শেষ জন্মদিনে সাক্ষাৎকারে ‘মাইলস’ নিয়ে যা বলেছিলেন শাফিন
মাত্র ৬৩ বছর বয়সে চলে গেলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এই সংগীতশিল্পী জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘মাইলস’–এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ছিলেন। প্রায় শুরু থেকে এ ব্যান্ডের সঙ্গে ছিলেন তিনি। ২০১০ সালের শুরুর দিকেও একবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শাফিন। যদিও কয়েক মাস পর আবার দলে ফেরেন। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরেও তিনি আরও একবার ব্যান্ডটি ছাড়ার কয়েক মাস পর দ্বন্দ্ব ভুলে আবার ব্যান্ডে ফিরেছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি ভিডিও বার্তায় শাফিন আহমেদ জানান, তিনি মাইলস থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। শুধু তা–ই নয়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যান্ডের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবিও করেন তিনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘মাইলস’সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন শাফিন আহমেদ। আজ সেই সাক্ষাৎকারটি আবার প্রকাশ করা হলো।
প্রথম আলো :
জন্মদিনে আপনার পরিকল্পনা কী?
এবারের জন্মদিনটা আলাদা। বইটা আজ প্রকাশিত হবে। প্রতিবছরই জন্মদিন নিয়ে আলাদা পরিকল্পনার সুযোগ হয়, তবে এবার সেই সময় ও সুযোগ পাচ্ছি না। বইটা নিয়েই ব্যস্ত আছি। বুধবার দুপুরে বইমেলায় ‘ছাপাখানার ভূত’-এর স্টলে যাব; বইটা সেখানে পাওয়া যাবে। বিকেলের দিকে বনানীর একটি ক্যাফেতে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হবে। বইটা নিয়ে আলোচনা হবে, সঙ্গে গানও করব। এরপর কী হবে, সেটা নিয়ে এখনো পরিকল্পনা করিনি।
প্রথম আলো :
বইয়ের নাম কেন ‘পথিকার’ রেখেছেন?
‘পথিকার’ শব্দের অর্থ জীবনযাত্রা। যাঁরা বইটা পড়বেন, তাঁরা এই শব্দটা অন্যভাবে খুঁজে পাবেন। আমার জীবনের সঙ্গে এই নামের সম্পৃক্ততা রয়েছে—সেটা বইয়ের কোনো একটা অধ্যায়ে পাওয়া যাবে। তিন বছর আগে বইটার কথা ভেবেছিলাম। তখন মনে হয়েছিল, এবার হয়তো আমার আত্মজীবনী প্রকাশের সময় এসেছে। এরই মধ্যে সাজ্জাদ হুসাইনের সঙ্গে কথা হয়েছে; বইটা করতে রাজি হই। আমরা কয়েক দফায় বসি; আমার জীবনের গল্প শুনে শুনে সাজ্জাদ লিখেছে।
প্রথম আলো :
এই বইয়ে আপনার জীবনের ভালো-মন্দ সব দিকই থাকছে?
প্রত্যেক মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, ইতিবাচক-নেচিবাচক দিক থাকে—এসব নিয়েই আমাদের জীবন। এই বইয়ে মানুষ অনেক কিছু খুঁজে পাবে। এই গল্পটা বলব, এটা বলব না—ওই ধরনের বাছবিচার করিনি। সেভাবে লিখলে আত্মজীবনী পাঠকদের কাছে খুব একটা উপভোগ্যও হয় না। সেভাবে বই করার চেয়ে না করাই ভালো। কারণ, ইন্টারনেটে আমাদের নিয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যায়, সেসব তথ্য চাইলেই মানুষ পড়ে নিতে পারে। বইয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু দেওয়া উচিত। তা না হলে মানুষ বই কিনে পড়বে কেন? আমি আত্মজীবনী লেখার ব্যাপারে যথেষ্ট সৎ থেকেছি। এই বইয়ে মানুষ আমাকে নতুন করে চিনবে, জানবে।
প্রথম আলো :
‘ভয়েস অব মাইলস’ ব্যান্ড নিয়ে আপনি নিয়মিত কনসার্ট করছেন। এই ব্যান্ডের প্রেক্ষাপট কী?
৪০ বছর ধরে ‘মাইলস’ ব্যান্ডের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তিন বছর আগে আমাকে ‘মাইলস’ থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সেটার সঠিক সমাধান আমি এখনো খুঁজে পাইনি। পরে আমি শাফিন আহমেদ নামেই যাত্রা করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, ‘মাইলস’ নামটা যেন আর ব্যবহৃত না হয়। একটি ব্যান্ড সম্মানিত জায়গায় পৌঁছার পর সেটি আর সমালোচনার মুখে না পড়ুক। সেই জায়গা থেকেই আমার চাওয়া ছিল, আমরা যেন কেউই ‘মাইলস’ নামটা ব্যবহার না করি।
প্রথম আলো :
এতে শ্রোতারাও বিভ্রান্ত হতে পারেন...
এটা বাজে ব্যাপার। আমি ওই দিকে যেতেই চাইনি। যেভাবে চার দশক ধরে মানুষ মাইলসকে চিনে এসেছে, যেভাবে মানুষ আমাকে দেখেছে। অনেকে বলেছে, ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতে শাফিন আহমেদকে চিনি। শাফিন আহমেদ ও মাইলস সমার্থক হয়েছে।’ এই নামের পেছনে আমার পরিশ্রম, সাধনা রয়েছে; সেটা যদি কেউ ব্যবহারের যোগ্যতা রাখে, সেটা হওয়া উচিত আমার। আমি বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বলছি না; আমি বলছি, নামটার পেছনে আমারও অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারের জায়গা থেকে আমি এটাকে পুরোপুরি ‘মাইলস’ বললাম না। আমি চাচ্ছি না, নিজেকে ‘মাইলস’ বলে সংশয় তৈরি করতে চাইছি না। কিন্তু ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতেই পারি; এইটুকু অধিকার আমার রয়েছে। ওই জায়গা থেকেই ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামটা এসেছে।