প্রশ্ন :
নাগাল্যান্ডের প্রতি কেন আগ্রহী হলেন?
এ আর রাহমান: সব সময়ই দেশের (ভারতের) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতি আমার দুর্বলতা ছিল।
প্রশ্ন :
কেন?
এ আর রাহমান: ভারতে বৈচিত্র্যে ভরা। কেরালা বেশ অন্য রকম। অন্ধ্র, পাঞ্জাব, বাংলা প্রতিটি রাজ্যেই ভিন্নতা রয়েছে। আপনি নাগাল্যান্ড গিয়ে দেখেন, ওহ আল্লাহ, এটাও ভারতের অংশ! দেখে বাইরের কোনো দেশ মনে হবে। আমি নাগাল্যান্ড সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি। আমার বন্ধুরাও বলেছে, রাজ্যটি অনেক সুন্দর। আপনি নিজেও গিয়ে যাচাই করে দেখতে পারেন। আমি সেখান থেকে হর্নবিল ফেস্টিভ্যালের আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। দেখলাম, জায়গাটি সত্যি সুন্দর। মনে হলো, আমি ভবিষ্যতে এখানে থেকেও যেতে পারি।
প্রশ্ন :
কোনো চলচ্চিত্র করার আগে কি আপনি সেই জায়গা ঘুরে দেখেন? যেমন ‘রোজা’ চলচ্চিত্রটি করার আগে কি আপনি কাশ্মীর গিয়েছিলেন?
এ আর রাহমান: না, আমাদের বলা হয়েছিল জায়গাটি নিরাপদ নয়। কিন্তু গানটি (‘রোজা’ ১৯৯৩) ভারতের চলচ্চিত্রে গানের দৃশ্যায়নে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
প্রশ্ন :
কেন?
এ আর রাহমান: এটি আমি আগেও অনেকবার বলেছি, ওই সময় চলচ্চিত্রশিল্প ছিল ভিন্ন। এটি পুরোনো স্কুল। বিজ্ঞাপনশিল্প নতুন। তাই আমার বিষয়টি ছিল, আমি এই একটি চলচ্চিত্রই বানাব। কারণ আপনি জানেন, আমি ১৯৮২ সাল থেকে বিজ্ঞাপনজগতে কাজ করছিলাম। এরপর এসব জিনিস পরিবর্তন এল। আমি জানতাম না যেভাবে গান করা হয়েছে, রেকর্ডিং করা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে আমিও এই পরিবর্তনের অংশ হব। কখনো কখনো তারা বলত, তারা রুমে (গানের জগতে) একটা পরিবর্তন দেখতে চায়। আপনি জানেন না, সেই পরিবর্তন আপনি (হাসতে থাকেন)। মানুষ যখন ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে এটি বলতে থাকে, তখন আপনি নিজেই এটি উপলব্ধি করবেন।
প্রশ্ন :
আমার মনে আছে ‘ছোটি সে আশা’ কীভাবে ‘বাড়ে সি আশা’ হয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্রে যে ধরনের গান শুনে আসছিলাম, সেখান থেকে একটা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি ছিল এটি।
এ আর রাহমান: হ্যাঁ, আমরা (মণি রত্নম ‘রোজা’র পরিচালক ও এ আর রাহমান) সবকিছু পরিবর্তন করে দিয়েছি। পশ্চিমা ধাঁচের গান থেকে ধারণা নিয়ে তা কম্পোজিশনের ব্যবহার করা হয়েছে, এভাবেই আমরা গানগুলো তৈরি করেছি। এর ফলাফল ছিল ব্যাপক, বলিউডের অনেক কিছুই এটা বদলে দিয়েছে। এটি বড় সাফল্য ছিল। এটি আমাকে পাল্টে দিয়েছে। অবাক করার বিষয় হলো, ওই সময় হিন্দুস্তানি সংগীতের প্রতি আমার ঝোঁক কর্ণাটকের সংগীতের চেয়ে বেশি ছিল। আমি উত্তর ভারতীয় রাগগুলোর সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছি। আপনি জেনে থাকবেন, আমি দেশ, পিলু (রাগ) ব্যবহার করেছি।
প্রশ্ন :
এরপর এল ‘রোজা’, ‘বোম্বে’ ও ‘দিল সে’
এ আর রাহমান: হ্যাঁ, তিনটি আলাদা হলেও এগুলোর মধ্যে যোগসূত্র ছিল। আপনি যদি আমার ওই সময়কার সাক্ষাৎকারগুলো খেয়াল করেন, দেখবেন আমি বারবার বলে গেছি, আমি দক্ষিণ থেকে তালিম কম্পোজার হিসেবে পরিচিত হতে চাইনি। আমার মনে হয়েছে আমরা আমাদের সংগীতকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছি না। চেয়েছি আমাদের সংগীত পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। আমরা যেন আমাদের সংগীত নিয়ে গর্ব বোধ করি। আমরা যেমন তাদেরটা (পশ্চিমা গান) শুনি, তেমনি তারাও আমাদেরটা শুনুক। কখনো কখনো আপনি এমন কিছু করে দেখালেন, যা বছরের পর বছর ধরে ঘটে চলবে।
প্রশ্ন :
এটা আপনাকে ভারতের বাইরে টেনেছে?
এ আর রাহমান: ঠিক এটা নয়, পশ্চিমা (গান) সব সময় আমার উপলব্ধি বা চেতনায় ছিল। তাই শেখর কাপুর যখন অ্যান্ড্রু ওয়েবারের সঙ্গে আমার সম্পর্কে কথা বললেন এবং অ্যান্ড্রু জানতে চাইলেন, ‘আমার কি কোনো গল্প আছে?’ এরপরই তৈরি হয় ‘বোম্বে ড্রিম’(বলিউড থিম নিয়ে সংগীত কম্পোজ করেছিলেন রাহমান এবং প্রযোজনা করেছেন ওয়েবার)।
প্রশ্ন :
তাহলে কি আমরা এই সবকিছু প্রামাণ্যচিত্রে দেখতে পাব?
এ আর রাহমান: হ্যাঁ, বৈচিত্র্য আমাকে মুগ্ধ করে, শুধু একটি মাধ্যমে নয়। এখানে একজন আছে গিটারবাদক, আপনি জানেন, তার বাজানো শুনলে আপনার অশ্রু ঝরবে। আমি তার বাজানোর একটি রেকর্ড বাজিয়েছিলাম। লোকজন বলেছেন, তারা কোনো দিন এত সুন্দর, নিষ্পাপ কিছু শোনেনি। আমি সব সময় হলিউড বৌলে যেতে চাই, এ আর রাহমান অ্যান্ড ফ্রেন্ডস কনসার্টের মতো কিছু করতে চাই। আমি এসব মানুষের (ছবির সংগীতশিল্পীদের) সঙ্গে হলিউডে একটি কনসার্ট করতে চাই।
প্রশ্ন :
এখন ‘হেডহান্টিং টু বিটবক্সিং’ নিয়ে পরিকল্পনা কী?
এ আর রাহমান: এটার কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। সেসব শেষ করে আমরা বিভিন্ন উৎসবে যাব। এর মধ্যেই সিনেমাটি নিয়ে অনেকের আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি।