প্রেম-সুরে চলছে ‘লোপা-জয় এক্সপ্রেস’
প্রায় দুই যুগ ধরে সংসার করছেন লোপামুদ্রা মিত্র ও জয় সরকার। ভালোবেসেই বয়সে বড় লোপার হাত ধরেছিলেন জয় সরকার। বয়সে ছোট জয়ের বাজনা, সংগীত–দর্শনের প্রেমে পড়েছিলেন লোপাও। এমনটি জানিয়েছেন তাঁরাই। তবে তাঁদের প্রেমময় সম্পর্কের কথা কারওই অজানা নয়।
তাই তো মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সেই প্রেমের কিছুটা ছাপ রেখে দেন এই দম্পতি। এবারও তা–ই ঘটেছে। বিশাল এক পোস্টে লোপার প্রেমে এখনো যে কতটা হাবুডুবু খান জয়, সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন গায়ক। জানিয়েছেন, কীভাবে লোপার সঙ্গে আলাপ-প্রেম। ব্যক্তিজীবনের সঙ্গী থেকে গানের ভুবনের সহযাত্রীকে নিয়ে দারুণ সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন জয় সরকার।
দীর্ঘ স্মৃতিচারণায় জয় লিখেছেন, ‘লোপার সঙ্গে মঞ্চে গিটার বাজানোটা একসময় আমার রোজকার কাজ ছিল। সেই সূত্রেই দুজনের পরিচয়, প্রেম এবং পরিণয়। মোটামুটি ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল অবধি টানা বাজানোর পর আমি নিজের সংগীত পরিচালনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, আর লোপাও বাধ্য হয় আমার বিকল্প খুঁজে নিতে। যদিও মাঝেমধ্যে ও বিপাকে পড়লে দৌড়ে যেতে হতো। এরপর হাতে গোনা মাত্র কয়েকবার সুযোগ হয়েছিল একসঙ্গে পারফর্ম করার।
কিন্তু আমরা প্রবলভাবে মিস করতাম একসঙ্গে মঞ্চে থাকার সেই উত্তেজনা, ভালো লাগা, পারফরম্যান্স শেষে ভাগ করে নেওয়া করতালির আওয়াজ। আমি যেমন না তাকিয়ে বুঝতে পারতাম লোপা কোথায় দম নেবে, কোথায় শুরু করবে আর কোথায় শেষ করবে; লোপাও চোখ বুঁজে দেখতে পেত আমার হাতের গতিবিধি, পড়তে পারত আমার শ্বাস-প্রশ্বাস—এতটাই গভীর রসায়ন ছিল দুজনের মধ্যে। আর হ্যাঁ, শ্রোতারাও আমাদের একসঙ্গে দেখতে চাইতেন ভীষণভাবে।’
কোভিডের সময়ের কথা স্মরণ করে জয় আরও লিখেছেন, ‘গৃহবন্দী থাকাকালীন আমরা ঠিক করি, বাকি জীবনটা যতটা সম্ভব নিজেদের পছন্দমতো কাটাব। আর সেই তালিকার একদম শুরুর দিকে ছিল আবার একসঙ্গে মাঝেমধ্যে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা। রোজকার পেশাদার জীবনের একঘেয়েমিও গ্রাস করছিল আমাদের।’
এভাবেই তাঁদের যৌথ গানের যাত্রা ‘লোপা-জয় এক্সপ্রেস’ শুরু হয় জানিয়ে এই সুরকার আরও লিখেছেন, ‘গত বছর মে মাসে টরন্টো শহর থেকে আমাদের এই সাধের ডাবল ইঞ্জিন গাড়ি “লোপা-জয় এক্সপ্রেস” যাত্রা শুরু করে। এই সফর রোজকার জন্য নয় একদমই। কখনো বছরে দুবার, কখনো–বা দুই বছরে একবার। পুরোটাই রয়েসয়ে আর দুলকি চালে। পছন্দের গানবাজনা, আড্ডা আর সঙ্গে গান তৈরির গল্প—এই হলো অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য। সেই কারণে মঞ্চ মাঝেমধ্যে হয়ে ওঠে আমাদের বাড়ির বৈঠকখানা। অতি ভাগ্যবানরা সাক্ষী হয়ে যান দাম্পত্য কলহের।
এই অনুষ্ঠানে আমাদের নিজেদের একসঙ্গে করা কাজই থাকে সিংহভাগ। এ ছাড়া লোপা যখন-তখন তাক থেকে নামিয়ে ধুলা ঝেড়ে গেয়ে ফেলতে পারে বহুদিনের না গাওয়া কোনো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় অথবা শঙ্খ ঘোষ। আমার গিটারে বেজে ওঠে রাগ যোগ অথবা ঝিঁঝিটের আলাপ। কখনো বা গেয়ে উঠি একসঙ্গে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি আমাদের রেলগাড়ি আবার চড়তে বেরিয়েছিল। লন্ডন আর মিউনিখ—এই দুটো স্টেশনে স্টপেজ দিয়ে দুই দিন আগে দেশে ফিরেছে। দুটি শহরেই ভালোবাসা, সম্মান আর আতিথেয়তায় আমরা আপ্লুত। যেভাবে তিন দশক আগে রেকর্ড করা “বেণিমাধব”–এর জন্য লোপাকে এখনো মানুষ দাঁড়িয়ে উঠে পাঁচ মিনিট ধরে হাততালি দেয় আর “বৃষ্টি পায়ে-পায়ে” -তে আমার সঙ্গে গলা মেলায় সারা প্রেক্ষাগৃহ—কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে আসে। মনে হয়, এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে আমাদের।’
‘লোপা-জয় এক্সপ্রেস’-এর পরের কর্মসূচি নিয়ে জয় আরও লিখেছেন, ‘“লোপা-জয় এক্সপ্রেস” এখন আপাতত কার শেডে। আমরা আগামী কয়েক মাস যে যার জমিতে চাষ করব, ফসল ফলাব। পরবর্তী সফরের দিন ঠিক হলে অবশ্যই জানাব। এবারের কিছু ছবি ভাগ করে নিলাম আপনাদের সঙ্গে। ভালো থাকবেন সক্কলে।’