ভরা বর্ষায়ও কনসার্টের মুখরতা

শীতকালকে বলা হয় কনসার্টের মৌসুম, তবে মহামারির পর দেশে বছরজুড়েই হচ্ছে কনসার্ট; পাশাপাশি বর্ষাকালে কনসার্টের যে খরা ছিল, সেটাও কেটেছে।

গত বৃহস্প‌তিবার ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ‘ম্যাজিক্যাল নাইট’ কনসা‌র্টের মঞ্চে মেঘদলখালেদ সরকার

‘বর্ষা মৌসুমে এর আগে কখনোই এতসংখ্যক কনসার্ট দেখা যায়নি,’ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলছিলেন রক মিউজিক গবেষক গৌতম কে শুভ। এ বছর বর্ষা মৌসুমে (আষাঢ় ও শ্রাবণ) ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত সাতটি কনসার্ট রয়েছে, এটিকে নজিরবিহীন ঘটনা বলা চলে।


আর মহামারির পর বেশির ভাগ কনসার্ট ঢুকে পড়েছে ইনডোরে, এখন আউটডোরে, খোলা আকাশের নিচে, কনসার্ট খুব একটা দেখা যায় না। ফলে মুষলধারে বৃষ্টি কিংবা ঝড়ের মধ্যেও গিটারের টুংটাং, ড্রামসের দ্রিম দ্রিম আর গানের ছন্দে ছেদ পড়ছে না। আউটডোরে বৃষ্টির বাগড়ায় বহু কনসার্ট ভেস্তে যাওয়ার নজির রয়েছে, তবে ইনডোরে সেই ঝুঁকি থাকে না।


এ আষাঢ়েই ঢাকায় ‘ম্যাজিক্যাল নাইট’–এ গান করে গেলেন কলকাতার অনুপম রায়, সঙ্গে ছিলেন ঢাকার অর্ণব। আষাঢ়ের শেষভাগে ও শ্রাবণ মাসজুড়ে আর্টসেল, অর্থহীন, ওয়ারফেজ, শিরোনামহীনের মতো শীর্ষ ব্যান্ডের কনসার্ট আছে। এর মধ্যে পপ কালচার উৎসব ‘ঢাকা সামার কন ২০২৩’–এ গাইবে ৩০টি ব্যান্ড। আরও রয়েছে দ্য আলটিমেট রক ফেস্ট, মহীনের ঘোড়াগুলির প্রয়াত সদস্য তাপস বাপী দাস স্মরণে ‘ভালোবাসি জ্যোৎস্নায়’, টিএসসিতে ‘কনসার্ট ফর রাসেল’।


স্কাই ট্র্যাকার লিমিটেড, দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স, ব্যান্ডমিথ এক্সপেরিয়েন্টাল, সিক্সবেজ কমিউনিকেশন, ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনস, এডভেন্টর কমিউনিকেশনস, ঢাকা ব্রডকাস্টসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কনসার্ট আয়োজন করে।

মহামারির পর থেকে বেশির ভাগ কনসার্ট ইনডোরে ঢুকে পড়েছে। তাঁর ভাষ্যে, বর্ষাকালে আউটডোরে কনসার্ট করা যায় না; বরং ইনডোরে কনসার্ট করা সহজ।
দোজা এলান, প্রধান নির্বাহী, স্কাই ট্র্যাকার

স্কাই ট্র্যাকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দোজা এলান গতকাল প্রথম আলোকে জানান, মহামারির পর থেকে বেশির ভাগ কনসার্ট ইনডোরে ঢুকে পড়েছে। তাঁর ভাষ্যে, বর্ষাকালে আউটডোরে কনসার্ট করা যায় না; বরং ইনডোরে কনসার্ট করা সহজ।

পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কনসার্টের প্রতি আগ্রহকেও সামনে আনছেন রক মিউজিক গবেষক গৌতম কে শুভ। তিনি বলছেন, কোভিডের পর মানুষের মধ্যে টিকিট কেটে কনসার্ট দেখার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। প্রতিটি কনসার্টেই ভিড় থাকছে, ফলে আয়োজকেরাও একের পর এক কনসার্ট আয়োজন করছেন।

‘ম্যাজিক্যাল নাইট’ কনসা‌র্টের মঞ্চে হাতিরপুল সেশনস
খালেদ সরকার

আর্মি স্টেডিয়ামে ‘জয় বাংলা কনসার্ট’ ও ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) এক্সপ্রো জোনে আয়োজিত হাতে গোনা কয়েকটি কনসার্ট ছাড়া এখন ৯০ ভাগের বেশি কনসার্ট ইনডোরেই আয়োজন করা হয়। ইনডোর ভেন্যুর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে সবচেয়ে বেশি কনসার্ট হয়; এর বাইরে আলোকি, কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনসহ আরও কয়েকটি মিলনায়তনেও কনসার্ট হয়।

ইনডোর ভেন্যুর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে সবচেয়ে বেশি কনসার্ট হয়; এর বাইরে আলোকি, কেআইবি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনসহ আরও কয়েকটি মিলনায়তনেও কনসার্ট হয়।

দোজা এলান বলছেন, এই মিলনায়তনগুলোয় আগে করপোরেট শো হতো, মহামারির পর থেকে আয়োজকেরা সব শ্রেণির দর্শকের জন্য শো করা শুরু হবে। কনসার্টে শ্রোতাদের ভিড়ও বেড়েছে। আয়োজকেরা এখন ভালো ব্যবসাও করছেন।

ইনডোরে অভিযোগও কম নয়

টিকিট ছাড়লেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন শ্রোতা। ১০ হাজার, সাড়ে ৪ হাজার কিংবা ১ হাজার—যেকোনো মূল্যে টিকিট কেটেই প্রিয় ব্যান্ডের গান উপভোগ করছেন তাঁরা। এই রমরমা সময়ে টিকিট বেচে ফুলেফেঁপে উঠছে অনেক আয়োজক প্রতিষ্ঠান। লাভের আশায় ইনডোরে একের পর এক কনসার্টের ঘোষণা দিলেও ব্যবস্থাপনার ঘাটতিও সামনে আসছে।

গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকিট কেটে কনসার্ট দেখতে গিয়ে অভিযোগ নিয়ে ফিরছেন অনেক শ্রোতা। এর মধ্যে ভারতীয় তরুণ গায়ক অনুব জৈনকে নিয়ে ‘লেটস ভাইব উইথ ঢাকা’ শীর্ষক কনসার্টে ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিকসংখ্যক দর্শক ঢুকে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক শ্রোতা। তাঁদের ভাষ্যে, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে গোলযোগের মধ্যে মানুষের চাপে, গরমে নাভিশ্বাস ছুটেছে অনেকের।

মঞ্চে অনুব জৈন
ছবি: সরদার আকিব লতিফ
ভারতীয় তরুণ গায়ক অনুব জৈনকে নিয়ে ‘লেটস ভাইব উইথ ঢাকা’ শীর্ষক কনসার্টে ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিকসংখ্যক দর্শক ঢুকে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক শ্রোতা। তাঁদের ভাষ্যে, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে গোলযোগের মধ্যে মানুষের চাপে, গরমে নাভিশ্বাস ছুটেছে অনেকের।

নড়বড়ে নিরাপত্তার কারণে টিকিট ছাড়াও অনেকে ঢুকে পড়েছিলেন। কনসার্টের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনস ও এডভেন্টর কমিউনিকেশনস শ্রোতাদের অভিযোগ স্বীকার করেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনসের এক কর্মী জানান, আগামী দিনে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আরও সতর্ক থাকবেন।

এর বাইরে গত দুই মাসে অন্তত দুটি কনসার্টে ছিলেন এমন কয়েকজন শ্রোতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইনডোরে বেশির ভাগ কনসার্টে সাউন্ড সিস্টেমে জটিলতা দেখা গেছে। সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে ভিআইপি জোনে টিকিট কেটেও অনেকে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কনসার্ট দেখেছেন।

এটাকে ‘অপেশাদার’ বলছেন স্কাই ট্র্যাকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দোজা এলান। তিনি বলছেন, ‘বিষয়গুলো এখনই সুরাহা করা উচিত। গুটিকয় আয়োজকের জন্য আমাদের সবার ওপর প্রভাবটা পড়বে।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন