ব্যান্ডের নাম ‘কাকতাল’ কেন?
আসিফ ইকবাল অন্তু: কারণ, পুরো জার্নি খুবই কাকতালীয়। কোনো কিছু পরিকল্পনা করে হয়নি, যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব জোড়া লাগছে, সেভাবেই চলছে, সেভাবেই জড়িয়ে ধরছি। পরিকল্পনা না করে যখন জীবনের অনেক সুন্দর কিছু ঘটে যায়, সেই অনুভূতি অতুলনীয় ও মূল্যবান। কাকতাল নামে ‘কাক’ আছে। আমি কেন জানি কাকের সঙ্গে নিজের অনেক মিল খুঁজে পাই। কর্কশ সুরের সঙ্গে তাল। আমরা ধরে নিই, কোকিল তো গান গাইবেই। কিন্তু সেই দায়িত্বটা কাক নিলে কী ঘটতে পারে, সেটাই দেখতে চাই।
কাকতালের প্রায় সব গানের কথা ও সুর আপনার। প্রথম ১৩টি গানে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের ছাপ রয়েছে, পরে গানে প্রকৃতিও ঢুকেছে। মাঝের সময়ে দ্রোহের গানও করেছেন...
আসিফ ইকবাল অন্তু: আমার গানগুলো খুবই ব্যক্তিগত। আমার অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত। যখনই যে অভিজ্ঞতার মধ্যে গেছি, যেটা আমাকে আবেগতাড়িত করেছে, সেই কথাগুলোই একটু সুরে মিশে গান হয়েছে। একটা মানুষ কখনোই এক জিনিসের মধ্যে থাকে না, মানুষের জীবনের নানান ঘটনা ঘটতে থাকে। আমি তো জানি না, কখন প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে যাব, বৃষ্টি দেখে মুগ্ধ হব। কোনো একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেলাম, সেখানে একটা কামিনী ফুলের ঘ্রাণ পেয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, ওটা আমাকে অন্য জগতে নিয়ে গেল; এগুলো তো পরিকল্পিত নয়, প্রত্যাশিতও নয়। এসব নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, করতে চাইও না।
গানের বিষয়-বৈচিত্র্য আপনাকে সমসাময়িকদের তুলনায় আলাদা করেছে...
আসিফ ইকবাল অন্তু: আমি মনে করি, সব মানুষই পরিবর্তনশীল। আমি শুধু ওই ধারাটা স্বীকার করে তা-ই মেনে চলার চেষ্টা করছি। যা ঘটছে, তা–ই আমার রসদ। অনেকে যৌক্তিকভাবেই একটা কমফোর্ট জোন বেছে নেন। সেটাই চর্চা করে অভিজ্ঞ হয়ে যান। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ওই রকম নয়, অনুভূতি আমার কাছে একটা বহতা নদী। আমি হালবিহীন এক ভেলা। পথ নিয়ন্ত্রণ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে অস্বস্তিদায়ক বিষয়েও লিখেছি, গান বানিয়েছি; যখন যা পাই পথে।
কাকতালের গান মূলত কথানির্ভর...
আসিফ ইকবাল অন্তু: আমরা মূলত কথাই বলছি। মিউজিকের জ্ঞানও নেই তেমন।
কাকতালের প্রকাশিত শতাধিক গানের মধ্যে মাত্র একটি স্টুডিও রেকর্ড। বাকিগুলো হাতের কাছে যা আছে, তা দিয়েই বানিয়ে ফেলেছেন। খুব বেশি বাদ্যযন্ত্রের বালাই নেই। এর কারণ কী?
আসিফ ইকবাল অন্তু: আমার চিন্তা ছিল না, আমি একটা গান বানাব, সুন্দর মিক্সিং, মাস্টারিং, রেকর্ড হবে, তারপর সেটা মানুষ শুনবে। বেশির ভাগ মিউজিশিয়ানের চিন্তা থাকে, একটা পূর্ণাঙ্গ গান দেবে। আমি তো নিজের জন্য গান করি। আমার চাওয়া–পাওয়া কম। অল্পতেই সন্তুষ্ট। কাকতালীয়ভাবে মানুষ আমাকে শুনছে। আমি তার জন্য গান বানাইনি, আমার জন্য গান বানিয়েছি। আমার জন্য ‘ফিনিশড’ গান দরকার নেই। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে, ততটুকু দিয়েই করব। আমি ভুল করতে ভয় পাই না। কারণ, আমি জীবনের যা শিখেছি, ভুল থেকেই শিখেছি। যত ভুল হয়, তত আমার ভালো লাগে। মনে হয়, নতুন একটা জিনিসটা শিখলাম। আর এক্সপ্রেশনের ক্ষেত্রে করে ফেলাটা জরুরি।
বলতে বেশি সময় দিলে তা নাগালের বাইরে চলে যায়। তখন আমরা কনফিউজড হয়ে বসে থাকি অথবা যুক্তি দিয়ে অনুভূতিকে দূষিত করে ফেলি। ভুল হবেই, মানুষ মাত্রই ভুল করে। ভুল থেকে শিখতে হবে। আমি যত ভুল করতে থাকব, আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করে আগাব, তত কাজের কাজ করব। ওইটা আমি অনুসরণ করার চেষ্টা করি। ভুল হোক। আমি তো গান গেয়ে কাউকে আঘাত দিচ্ছি না।
বাণিজ্যিক চিন্তার জায়গা থেকে বললে, অনেক মানুষের মধ্যে গানকে ছড়ানোর একধরনের আকাঙ্ক্ষা থাকে অনেক শিল্পীর। সেই আকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে পাশ কাটান?
আসিফ ইকবাল অন্তু: আমি পেশাদার মিউজিশিয়ান নই। কাকতালীয়ভাবে আমি মিউজিক করি। মিউজিকের জন্য আমি প্রশিক্ষিতও নই, আমি পড়াশোনা করেছি আর্কিটেকচারে। আমি গানকে কখনোই বাণিজ্যিকভাবে দেখিনি, কোনটা পছন্দ করছে, কোন ধরনের গান মানুষ চাইছে, সেটা নিয়ে চিন্তা করিনি। আমি কিছু কথা বলতে চাই, সেটারই একটা সহজ মাধ্যম গান। একটু পরিচিত হওয়ার পর চাপটা বেশি আসে কিন্তু যখন আমাদের মনমতো কাজ করে শতাধিক গান বানিয়েই ফেলেছি এবং যখন দেখছি, সেগুলোই মানুষ শুনছে, ভালোবাসছে, তখন তো আমাদের প্রচলিত নিয়মে যাওয়ার কোনো মানেই নেই। আমরা যা–ই করছি, যেভাবেই করছি, কিছু না কিছু হলেও তা কাজ করছে। তাহলে আমরা কেন আরেকজনকে অনুসরণ করতে যাব বা অন্য কারও কথা মানতে যাব? ওই চিন্তাটা একদমই পীড়া দেয় না।
আমরা বিশ্বাস করি, চিন্তায় যদি সৎ থাকি, নিজেরা যা-তা-ই থাকি; যেভাবে গান করছি, কেউ না কেউ আমাদের খুঁজে নেবে। কারণ, আমরা সবাই মানুষ। আমাদের অনেক মিল। তাই আমাদের কথাগুলো কারও না কারও সঙ্গে মিলে যাবেই। এখন পর্যন্ত শুধু একটা গান স্টুডিওতে রেকর্ড করা।
বাসায় রুমের মধ্যে একটা মাইক্রোফোন ছিল, সেটা দিয়েই গান রেকর্ড করতাম। আগে কোনো মাইকও ছিল না। হাতের কাছে যা আছে, সেটা দিয়েই কাজ করছি। তারপরও মানুষ শুনছে। ব্যান্ডের বয়স মাত্র তিন বছর। সারা জীবন যতটুকু দেখেছি, একটা ব্যান্ড কিংবা শিল্পী ভাগ্যক্রমে হঠাৎ খুব ভালো একটা প্ল্যাটফর্ম না পেলে, সচরাচর পরিচিতি পেতেই ৮ থেকে ১০ বছর লেগে যায়। আমরা ওই জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছি কোনো প্রথাগত চেষ্টা ছাড়াই। তেমন কোনো নিয়ম না মেনেই।
এখন তো তরুণদের মধ্যে কাকতাল বেশ জনপ্রিয়তা। অনেক শো করেন, এখান থেকে অর্থও আসছে। এর মধ্যে আপনাদের নিজস্বতা হারানোর শঙ্কা দেখেন?
আসিফ ইকবাল অন্তু: আমরা এই অর্থের ওপর খুব একটা নির্ভরশীল নই। আগে কিছুই ছিল না, তারপর নিরীক্ষা করার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন বাড়তে থাকে। যত দিন আমরা বাদ্যযন্ত্র কিনতে পারিনি, কিনিনি। এখন কেনার সামর্থ্য তৈরি হয়েছে, তাহলে কেন কিনব না? আমাদের আরেকটু উন্নতির জন্য, বাদ্যযন্ত্রের জন্য অর্থটা খরচ করছি।
মিউজিক খুবই ব্যয়বহুল। পকেট থেকে টাকা ঢালতে হচ্ছে না, মিউজিকের টাকা থেকেই মিউজিক করছি। যে টাকাটা আসে, সবার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। নিজের পকেট থেকে যাচ্ছে, এমন কোনো দুশ্চিন্তা হচ্ছে না। আমি একটা জিনিস পছন্দ করছি, সময়, শ্রম, লজিস্টিক্যাল খরচটাও ওখান থেকেই পাচ্ছি, এর চেয়ে ভালো কী হতে পারে?
২০২১ সালের ২০ আগস্ট কাকতালের আত্মপ্রকাশের পর থেকে প্রতি মাসেই চার-পাঁচটা শো করেছি, এখনো সেভাবেই চলছে। আগে বেশি মানুষ জানত না, তাই অনেকেই ভাবে, এখন হয়তো বেশি করছি। কিন্তু আসলে এখন একটু বেছে শো করি। শুরুতে অনেক ফ্রি শো করতাম, পরে সম্মানী যোগ হয়েছে।
তবে আমার এখনো ছোট ক্রাউডে গান করতে ভালো লাগে। কারণ, সবার সঙ্গে কথা বলা যায়, সংযোগ হয়। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে সময় নিয়ে গান করতে চাই পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ধরে। মজার ব্যাপার, অনেকে বলে, রেকর্ডিংয়ের চেয়ে লাইভের কোয়ালিটি ভালো আমাদের। সামনাসামনি গান শুনে কাকতালে ডুবে যাওয়া শ্রোতার সংখ্যা বেশি।
বলা হয়, আপনার গায়কিতে অঞ্জন দত্তের প্রভাব বেশ স্পষ্ট...
আসিফ ইকবাল অন্তু: সাদৃশ্য আছে হয়তো, তবে এটা ইনটেনশনালি (ইচ্ছাকৃত) নয়। মানুষ কেউই পুরোপুরি অরিজিনাল (মৌলিক) নয়। আমাদের বেড়ে ওঠার সময় চারপাশের সবই ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাবিত) করে। সেটা অঞ্জন দত্ত হতে পারেন, আবার আমার পাশে বাসার কেউ গান করছেন, উনিও হতে পারেন। যা ভালো লাগছে, তার একটা ছাপ থেকে যায় মনে। আমি যত দূর মনে করতে পারি, আমার বোন অনি অঞ্জন দত্তের ফ্যান (ভক্ত) ছিল। আমার বাবা হেমন্ত, লতা মঙ্গেশকর শুনত। অঞ্জন দত্তের গান আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। আমার অঞ্জন দত্তের কিছু পছন্দের গান আছে, যেগুলো খুব জনপ্রিয় নয়। পরে আরও অনেক ব্যান্ডের গান শুনেছি।
অঞ্জন দত্ত যেমন গানে অনেক কথা ব্যবহার করেন, খুব বেশি মিউজিক নেই, তেমন আমিও কথাই বলি। মেথডটা (পদ্ধতি) অনেকটা একই। আমার ভয়েসটাও নাকি অঞ্জন দত্তের সঙ্গে মেলে। এ জন্য আরও বেশি মনে হয়। আবার অঞ্জন দত্ত বব ডিলানের থেকে প্রভাবিত। তাঁদের মেথড একই। গীতিকবি ও শিল্পী জনরাটা একই মেথডে চলে। তাঁদের গানে মিউজিক কম থাকে, কথা অনেক বেশি থাকে। আমি বাংলায় গান করি, বাঙালির আবেগও একই। ওনার সঙ্গে কেউ আমাকে তুলনা করলে এটা তো আমার জন্য গর্বের।
অঞ্জন দত্ত, অর্ণব, জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, ওয়ারফেজ, আর্টসেল, ব্ল্যাক, নেমেসিস, অর্থহীন, আরবোভাইরাস, ক্রিপটিক ফেইট, ভাইব শুনতাম। মেটাল শুনতাম প্রচুর। ক্রেডেল অব ফিলথ, প্যান্টেরা, সিওবি, এসওডি; পাশাপাশি মেটালিকা, আয়রন মেইডেন তো আছেই। পাঁচ বছর আগে প্রচুর টোয়েন্টি ওয়ান পাইলট, প্যানিক অ্যাট দ্য ডিসকো, গ্লাস অ্যানিমেলস শুনতাম। এদের গানের ধরনের সঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় হয়তো মিল পেতে পারেন। আমি নিশ্চিত, নিজে না চাইলেও কোনো না কোনোভাবে এদের প্রভাব আমার গানে থাকবেই।
কাকতালের প্রকাশ্যে আসার তিন বছরের যাত্রাটা কেমন ছিল?
আসিফ ইকবাল অন্তু: খুবই রোমাঞ্চকর। ঢাকা শহরে কাজ করা বেশ হেকটিক। সারা দিন কাজের পর একটা গান বানাচ্ছি অথবা শো করছি, তখন পুরো দিনের প্যারাটা কমে যায়, উজ্জীবিত লাগে। আমার স্ট্রেসের ওষুধ হিসেবে গান কাজ করে। আমি সুখে আছি, মিউজিকের জন্য আর কিছুটা মিউজিকের মাধ্যমেই পাওয়া আমার সহধর্মিণী নুজহাতের জন্য।
কাকতালে বর্তমানে সক্রিয় সদস্য ছয়জন। আমি, নাজেম আনোয়ার, অ্যালেক্স জোভেন, ঋদ্ধ, অন্তর বাজায় এবং জাভেদ আমাদের ম্যানেজার। এই যাত্রায় প্রত্যেকের অবদান রয়েছে।
কাকতালের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র কীভাবে?
আসিফ ইকবাল অন্তু: নাজেম আমার ইউনিভার্সিটির জুনিয়র ও বন্ধু। আমাদের সঙ্গে বাঁশি, ক্ল্যারিনেট, মেলোডিকা বাজায়। সে মনেপ্রাণে একজন আর্কিটেক্ট, সঙ্গে অসাধারণ ক্যালিগ্রাফি করে। আলেক্স মূলত ডেথ মেটাল ড্রামার, কিন্তু তার শুরু তবলা দিয়ে। ঋদ্ধ আমার শ্রীমঙ্গলের বন্ধু, আরেক বন্ধু সৌমিত্রের মাধ্যমে পরিচয়। ও বেজ গিটার বাজায় কাকতালে, কিন্তু সে তবলা, কি–বোর্ড, গিটারসহ অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারে। ঋদ্ধ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।
অন্তর ভাই প্রকৌশলী, পুরোদস্তুর চাকরিজীবী। কাকতালে কি–বোর্ড বাজান। আর জাভেদ ‘হেভি মেটাল টি–শার্ট’-এর মালিক। এর বাইরেও আমাদের পরিবার, অনেক বন্ধু সারাক্ষণ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে জরুরি সদস্য হচ্ছেন আমাদের শ্রোতারা। তাঁরা কাকতালকে একদম নিজের মনে করে গান শোনেন। আগের মতো আবারও হয়তো সদস্য বদলাবে, কিন্তু স্মৃতি যা থেকে যাবে, সেটাই কাকতাল।
আপনি গানে এলেন কীভাবে?
আসিফ ইকবাল অন্তু: উদয়ন স্কুলে পড়তাম। স্কুলের র্যাগ ডেতে বাজানোর জন্য বন্ধুরা গিটার বাজানো শুরু করেছিল। তাদের দেখে আমিও ৫০০ টাকা দিয়ে পুরোনো দেশি গিটার কিনেছিলাম।। কিছুদিন পর বেশির ভাগ বন্ধু গিটার বাজানো ছেড়েও দেয়। আমি কোনোভাবে তাদের কাছ থেকে কিছু কর্ড শিখি। চার–পাঁচটা কর্ড দিয়ে র্যাগ ডেতে পারফর্মও করি। এর বেশি কখনো গিটার শেখা কিংবা মিউজিক নিয়ে চিন্তা করা হয়নি। মাঝেমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা দিতে বসলে গান করতাম।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রচুর লেখালেখি করেছিলাম। গান নয়, একান্ত অনুভূতি। একসময় ভাবি, ওই কথাগুলোর সঙ্গে সুরও যুক্ত করা যেতে পারে। এরই মধ্যে একটি গিটার পাই। কী কর্ড বা নোট বাজাব মাথায় ছিল না, দু–একটা তার ধরছি, বাজাচ্ছি, যেটা মিলে যায় ভাবের সঙ্গে। নিজের জন্য, তারপর ওই গুনগুন কিছু মানুষের ভালো লাগে, পরিক্রমায় কয়েকজনের অনুরোধে রেকর্ড করে ইউটিউবে প্রকাশ করতে থাকি। পরে জানতে পারি, অনেক মানুষ গানগুলো শুনেছে।
মিউজিশিয়ান হওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। অনেক মানুষ আমার গান শুনবে, এমন কোনো স্বপ্নও ছিল না। কাকতালীয়ভাবেই গানের জগতে এসেছি।
কাকতালের আত্মপ্রকাশ কীভাবে?
আসিফ ইকবাল অন্তু: ২০১৯ সালের দিকে একে একে ১৩টি গান প্রকাশিত হয়েছিল। ২০২১ সালের ২০ আগস্ট পরিপূর্ণ ব্যান্ড হিসেবে কাকতাল আত্মপ্রকাশ করে। সেদিন আজিজ মহল্লাতে এক বন্ধুর অনুরোধে আমার একটা শো করার কথা হয়। আমার সঙ্গে নাজেম আনোয়ারের বাজানোর কথা থাকলেও সে কোনো এক কারণে বাজাতে পারবে না জানিয়েছিল।
পরে মেঘদলের সৌরভদার আসার কথা ছিল কিন্তু ওনার আত্মীয় মারা যায়, আসতে পারেননি। কীভাবে যেন নাজেম চলে আসে, কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেনি তেমন, কয়েকটা গান শুনেছে। আমাদের তখন কেউ চিনত না কিন্তু ৬০-৭০ জন মানুষ গান শুনতে চলে এসেছিল। আমি, নাজেম ও শান্ত মিলে কাকতালের আত্মপ্রকাশ ঘটালাম।
কাকতালের কী অ্যালবাম আসছে?
আসিফ ইকবাল অন্তু: আন্দোলনের সময় তিনটি গান প্রকাশ করেছি। এগুলো হলো ‘রক্ত গরম মাথা ঠান্ডা’, ‘ভরসা আছে’ ও ‘শিক্ষার জবানবন্দি’। আন্দোলনে সন্তানহারা মায়েদের উদ্দেশে আরেকটা গান ‘ওই মা তোর পোলা মরে নাই’ করেছি। চারটা গান নিয়ে একটা ইপি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা, কাজ কোথায়?
আসিফ ইকবাল অন্তু: জন্ম পঞ্চগড় শহরে। ওখান থেকে বাবার চাকরিসূত্রে পাঁচ বছর বয়সে ঢাকার আজিমপুর কলোনিতে চলে আসি। আজিমপুরে সবাই সবাইকে চিনত। বিকেলে খেলাতাম। ঘুড়ি ওড়াতাম, লাটিম খেলতাম, কাদায় দাপাদাপি করে পুকুরে ঝাঁপ দিতাম।
উদয়ন স্কুলে পড়েছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই শৈশব কেটেছে। আজিমপুর থেকে মোহাম্মদপুরে চলে আসি ২০০৭ সালের শেষে। কলোনি লাইফটা মিস করতাম। পরে সিটি কলেজে পড়েছি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আর্কিটেকচারে পড়েছি। তারপর পেশাগতভাবে আর্কিটেক্ট, গ্রাফিক ডিজাইনার।