কফিনে মোড়া শাফিনের মরদেহ গ্রহণ করেছেন বড় ভাই হামিন, কাল দাফন

শাফিন আহমেদ
ফেসবুক থেকে

দুই সপ্তাহ আগে শাফিন আহমেদ যখন ঢাকা ছাড়েন, বেশ হাসিখুশিই ছিলেন। কত–কী পরিকল্পনা! গানে গানে যুক্তরাষ্ট্র মাতিয়ে দেশে ফিরবেন। কিন্তু তা আর হলো কই। সংগীতভ্রমণ শেষ না করেই ফিরতে হলো তাঁকে। মৃত্যুই তাঁর পরিকল্পনা চিরতরে থামিয়ে দিয়েছে। আজ সোমবার কফিনে মোড়া শাফিনের মরদেহ ঢাকায় গ্রহণ করেছেন তাঁরই বড় ভাই ও মাইলস ব্যান্ডের সদস্য হামিন আহমেদ।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর স্ত্রী রুমানা দৌলা। বাংলাদেশ সময় গতকাল রোববার রওনা করে শাফিনকে বহনকারী উড়োজাহাজ। দুবাই হয়ে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যখন শাফিনের মরদেহ পৌঁছায়, তখন ঘড়ির কাঁটায় সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে হামিন আহমেদসহ পরিবারের সদস্যরা মরদেহ গ্রহণ করেন।

শাফিন আহমেদ ও হামিন আহমেদ

হামিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, শাফিনের মরদেহ রাতে গুলশানে থাকবে। এরপর কাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গুলশান আজাদ মসজিদে। বাদ জোহর জানাজা শেষে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছু সময় রাখা হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে বাবা কমল দাশগুপ্তর কবরে সমাহিত করা হবে শাফিনকে। পাশে তাঁর মা সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের কবর রয়েছে। ১৯৭৪ সালে মারা গেছেন শাফিনের বাবা কমল দাশগুপ্ত।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় ২৫ জুলাই সকালে মারা যান ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। এর পর থেকে শাফিনের মরদেহ দেশে আনার প্রস্তুতি শুরু হয়। মরদেহ দেশে আনতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথাও ছিল বড় ভাই হামিন আহমেদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি।

দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেন ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। দেশটির একটি অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে গানে গানে শ্রোতা মাতাবেন, তেমনটাই পরিকল্পনা ছিল। শুরুটা ঠিকঠাক হয়েছিল।

দ্বিতীয় কনসার্ট ছিল ২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায়। কনসার্টের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর আয়োজকদের উদ্যোগে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ভর্তির দিনই তাঁর গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত।
শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা জ্বালা...এ অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি।

আরও পড়ুন

শাফিন আহমেদ তাঁর বাবা কমল দাশগুপ্তর কিছু গান নিয়েও একক অ্যালবাম করেছিলেন। মাঝখানে কিছুদিন রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েও আলোচনা সৃষ্টি করেছেন। শাফিন আহমেদ স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

মাঝে মাঝে মাথায় ব্যান্ডানা পরতেন শাফিন আহমেদ। তাঁর মঞ্চ উপস্থিতি ছিল অনবদ্য

আশির দশকে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের। প্রথম দিকে ব্যান্ডটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জনপ্রিয় শিল্পীদের গান করেছে। এ ধারা চলতে থাকে প্রায় ১১ বছর। ইংরেজি গানের চর্চার এক পর্যায়ে ১৯৯০ সালে মাইলস বাংলা গান করার সিদ্ধান্ত নেয়।

দীর্ঘ পথচলায় মাইলস দেশে ও দেশের বাইরে দেড় হাজারের বেশি কনসার্টে গান করেছে। দেশের বাইরে প্রথম গান করেছে ভারতের বেঙ্গালুরুতে (১৯৯৪)। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টানা তিন মাসের সফরে ১০টি কনসার্টে গান করে মাইলস। ওই সময় মাইলসের কনসার্ট যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালিদের মধ্যে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন শাফিন। তারপর নানা প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কনসার্ট করতে যায়নি মাইলস। ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে আবার ১০টি মেগা কনসার্ট দিয়ে ইউএসএ ট্যুর করে মাইলস। ২০১৭ ও ২০১৯ সালেও মাইলস দুটি বড় কনসার্টে গান পরিবেশন করে।

আরও পড়ুন
হামিন আহমেদ, ফিরোজা বেগম ও শাফিন আহমেদ। ছবি: হামিন আহমেদের সৌজন্যে

মাইলস ব্যান্ডের তুমুল শ্রোতৃপ্রিয় গানের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘আর কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘পলাশীর প্রান্তর’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘প্রথম কবিতা এসে’, ‘ভুলব না তোমাকে’, ‘অনাবিল বিশ্বাসে’, ‘ভালোবেসো না’, ‘নীরবে কিছুক্ষণ’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘তুমি নাই’, ‘প্রতীক্ষা’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘চাই না’, ‘প্রিয়তমা মেঘ’ ও ‘নীলা’।
মাইলসের প্রথম অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ (১৯৯১)। এরপর বেরিয়েছে ‘প্রত্যাশা’ (১৯৯৩), ‘প্রত্যয়’ (১৯৯৬), ‘প্রয়াস’ (১৯৯৭), ‘প্রবাহ’ (২০০০), ‘প্রতিধ্বনি’ (২০০৬) ও ‘প্রতিচ্ছবি’ (২০১৫)। এ ছাড়া ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘বেস্ট অব মাইলস’ নামে বেরিয়েছে ডাবল সিডির দুটি অ্যালবাম।