ছেলে-বুড়ো সবাই কেন রাহাত ফতেহ আলীর গান পছন্দ করেন

রাহাত ফতেহ আলী খানশিল্পীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘কয়েকটা পরিবার মিলে এক বাড়িতে থাকতাম। আমাদের খেলা বলতে ছিল অন্ত্যাক্ষরী আর বলিউডি গানের তালে নাচ। আমার বাবা ফররুখ ফতেহ আলী খান, দাদা ফতেহ আলী খান, চাচা নুসরাত ফতেহ আলী খান। আমাদের পরিবার ৫০০ বছরের কাওয়ালি ঐতিহ্য ধারণ করছে। বুঝতেই পারছেন, শিল্পী হওয়াটা আমার অবধারিত ছিল।’ ২০১২ সালে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই বলেছিলেন রাহাত ফতেহ আলী খান। পরিবারের ঐতিহ্য মেনে তিনিও শিল্পী হয়েছেন, চাচা নুসরাত ফতেহ আলী খানের ছায়া থেকে বেরিয়ে তৈরি করেছেন নিজের আলাদা পরিচয়।

আমার বয়স যখন সাত, তখন কাওয়ালি শুনে অঝোরে কেঁদেছিলাম। সবাই বলেছিল, আমি কী বুঝেছি যে কাঁদছি? বলেছিলাম, কিছুই বুঝিনি কিন্তু কেন কাঁদছি, সেটাও জানি না। আসলে কাওয়ালি আপনাকে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। সেই অনুভূতিই গান হয়ে প্রকাশ পায়।
রাহাত ফতেহ আলী খান

কাওয়ালি এই উপমহাদেশের সংগীতের একটি ধারা। কাওয়ালিসংগীতে মূলত স্রষ্টার পাশাপাশি সুফি তরিকার সাধকদের গুণগান করা হয়। রাহাত ফতেহ আলী খান কাওয়ালিশিল্পী হলেও বিশেষ কারণে তিনি অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁর কাওয়ালিতে যেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছেন শ্রোতারা, তেমনি হিন্দি সিনেমার মেলোডি-নির্ভর গানেও তাঁকে পাওয়া গেছে সমানভাবে। রাহাত ফতেহ আলী খান সেই বিরল শিল্পীদের একজন, যিনি কাওয়ালিশিল্পী হয়েও সাধারণ শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বয়োজ্যেষ্ঠরা যেমন তাঁর কাওয়ালিতে বুঁদ থাকেন, তেমনি তরুণেরাও তাঁর গাওয়া সিনেমার রোমান্টিক গানে আনমনা হয়ে যান। কিন্তু ফয়সালাবাদের এই শিল্পীর বলিউড-যোগ কীভাবে হলো? সেটা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে আরও ২৬ বছর।

১৯৯৭ সালে নুসরাত ফতেহ আলী খানের মৃত্যু হয়। পরিবারের সংগীত–ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুভার এসে পড়ে রাহাতের কাঁধে। এর মধ্যে নতুন বিপদ, তিনি যে রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতেন, সেটা দেউলিয়া হয়ে যায়। এটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। এর কিছুদিন পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন নির্মাতা পূজা ভাট। জানান, তাঁর পরের সিনেমায় রাহাতের একটি গান ব্যবহার করতে চান। এভাবেই ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া পূজার সিনেমা ‘পাপ’-এ জায়গা পায় রাহাতের ‘মান কি লাগন’ গানটি।

রাহাত ফতেহ আলী খান
ফেসবুক থেকে

এ সিনেমায় ‘লাল’ নামে আরও একটি গান ছিল তাঁর। তুমুল জনপ্রিয় হয় ‘মান কি লাগন’। বাকি গল্প তো সবারই জানা। পরের দেড় দশকে তাঁর কণ্ঠে পাওয়া গেছে ‘জিয়া ধাড়াক ধাড়াক’, ‘ন্যায়না’, ‘বোল না হালকে হালকে’, ‘জাগ সুনা সুনা’, ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি’, ‘তেরি মাস্ত মাস্ত দো ন্যায়’, ‘তেরি মেরি’র মতো জনপ্রিয় সব গান।

কাওয়ালি নিয়ে সাধারণ শ্রোতাদের কৌতূহল আছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে কীভাবে পরিবেশন করেন শিল্পীরা। দাদা ফতেহ আলী খান একবার ১৬ ঘণ্টা গেয়েছিলেন, রাহাত নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এর রহস্য কী? তাঁরা কি পরিবেশনার বিস্তারিত লিখে রাখেন? ‘আবেগ কি লিখে রাখা যায়?’ বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হলে এভাবেই উত্তর দিয়েছিলেন শিল্পী। পরে তিনি যোগ করেন, ‘আমার বয়স যখন সাত, তখন কাওয়ালি শুনে অঝোরে কেঁদেছিলাম। সবাই বলেছিল, আমি কী বুঝেছি যে কাঁদছি? বলেছিলাম, কিছুই বুঝিনি কিন্তু কেন কাঁদছি, সেটাও জানি না। আসলে কাওয়ালি আপনাকে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। সেই অনুভূতিই গান হয়ে প্রকাশ পায়।’

৯ ডিসেম্বর ৫০ পূর্ণ করেছেন রাহাত। এখনো দিনের বড় অংশ নিজেকে সংগীতচর্চায়, অনুশীলনে ব্যস্ত রাখেন। কোনো দিন পাঁচ ঘণ্টা, কোনো দিন আরও বেশি সময়। তবে কতক্ষণ ধরে অনুশীলন করেন, এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। ‘মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, তিনি পাঞ্চের হিসাব রাখেন না। আমিও কতক্ষণ অনুশীলন করি, মাথায় থাকে না,’ বলেন রাহাত। জানান, দর্শক-শ্রোতাদের সামনে থাকলে ক্লান্তি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। নিশ্চিতভাবেই রাহাত ফতেহ আলীর ক্লান্তি ভোলাতে আজ ভিড় করবেন দর্শকেরা।

‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্ট
আজ রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টে গাইবেন রাহাত ফতেহ আলী খান। রাহাত ফতেহ আলী খানের দলসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে আয়োজনে সহযোগিতা করছে।

রাহাত ফতেহ আলী খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কনসার্টে অংশ নিতে এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন এই পাকিস্তানি শিল্পী। আয়োজন করছে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম। ইতিমধ্যে কনসার্টের টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন আয়োজকেরা। এ কনসার্ট থেকে আয় হওয়া সব অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

এরই মধ্যে কনসার্টের টিকিটে শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন আয়োজকেরা। এ ছাড়া এ কনসার্টের টিকিট ও ভেন্যুর ওপর সব ধরনের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কনসার্টে রাহাত ছাড়াও দেশি ব্যান্ড আর্টসেল, চিরকুট, আফটারম্যাথ ও সিলসিলার শিল্পীরা পারফর্ম করবেন। এর বাইরে র‍্যাপ সংগীতশিল্পী সেজান ও হান্নানের পরিবেশনার কথা রয়েছে। সংগীত ছাড়াও কনসার্ট ইভেন্টে জুলাই বিপ্লব-সংক্রান্ত গ্রাফিতি প্রদর্শনী, মঞ্চনাটক, মুগ্ধ ওয়াটার জোনসহ বিভিন্ন কর্নার থাকবে।