে আর গুলি না চালাতে, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ করতে অনুরোধ করেন প্রশাসনকে। পাশাপাশি তাঁরা এই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে থেকে প্রতিটি হত্যার সুবিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে র‌্যাপার হান্নানের মুক্তি দাবি করে বক্তব্য দেন শিল্পীরা।  

রবীন্দ্রসরোবরে ‘গেটআপ, স্ট্যান্ডআপ’ কর্মসূচি শেষে ব্যান্ড শিল্পীদের অনেকে ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। ছবি: শফিক আল মামুন

ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক বলেন, ‘আমরা শিল্পীরা রবীন্দ্রসরোবরে একত্র হয়েছিলাম। সেখান থেকে আমরা এখানে এসেছি, আমাদের কথাগুলো পরিষ্কার করার জন্য। দেশের এই পরিস্থিতিতে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। আমরা গুলি দেখছি, হত্যা দেখছি, নিপীড়ন দেখছি। মানুষকে ধরে ধরে জেলে ভরা হচ্ছে, তা–ও দেখছি। আমরা আর এসব দেখতে চাই না। হত্যা করা হয়েছে, বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব বন্ধ করুন। ছাত্র-জনতা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি আমি।’

ব্যান্ড তারকা হামিন আহমেদ হাত জোড় করে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আন্তরিকভাবে, নৈতিকভাবে আমরা ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে আছি। আমি হাত জোড় করে অনুরোধ করছি ছাত্র-জনতার বুকে আর একটা গুলিও যেন না চলে, একটা জীবনও যেন না ঝরে। এই ধরপাকড় বন্ধ করুন। এত ছাত্র জীবন দিল, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত।’  

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে (বাঁ থেকে) হাসান, অর্ণব, মাকসুদুল হক, হামিন আহমেদ, জিয়াউর রহমান, পার্থ বড়ুয়া, টিপু, লিংকন ডি’কস্তাসহ আরও অনেকে সংহতি জানান। ছবি: শফিক আল মামুন

তিনি আরও বলেন, ‘যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের যেন এখনই ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা দেশ নিয়ে ভাবছি এখন। ছাত্রদের সংগ্রাম চলছে, তাদের বিষয়টা যেন সুষ্ঠু সমাধান হয়।’

আরেক ব্যান্ড তারকা টিপুর বক্তব্য, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই না। এই নৈরাজ্যের দেশ, এই গুলির দেশ আমরা চাই না। আমরা শান্তিময় দেশ চাই। আর কোনো রক্তপাত চাই না, মায়ের বুক খালি চাই না। যেসব ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে, তার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।’

‘এভাবে বাচ্চাকাচ্চারা মারা যাবে, মেনে নেওয়া যায় না। এটি বন্ধ হতে হবে। এর শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে হবে, বললেন সংগীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়া।
ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে তাঁদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে আরেক সংগীতশিল্পী অর্ণব বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের পাশে থাকতে চাই, তাঁদের সমর্থন করতে চাই। ছাত্রদের দাবিগুলো যেন তাঁরা পেতে পারেন, তা আমরা চাই। এর জন্য আমাদের শিল্পীদের যা কিছু করার দরকার, আমরা করব।’
গ্রেপ্তার র‌্যাপার হান্নানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে এই সংগীতশিল্পী আরও বলেন, ‘আমরা শিল্পী, আমাদের কাজ গান করা, ছবি আঁকা। সেটি দিয়েই আমরা প্রতিবাদ করতে পারি, সেটিই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু সেটি যদি আমরা না করতে পারি বা আটকে দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে। হান্নানের মুক্তির দাবি করছি আমরা।’

ব্যান্ড শিল্পী হাসান আক্ষেপ করে বলেন, ‘শিল্পীরা গান গেয়ে, ছবি এঁকে প্রতিবাদ করতে পারে, এর বেশি তো কিছু করার নেই। সেই বিষয়টি আমলে নিয়ে শিল্পীকে অপরাধী বানানো হচ্ছে, শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনা আগে কখনোই শুনিনি আমরা। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

আরও পড়ুন

এ ছাড়া এদিন আরও বক্তব্য দেন ব্যান্ডতারকা লিংকন। আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ারফেজের ভোকাল পলাশ, শিরোনামহীনের ইশতিয়াকসহ আরও অনেকে।