আগামীকাল থেকে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন
রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল ৮ মার্চ শুক্রবার। এবার উদ্বোধনী অধিবেশনে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে মনুষ্যত্বের জয়গান করা হবে। থাকবে আরও বৈচিত্র্যময় সব আয়োজন।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় তিন দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এবার শিল্পগুরু মুস্তাফা মনোয়াকে ‘রবীন্দ্র পদক’ প্রদান করে সম্মাননা জানান হবে। ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে’—বোধন সংগীত হিসেবে কবিগুরুর এই গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে।
গতকাল বুধবার ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে সম্মিলন পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ৪২তম অধিবেশনে ঢাকাসহ সারা দেশের সম্মিলন পরিষদের ৮২টি শাখার ৭ শতাধিক শিল্পী, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মী অংশ নেবেন। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, সম্মিলন পরিষদের এই রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে সম্মেলন দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজনে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের এই উদ্যোগ কেবল সংগীত, আবৃত্তি বা নৃত্যচর্চার ভেতরই সীমিত থাকে না। সমাজের নানা রকম অসংগতি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল বাংলার কবি নন, তিনি ছিলেন বিশ্বকবি।
বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও সংকট নিয়ে তিনি ভেবেছেন। সে কারণে এবার ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদ করা হবে। এটা এবারের সম্মেলনের বড় সংযোজন।
সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজনের সাংগঠনিক বিষয়, প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠানের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন পরিষদের তিন সহসভাপতি। তাঁদের মধ্যে শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা বলেন, কোভিডের পর এবার সম্মেলন উপলক্ষে সারা দেশে প্রতিযোগীদের নিয়ে বছরভর ব্যাপক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকেরা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সংগীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শিল্পী বুলবুল ইসলাম বলেন, এবারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সারা দেশ ঘুরে প্রশিক্ষণ পর্ব দেখে মনে হয়েছে যে অনেক প্রতিভাবান নবীন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এবারের প্রতিযোগিতা পর্ব থেকে অনেক প্রতিভাবান নতুন শিল্পী বেরিয়ে আসবেন।
লিলি ইসলাম বলেন, এই আয়োজন সারা দেশের শিল্পী, সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এবার অনুষ্ঠানের গান, গীতি ও নৃত্যালেখ্য পরিকল্পনা করা হয়েছে বিভিন্ন সমকালীন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে। গানে থাকবে প্রেম ও বসন্ত, নারী দিবসে গীতি-আলেখ্য করা হয়েছে কবিগুরুর নারীদের নিয়ে লেখা গান নিয়ে। একইভাবে আবৃত্তির একটি বিশেষ পরিবেশনা থাকবে গাজায় ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদ করে। সব মিলিয়ে এবারের প্রতিটি পরিবেশনা বৈচিত্র্যময় ও উপভোগ্য হতে যাচ্ছে।
দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব
শুক্রবার থেকে ঢাকার গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে দুই দিনব্যাপী তৃতীয় নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা, গুলশান সোসাইটি ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার এই উৎসবের উদ্যোক্তা। উৎসবের উদ্বোধন করবেন সমাজ কল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে থাকবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, কবিতার আবৃত্তি ও রচনার ভিত্তিতে নৃত্য। খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াসমিন মুশতারী, নাশিদ কামাল, ফেরদৌস আরাসহ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নজরুলসংগীতের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। ভারত থেকে আসবেন মনোময় ভট্টাচার্য, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত তুষার দত্ত, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, পায়েল কর, দেবারতি চক্রবর্তী। এ ছাড়া সারা বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পীরাও সংগীত পরিবেশন করবেন। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সব সৃষ্টিকর্ম সাধারণ মানুষের কাছে শুদ্ধভাবে পৌঁছে দেওয়া সময়ের জরুরি দাবি জানিয়ে উৎসবের আহ্বায়ক খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘শুদ্ধ সুর ও বাণীতে নজরুলসংগীত প্রচারের জন্য সাংবাৎসরিক ও চলমান যে বিশাল কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি, তার সঙ্গে বৃহত্তর জনসমাজের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিবছর নজরুল উৎসবের আয়োজন করি। আমাদের উদ্দেশ্য, এই উৎসবের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় কবির আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রসারিত ও বিকশিত করা।’
প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবে শুদ্ধ সুর ও বাণীতে গীত ১২৫টি নজরুলের গান আনুষ্ঠানিকভাবে ইউটিউবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে