সানি শিল্পেও আছেন, আন্দোলনেও আছেন
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব চলচ্চিত্র ‘ফরগেট মি নট’–এ ‘কেমনে কী’ গেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। মাঝে একটি নাটকে অভিনয়ও করেছেন ‘শহরের দুইটা গান’, ‘মানুষ কেন এ রকম’–এর মতো আলোচিত গানের এই শিল্পী।
কুশল বিনিময়ের সময় অনেকে বলেন, ‘কী অবস্থা?’ তবে লেখক ও শিল্পী রিঙ্কন শিকদার বলতেন, ‘কেমনে কী?’ প্রায় ১১ বছর আগে তিনি মারা গেছেন; তবে ‘কেমনে কী’ শব্দটা এখনো বন্ধুদের কানে বাজে।
মৃত্যুর কয়েক মাস পর প্রয়াত বন্ধু রিঙ্কনকে উৎসর্গ করে রবিউল আলম রবি লিখেছিলেন ‘কেমনে কী’। ১১ বছরের পুরোনো সেই গান সিনেমায় সুর পেয়েছে।
‘ফরগেট মি নট’ সিনেমায় সুরারোপ করে গেয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন রবিউল আলম রবি।
তখন শাহবাগ, কলাবাগান, গ্রিন রোডে জমিয়ে আড্ডা মারতেন রিঙ্কন, রবিরা। আড্ডায় সানিসহ আরও অনেক ‘ছোট ভাই’ও থাকতেন। কেউ লিখতেন, কেউ গাইতেন। গানে সুর দিতে গিয়ে সেই সময়ে ফিরে ফিরে যাচ্ছিলেন সানি। স্মৃতিতে ভাসছিল রিঙ্কনদের সঙ্গে সেই সব আড্ডা।
গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সানি বলেন, ‘রিঙ্কন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলেই বলতেন, “কেমনে কী।” একধরনের এলিজির মতো করে গানটা লেখেন রবি ভাই। গানটা আমাদের কাছে বিশেষ।’
‘কেমন কী’র সংগীত পরিচালনা করেছেন রাশিদ শরীফ শোয়েব।
তলপাথরের চিৎকার
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ‘তলপাথরের চিৎকার’ শীর্ষক কনসার্টে গাইবেন সানি। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও বন্যার্তদের সাহায্যার্থে তহবিল সংগ্রহে এই কনসার্টের আয়োজন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির নারী শিক্ষার্থীরা।
এতে দেশের এই সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড ও সংগীতশিল্পীরা অংশ নেবেন।
এই কনসার্ট নিয়ে সানি বলেন, ‘স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বরাবরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সোচ্চার ছিল। এই কনসার্টের স্পিরিটটা দারুণ।’
এর আগে বন্যাদুর্গতদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা পরিবারের আয়োজনে ‘বানভাসিদের পাশে, বটতলার গান ১’ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’–এ গেয়েছেন তিনি।
স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বরাবরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সোচ্চার ছিল। এই কনসার্টের স্পিরিটটা দারুণ।আহমেদ হাসান সানি, সংগীতশিল্পী
আন্দোলনের গান
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে কিংবা বন্যাদুর্গতের জন্য তহবিল সংগ্রহে সংগীতশিল্পীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সংগীতের সঙ্গে জনগণের সংযোগ নিয়ে ঘুরেফিরে আলোচনা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সানি বলছেন, ‘আরেকবার বোঝা গেছে, যে সংগীতের সঙ্গে জনগণের সংযোগ নেই, সেই সংগীত আসলে বেশি দিন থাকবে না। সংগীতের সঙ্গে জনগণের সংযোগ থাকতে হবে। আর্ট হচ্ছে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের একটি প্রক্রিয়া। যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে কাছের মাধ্যম সংগীত।’
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গান করে আসা সানির ভাষ্য, ‘আমরা দেখেছি, সেজান, হান্নানের গান কীভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। ওগুলো আমাদের নাড়া দিয়েছে। আমরা তো একটা প্রতিরোধের অংশ। সংগীতের সঙ্গে জণগণের যোগসূত্র থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
যে সংগীতের সঙ্গে জনগণের সংযোগ নেই, সেই সংগীত আসলে বেশি দিন থাকবে না। সংগীতের সঙ্গে জনগণের সংযোগ থাকতে হবে।আহমেদ হাসান সানি, সংগীতশিল্পী
আন্দোলনের মধ্যে ‘গণদাবি’ শিরোনামে একটি গান গেয়েছেন সানি। সাঈদ জুবেরীর লেখা গানে সুরারোপও করেছেন সানি। তিনি বলেন, ‘উত্তাল ছাত্র–জনতার সামনে দাঁড়িয়ে সমস্ত ভয় সাহসে রূপান্তরিত হয়। সেটাই তো আমরা দেখলাম। ছোট ছোট সাহসের কাঠি দিয়েই এত বড় অভ্যুত্থান ঘটেছে।’
তানিম নূর পরিচালিক ‘কাইজার’ সিরিজে অভিনয় করেছেন। মাস দুয়েক আগে আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ নাটকে অভিনয় করেছেন।
আছেন অভিনয়েও
সংগীতশিল্পী সানি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও সুরকার হিসেবেও পরিচিত। পাশাপাশি অভিনয়েও দেখা গেছে। তানিম নূর পরিচালিক ‘কাইজার’ সিরিজে অভিনয় করেছেন। মাস দুয়েক আগে আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’ নাটকে অভিনয় করেছেন।
অভিনয়ে নিয়মিত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অভিনয়ের প্রতি আমার মনোযোগ কিংবা ইচ্ছা আছে, তা নয়। সামনে কোনো প্রস্তাব পেলে যদি মনে হয় এখানে আমার করার কিছু আছে, তাহলে হয়তো করতে পারি। আলাদাভাবে ওই রকম কোনো পরিকল্পনা নেই।’
ভবিষ্যতের সংগীত ও সংস্কৃতি অঙ্গনকে কেমন দেখতে চান? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংগীত ও সংস্কৃতি অঙ্গনকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। এটার উল্টাও দেখছি, কে কার সঙ্গে ছিল কিংবা ছিল না। একই মুদ্রার এপিঠ–ওপিঠ। আমরা শিল্পীরা মুদ্রার পার্ট না।’
‘ক্ষমতার কাছে গদগদ হয়ে থাকব বা যে ক্ষমতায় থাকবে না তাকেই শুধু বাজে কথা বলব, বিষয়টা আসলে এ রকম নয়। সত্যের সঙ্গে থাকতে হবে। সেটা দলাদলি, রাজনীতিতে যেন আটকে না থাকে। এটা যেন আরও বৃহৎ হয়। এটা তো আসলে মনন তৈরি করার জিনিস। আমার মনে হয়, রাজনীতিকরণের ঊর্ধ্বে থাকাই ভালো’, যোগ করেন এই সংগীতশিল্পী।