আনন্দ আয়োজনে ঋষিজ সম্মাননা পেলেন তিন গুণী

এ বছর প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পূর্ণ করেছে ঋষিজসংগৃহীত

‘ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে’—চারণকবি মুকুন্দ দাসের অভয়বাণীকে কণ্ঠে ধারণ করে ১৯৭৬ সালের ২২ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ। এ সংগঠনের দলীয় সংগীতের শেষ চারটি চরণ এমন—‘তমসার ক্ষণে নেব ঋষিজের নাম/ উৎসব দিনে নেব ঋষিজের নাম/ উজ্জ্বল সূর্যের আলোকিত বন্যায়/ মুক্তির সুরে ঋষিজের গান।’ ঋষিজের এই গানের মতো তাদের পথচলা। দেশজ সংস্কৃতির লালন ও বিকাশের প্রত্যয়ে গড়ে ওঠে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। জন্মলগ্ন থেকে বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতি ধারণ করে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে সংগঠনটি। আবহমান বাংলার সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ার লক্ষ্যে গেয়ে যাচ্ছে গণমানুষের গান। সংস্কৃতির শক্তি হাতিয়ার করে অবস্থান নিয়েছে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। এ বছর প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পূর্ণ করেছে ঋষিজ। সাফল্যের স্মারক হিসেবে তিন গুণীকে সম্মান জানিয়ে, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে গতকাল শুক্রবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করল সংগঠনটি।

শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী এবং স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক কণ্ঠশিল্পী বুলবুল মহলানবীশকে। জাতীয় সংগীতের সুরের আশ্রয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

ডলি জহুরকে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয়
সংগৃহীত

অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক স্বরে। সবাই মিলে গেয়ে শোনায় ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...।’ গাওয়া হয় সংগঠনের সংগীত ‘আমরা ঋষিজ করি/ আমরা তো যাত্রিক ঋষিজের সন্তান...।’ এরপর মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার অহংবোধে ঋষিজের শিল্পীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়—ভয় নাই কোনো ভয়/ জয় বাংলার জয়...। গানের সুরটি থামতেই গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতায় নিহত ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা।

অনুষ্ঠানে তিন বিশিষ্টজনকে ঋষিজ পদক প্রদান করা হয়। অভিনয়ে ডলি জহুর, শিক্ষা ও সাহিত্য শাখায় অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর এবং মুক্তিযুদ্ধ ও সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিমির নন্দীকে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিমির নন্দীকে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয়
সংগৃহীত

আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি ফকির সিরাজ। সভাপতিত্ব করেন ঋষিজের সভাপতি সুরাইয়া আলমগীর। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।