বলিউডের সিনেমায়ও গান করেছিলেন এন্ড্রু কিশোর, তবে...
এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠ আর গায়কিতে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক রাহুল দেববর্মন (আর ডি বর্মন)।
আর ডি বর্মনের সুরে ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি সিনেমা ‘শত্রু’র গানে কণ্ঠ দেন এন্ড্রু কিশোর। তাঁর গাওয়া ‘ম্যায় তেরা বিসমিল হুঁ’, ‘সুরজ চান্দা সাগর পর্বত’ শিরোনামে দুটি গান শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল। বাংলায় ‘বিরোধ’ নামে মুক্তি পেয়েছিল।
এন্ড্রু কিশোরের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০২০ সালের আজকের এই দিনে (৬ জুলাই) মারা গেছেন তিনি।
জীবদ্দশায় প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিন্দি সিনেমায় গানের কথা বলেছেন তিনি। এন্ড্রু কিশোর জানান, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘শত্রু’ নির্মাণ করেছেন মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার প্রমোদ চক্রবর্তী।
এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠ আর গায়কিতে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক রাহুল দেববর্মন (আর ডি বর্মন)।
আর ডি বর্মনের সুরে ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি সিনেমা ‘শত্রু’র গানে কণ্ঠ দেন এন্ড্রু কিশোর। তাঁর গাওয়া ‘ম্যায় তেরা বিসমিল হুঁ’, ‘সুরজ চান্দা সাগর পর্বত’ শিরোনামে দুটি গান শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল। বাংলায় ‘বিরোধ’ নামে মুক্তি পেয়েছিল।
এন্ড্রু কিশোরের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০২০ সালের আজকের এই দিনে (৬ জুলাই) মারা গেছেন তিনি।
জীবদ্দশায় প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিন্দি সিনেমায় গানের কথা বলেছেন তিনি। এন্ড্রু কিশোর জানান, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘শত্রু’ নির্মাণ করেছেন মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার প্রমোদ চক্রবর্তী।
মুম্বাইয়ে গানের রেকর্ডিংয়ের স্মৃতিচারণা করে এন্ড্রু কিশোর বলেছিলেন, ‘যেদিন আমি দেশে ফিরব, সেদিন বিদায় নিতে গেলে পঞ্চমদা (আর ডি বর্মন) আমাকে বললেন, ‘ঢাকাইয়া, তুই হয়তো ভাবছিস, মাঝেমধ্যে ডাকব, গাওয়াব। কিন্তু আমাদের দেশাত্মবোধটা খুব বেশি। কিছু করতে চাইলে এখানে থাকতে হবে। তুই থেকে যা। বিয়েশাদি করিসনি। সে ব্যবস্থাও আমি করে দেব। কিন্তু আমি তখন তাঁকে বললাম, দাদা, আমার দেশেই আমি অনেক ভালো আছি। তিনি তখন আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, তুই একটা বাঘের বাচ্চা।’
এন্ড্রু কিশোর সোজা গিয়ে উঠলেন পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তীর মুম্বাইয়ের বাড়িতে।
‘প্রমোদদা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর (আর ডি বর্মন) সঙ্গে। বুঝলাম, অমায়িক ব্যক্তিত্বের মানুষ তিনি। ভদ্রলোক কেন জানি আমাকে পছন্দ করে ফেললেন। বললেন, ঢাকাইয়া, (আমাকে তিনি ঢাকাইয়া বলে ডাকতেন) তুই প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমার বাসায় চলে আসবি। আমি কাজ করব, তুই দেখবি। কিছুটা অবাক হলাম। কারণ, একজন সংগীত পরিচালক কখনো তাঁর কাজের সময় অন্য কারও উপস্থিতি কামনা করেন না। বাড়ির কেয়ারটেকারকে ডেকে বললেন, এই হলো ঢাকাইয়া, ও যখন আসে দরজা খুলে দিবি, যা খেতে চায় খাওয়াবি। কয়েক দিন কাটল। আমি নিয়মিত উনার বাসায় আসা-যাওয়া করলাম। এদিকে তিনি গানটা সুর করে ফেললেন।’ বলেছিলেন এন্ড্রু কিশোর।
হিন্দিতে গাইতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি। এন্ড্রু কিশোরের ভাষ্যে, ‘হিন্দি বলতে পারা আর হিন্দি গান গাওয়া তো এক কথা নয়। তা ছাড়া গানের কথাগুলো ছিল বেশ কঠিন। তাই আমার গাওয়াটা পরিষ্কার হচ্ছিল না। এবার পঞ্চমদা আমাকে নিয়ে গেলেন ওই গানের গীতিকারের বাসায়। সমুদ্রতীরবর্তী প্রাসাদসম ওই বাড়িতে থাকেন কিংবদন্তি গীতিকার আনন্দ বকশি, আমার গানটির রচয়িতা। দোতলা ওই বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে আমরা সোজা চলে গেলাম তাঁর বেডরুমে। ভদ্রলোক ঘুমাচ্ছিলেন। উনার পানের অভ্যাস। দেখি পানের বাটা সঙ্গে নিয়ে ঘুমাচ্ছেন। পঞ্চমদার ডাকে ঘুম থেকে উঠলেন। উঠেই মুখে পান দিলেন। এরপর জানতে চাইলেন ব্যাপার কী? প্রমোদদা বললেন, ব্যাপার কিছু না, তুমি কি কঠিন গান লিখেছ। কিশোর তো গাইতে পারছে না। তখন বকশিদা নিজে গানটি সুরে সুরে গাইলেন। বললেন, আমার হিন্দি উচ্চারণগুলো ভালো করে শুনে মার্ক করে নাও। সন্ধ্যায় গেলাম পঞ্চমদার বাসায়। এবার গাইলাম। প্রমোদদা তবু বললেন, ভালো গাইছ, কিন্তু কোথায় যেন সমস্যা। পঞ্চমদা বললেন, কই না তো! ও তো ঠিকই গাচ্ছে। রেকর্ডিংয়ের দিন প্রমোদদা পঞ্চমদাকে বললেন, আশাকে ডাক (মানে আশা ভোসলে)। ও থাকলে সমস্যাটা কিশোরকে বুঝিয়ে বলতে পারবে।’
আশা ভোসলের আসার খবরে এন্ড্রু কিশোরের হৃৎস্পন্দন বাড়তে থাকল। সেই সময়ের স্মৃতি বলেছিলেন, ‘আশাজি এলেন, স্নেহভরা কণ্ঠে আমার পরিচয় নিলেন। কানের কাছে এসে আস্তে আস্তে আমাকে গানটা শোনালেন। সে কী মধুরতম কণ্ঠস্বর, মনে হয় তানপুরা থেকে আসছে জগৎখ্যাত কোনো সুর। আজও আমার কানে বাজে সেই সুর, কণ্ঠস্বর। আমাকে গানটা ধরিয়ে দিলেন। যেখানে যেখানে সমস্যা ছিল শুধরে দিলেন। এবার আমি গাইতে গেলাম। কিন্তু এবার আমি আর গাইতে পারছি না। গলা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। তখন পঞ্চমদা-আশাজি হাত ধরে আমার কাছে এসে বললেন, তুই আমার বউকে (আশা ভোসলেকে) ভয় পাচ্ছিস? এই আশাকে সৃষ্টি করেছি আমি, তুই আমার সামনে গাইতে পারলি অথচ আশাকে ভয় পাচ্ছিস? বললাম, পঞ্চমদা আমাকে ক্ষমা করো। আমি আশাজির সামনে গাইতে পারব না। তখন আশা ভোসলে হেসে আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে চলে গেলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর আমি পুরো গানটা গাইলাম। এবার আমার গায়কি শুনে পঞ্চমদাও খুব খুশি। অল্প সময়ের মধ্যেই দুটি গান গেয়ে ফেললাম।’
‘শত্রু’ সিনেমায় বলিউডের অভিনেতা রাজেশ খান্না, ঢাকার অভিনেত্রী শাবানাসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন।