মানুষ উপদেশ শুনতে পছন্দ করে না : তাহসান

তাহসান খানছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
‘ফ্যামিলি ফিউড’ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে আলোচনায় তাহসান রহমান খান। এদিকে ভালোবাসা দিবসে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একাধিক নতুন গান। ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা দুটি সিনেমার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। তাহসানের খবর নিয়েছেন মনজুর কাদের

‘ফ্যামিলি ফিউড’ ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে এসেছে বঙ্গ। এনটিভিতে প্রচারের পর এটি বঙ্গ অ্যাপেও দেখা যাচ্ছে। টান টান উত্তেজনায় ভরা পারিবারিক বিনোদনমূলক এ শোর উপস্থাপনা করছেন তাহসান। গত মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হয়েছে। প্রথম মৌসুমে ২৪ পর্ব ধারণ করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে ভিন্ন রকম এক তাহসানকে সবাই আবিষ্কার করেছেন। পারিবারিক এই শোতে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীরাও তাহসানকে উপস্থাপক হিসেবে পেয়ে বেশ মজা পেয়েছেন।

গত রোববার দুপুরে কথা প্রসঙ্গে তাহসান বললেন, ‘এই শো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। অনেক আগে থেকে আমিও দেখেছি। যাঁরাই এই অনুষ্ঠান দেখেছেন, তাঁরা ধরনটা জানেন। যাঁরা নতুন দেখছেন, তাঁদের জন্য অন্য রকম মজা। স্টিভ হার্ভেকে দেখছি অনেক বছর। শো করতে গিয়ে আমার মধ্যে রোমাঞ্চকর ব্যাপারটা কাজ করছে। তবে প্রত্যেক উপস্থাপকের নিজস্ব একটা স্টাইল থাকে। আমি এ অনুষ্ঠানে তাঁর সেই স্টাইল অনুসরণ না করে আমার দেশের কথা ভেবে, নিজের ব্যক্তিত্বের কথা মাথায় রেখে শোটা করছি। মানুষও উপভোগ করছে। আমাদের দেশে পারিবারিক শোর অভাব ছিল। এই অনুষ্ঠান সে অভাব অনেকটা ঘুচিয়েছে।’

তাহসান
ফাইল ছবি

শেষ কবে উপস্থাপনা করেছেন, তাহসানের মনে নেই। বললেন, ‘১২ কি ১৫ বছর তো হবেই।’

দীর্ঘদিন পর উপস্থাপনা প্রসঙ্গে তাহসান বললেন, ‘আমি চেয়েছি ভিন্নভাবে আসতে। আমার বন্ধুবান্ধব আর পরিবারের সবার সঙ্গে যেভাবে আড্ডা দিই, এখানেও সে রকম থাকার চেষ্টা ছিল। জোর করে আমাকে কিছু করতে হয়নি। গুরুগম্ভীর কিছু চাইনি।’

তাহসানের প্রিয় উপস্থাপকেরা

গানের পাশাপাশি একটা সময় অভিনয়েও নাম লেখান তাহসান। এখন টেলিভিশনের শোর উপস্থাপক হিসেবেও দেখা যাচ্ছে। তাঁর মতে, এখন উপস্থাপনার ধরনও পাল্টে গেছে। একটা সময় যাঁরা টেলিভিশনে উপস্থাপনা করতেন, তাঁরাই ছিলেন উপস্থাপক। এখন পডকাস্টের যুগ। উপস্থাপনার জায়গাটাও তাই অনেক বিস্তৃত।

তাহসান জানালেন, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে জন স্টুয়ার্ট, স্টিভেন কোলবার্ট ও ট্রেভর নোয়ার উপস্থাপনা দেখেছেন।

তাহসান বললেন, ‘এই তিনজনের উপস্থাপনা বেশি দেখেছি। এত সুন্দর করে জাতীয় ও জনপ্রিয় সব ইস্যু নিয়ে কথা বলেন, মনে হয় এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে অনেক শিক্ষণীয়ও। আমাদের দেশে আমরা যেটা পারি না, শিক্ষণীয় হলে বেশি শিক্ষণীয় হয়ে যায়। আর এন্টারটেইনিং হলে বেশি এন্টারটেইনিং হয়ে যায়। যাঁরা সমাজ বদলাতে চান, তাঁরা এত বেশি উপদেশমূলক কথা বলে ফেলি যে মানুষের কাছে তা সেভাবে পৌঁছায় না। মানুষ আসলে উপদেশ শুনতে পছন্দ করে না। কারও আবার রসবোধ এত বেশি যে শিক্ষণীয় কিছুও থাকে না। মাঝামাঝি একটা জায়গায় থাকার ব্যাপারটা অবশ্য আমি এই তিনজনের কাছ থেকে শিখেছি।’

দেশের মধ্যে তিনজন উপস্থাপক তাহসানের প্রিয়। তাঁর মতে, হানিফ সংকেতই বাংলাদেশে ৩৫ বছর ধরে এন্টারটেইনমেন্ট ও শিক্ষণীয় বিষয়কে সুন্দরভাবে সমন্বয় করেছেন। ছোটবেলায় ফজলে লোহানীর উপস্থাপনা দারুণ লাগত। এরপর আব্দুন নূর তুষারও তাহসানের খুব পছন্দের।

আরও পড়ুন
তাহসান খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

সিনেমার গানে

অডিও মাধ্যমে টানা গান গাইলেও চলচ্চিত্রে হাতে গোনা কয়েকটি গান গেয়েছেন তাহসান। শুধু গাওয়াই নয়, যদি একদিন নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। দীর্ঘ বিরতির পর ‘জংলি’ চলচ্চিত্রে ‘জনম জনম’ গানটি গেয়েছেন।

রোববার কথা প্রসঙ্গে তাহসান জানালেন, পবিত্র ঈদুল আজহার সিনেমা ‘দাগি’তেও একটি গান গেয়েছেন। গানটি ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাবে। প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে এর আগে একাধিক গান গেয়েছেন। এবার ‘জংলি’তে গাইলেন। পরপর সিনেমার গান প্রসঙ্গে তাহসান বললেন, ‘একেকটা সময়ের একেকটা ব্যাপার থাকে। এখন মূলধারার অনেক ভালো সিনেমা যেমন হচ্ছে, তেমনি আর্ট হাউসের ছবিও হচ্ছে। আমার কাছেও পরিচালক-প্রযোজকেরা গাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। সবার ভাবনা এবং কথা-সুর পছন্দ হচ্ছে, আমিও আনন্দ নিয়ে কাজ করছি।’

সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কয়েকটি বাংলাদেশের সিনেমা দেখেছেন বলে জানালেন তাহসান। তবে কোনোটির নাম বলতে চান না। কারণ, গায়ক মনে করেন, কোনো নাম বাদ পড়লে পরিচালক–প্রযোজকেরা মন খারাপ করবেন।

আরও পড়ুন
তাহসান

প্রিন্স মাহমুদের সঙ্গে

প্রিন্স মাহমুদের ভক্ত তাহসান। জানালেন, অডিওতে প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে বেশ কয়েকটি গান গেয়েছেন। তবে চলচ্চিত্রে এবারই প্রথম। তাহসান বললেন, ‘প্রিন্স ভাইও আমাকে এমন চোখে দেখেন...এত প্রশংসা করেন, এত ভালোবাসেন, সত্যিই তা ভালো লাগার। এত বেশি ভালোবাসেন, অনেক বেশি বেশি গান করতে চাই। “জনম জনম” গানটা আমার অনেক বেশি পছন্দের। ফিল্মে যে রকম গান হওয়া উচিত, এটা তেমনই। এখন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয় যে মানুষ গান এখনই হিট করতে চায়। কিন্তু গত ২২-২৫ বছরে বুঝেছি, গান হিট হওয়াটা খুবই অমূলক একটা ব্যাপার। গান বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। তাই বলব, গান হিটের চেয়ে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয়। কারণ, অনেক গান আছে, এত বেশি হিট, কিন্তু পাঁচ বছর পর সেটার কোনো অস্তিত্বই থাকে না। আমার এমন অনেক গান আছে, যখন প্রকাশিত হয়েছে, তখন দিগ্‌বিজয়ী হিট হয়নি, কিন্তু মানুষ শুনেছে; এখনো বেঁচে আছে। মঞ্চে উঠলে আমাকে সেসব গান গাইতে হয় না, তারাই গেয়ে যায়।’ ‘জনম জনম’ গানটিতে তাহসানের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন আতিয়া আনিসা।

আরও পড়ুন
‘ফ্যামিলি ফিউড’ সঞ্চালনা করছেন তাহসান।
ছবি : আয়োজকদের সৌজন্যে

পুরোনো গান নতুন করে

তিন দশকের গানের জীবন। একক অ্যালবাম যেমন প্রকাশ করেছেন, তেমনি মিশ্র অ্যালবামেও গেয়েছেন। নিজের গাওয়া পুরোনো সাতটি গান নতুন করে গাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাহসান বললেন, ‘আমি চেয়েছি, আমার সৃজনশীল কাজগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে থাকুক। নতুন করে উপস্থাপিত হোক। এমন সব গান করব, যেগুলো অনেক হিট হয়নি, কিন্তু আমার কাছে খুব প্রিয়। আবার অনেক গান হিট হয়েছে, কিন্তু অ্যারেঞ্জমেন্ট আমার মনমতো হয়নি। আমার নিজের ঢঙে অ্যারেঞ্জ করে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করব।’

এসব গানের নতুন সংগীতায়োজনসহ সব কাজও শেষ। গানগুলো হলো ‘একটাই তুমি’, ‘মন কারিগর’, ‘কেউ না জানুক’, ‘চাইলে আমার’, ‘তোমার আমার’, ‘বৃষ্টিতে’, ‘প্রাকৃতিক’, ‘প্রেমাতাল’। এর মধ্যে ‘চাইলে আমার’, ‘তোমার আমার’ গান দুটিকে ম্যাশআপ করে একটি গান হিসেবে প্রকাশ করবেন।

আরও পড়ুন