সুইফটের কনসার্ট ট্যুর কেন এত জনপ্রিয়তা পেল
গত রোববার রাতে ভ্যাঙ্কুভারে যখন শেষের বাঁশি বেজেছিল, আবেগতাড়িত হন টেলর সুইফট। ২০ মাস ধরে চলা তাঁর এই ‘দ্য ইরাস ট্যুর’ অনেক কারণেই ঐতিহাসিক। ৫ মহাদেশের ৫৩টি শহরে ১৪৯টি শো—এমন একটি কনসার্ট ট্যুরের সমাপ্তিতে কি আবেগতাড়িত না হয়ে পারা যায়! গায়িকা এই ট্যুরে ছুটে বেড়িয়েছেন টোকিও, প্যারিস থেকে বুয়েনস এইরেস। ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় শুরু হয়েছিল যে সফর, গত রোববার রাতে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শেষ হয়েছে সেটা। অনেক রেকর্ডের ওলট–পালট করে দ্য ইরাস ট্যুর পরিণত হয়েছে সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল কনসার্ট ট্যুরে।
একনজরে
২ বিলিয়ন ডলারের টিকিট বিক্রি
কনসার্ট নিয়ে লেখা দ্য ইরাস ট্যুর বুক প্রথম সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ১৬ হাজার কপি
সর্বকালের সবচেয়ে আয় করা কনসার্ট ট্যুর
ট্যুরের কনসার্ট সিনেমা ব্যবসা করেছে ২৬১.৭ মিলিয়ন ডলার, যা সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল কনসার্ট সিনেমা
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রেকর্ড টিকিট বিক্রি, জাস্টিন ট্রুডো, প্রিন্স উইলিয়ামের মতো রাজনীতিবিদের উপস্থিতি, টম ক্রুজের নাচ ছাড়াও টেলর সুইফটের এই কনসার্ট ট্যুর নানা কারণেই অভূতপূর্ব। পপ কালচারে এমন প্রভাব বিস্তারকারী কনসার্ট অন্তত চলতি শতকে দেখা যায়নি।
সুইফটের এই ট্যুর কনসার্টের কারণে ভূমিকম্প হয়েছে, মিউনিখে কনসার্টের সময় একটি পাহাড়ে বসে গান শুনেছেন ৪০ হাজার শ্রোতা; এমন দৃশ্য সহসা দেখা যায়নি। লস অ্যাঞ্জেলেসের গ্র্যামি মিউজিয়ামের প্রধান কিউরেটর জাসেন এমোনস সুইফটের কনসার্ট নিয়ে এই উন্মাদনাকে তুলনা করেছেন এলভিস প্রিসলি, মাইকেল জ্যাকসন, দ্য বিটলস বা ম্যাডোনাকে নিয়ে উন্মাদনার সঙ্গে।
সুইফটের এই কনসার্ট ট্যুরের ঘোষণা আসে ২০২২ সালের শেষের দিকে। তখন থেকেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় টিকিট নিয়ে, একপর্যায়ে সার্ভার ক্রাশের ঘটনাও ঘটেছে। বেশির ভাগ কনসার্টের টিকিট শেষ হয়ে গেছে এক বছর আগেই। এই কনসার্ট ট্যুর বিশ্বজুড়ে সুইফট–ভক্তদের মধ্যে আলাদা উন্মাদনা তৈরি করেছিল আর পরিচয় করিয়ে দিয়েছে একদল গায়িকার পাঁড় ভক্তের সঙ্গে। পরে যাঁদের পরিচিতি হয়েছে ‘সুইফটিজ’ নামে।
তাঁর শ্রোতারা বলছেন, এই ট্যুর তাঁদের মধ্যে সৌহার্দ্য তৈরিতে সাহায্য করেছে। কনসার্টে নতুন নতুন গান নিয়ে হাজির হয়ে অনেকবারই চমকে দিয়েছেন সুইফট, সঙ্গে মঞ্চের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তো ছিলই।
তবে সব ছাপিয়ে একসঙ্গে সুইফটের গান শোনার তুলনা হয় না, বলছেন ভক্তরা। সুইফটের কনসার্টমুখী ভক্তদের এই স্রোতকে ব্রিটিশ দার্শনিক সাইমন ক্রিচলি তুলনা করেছেন তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে। ভ্যারাইটি সাময়িকী এই ট্যুর সম্পর্ক মন্তব্য করে, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড গ্রেটেস্ট কমিউনিটি অর্গানাইজার’।
এই ট্যুর নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনা কতটা ছিল, সেটা কনসার্ট নিয়ে নির্মিত সিনেমা থেকেই অনুমান করা যায়। গত বছরের অক্টোবরে মুক্তি পাওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলারের সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে ২৬১.৭ মিলিয়নের বেশি ব্যবসা করে। কনসার্ট ট্যুর নিয়ে যে বই প্রকাশ করেছেন সুইফট, সেটা নিয়েও একই রকম আগ্রহ দেখে গেছে ভক্তদের।
আবেগের বাইরে গিয়ে অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ দেখলেও আপনি চমকে যাবেন।
এই ট্যুরে যে ৫৩টি শহর ঘুরেছেন সুইফট, সব শহরের অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। সফরের শেষ পর্যায়ে কানাডা সফর করেন সুইফট। ভ্যাঙ্কুভারে শেষ করার আগে গত ১৪ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত টরন্টোতে ছয়টি শো করেছেন গায়িকা। বিবিসি বলছে, পর্যটনসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মিলিয়ে এই ছয়টি শো কানাডার অর্থনীতিতে বাড়তি ১৯৯ মিলিয়ন ডলার যোগ করেছে।
এই ট্যুর টেলর সুইফটের জন্যও বিশেষ কিছু। দ্য ইরাস ট্যুর বুক-এ তিনি লিখেছেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। এই ট্যুরে যা হয়েছে, তা কেউ ভাবেননি। একটা ট্যুর কীভাবে সারা দুনিয়াকে একত্র করে, সেটাই এবার দেখলাম।’
দ্য ইরাস ট্যুর শেষ হওয়ার আগে থেকেই ভক্তদের দাবি ছিল, দ্রুতই এমন ট্যুর আবার আয়োজনের। সুইফট অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি একই জিনিস দুবার করতে পছন্দ করেন না; নতুনভাবে ভক্তদের কাছে ফিরবেন। তা ছাড়া তিনি বড্ড ক্লান্ত। টানা ২০ মাস ছুটে চলার পর একটু বিশ্রাম তো তিনি পেতেই পারেন।