স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর ‘কবির মৃত্যু’
আগামীকাল আসছে শহরতলী ব্যান্ডের নতুন গান ‘কবির মৃত্যু’। গানটির পেছনের গল্প নিয়ে লিখেছেন ব্যান্ডের ভোকাল মিশু খান
‘যুগ যুগ ধরে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আদৌ কি মানুষের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত হয়েছে? কেবল কথা বলার অধিকার পেতেই পৃথিবীজুড়ে খোয়া গেছে অগণিত মানুষের প্রাণ। সম্পদ ও ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখা শাসকশ্রেণি বরাবরই মানুষের কথা বলার অধিকারকে দমিয়ে রেখেছে। কেননা তারা বেশ ভালো করেই জানে যে মানুষের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত হলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তাদের ক্ষমতাবলয়। কিন্তু মানুষ কি আদৌ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়? নেয় না বোধ হয়। তাই হয়তো সব দেশের সব যুগের ইতিহাসেই শাসক ও শোষিত এই দুই শ্রেণির উপস্থিতি যুগপৎ।
‘১৯৩৬ সালের ১৯ আগস্ট সত্য উচ্চারণের জন্য কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোর্কাকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল স্পেনের স্বৈরশাসকের হাতে। ফ্রাঙ্কো বাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁজরা হয়েছে তাঁর শরীর, অথচ তাঁর কণ্ঠস্বর স্পেনের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে। তাঁর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে পৃথিবীর আপামর শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর। তাঁরই স্মরণে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন এই কবিতা, “কবির মৃত্যু”। আমাদের এই গান মূলত তৈরি হয়েছে সুনীলের সেই কবিতাকে কেন্দ্র করেই।
‘গানটি এ সময় আত্মপ্রকাশ করলেও এর জাল বুনতে শুরু করেছিলাম ২০১৪ সালের কোনো এক সময় থেকে। করপোরেট জীবনের পাশাপাশি পুরো চিত্রপটটি কথায় ও সুরে গুছিয়ে আনতে সময় লেগেছিল বহু বছর, এবার মূল সংকটে পড়ি গানটিকে মিউজিক্যাল কম্পোজিশনে আনতে!
‘সর্বসাধারণ শ্রোতাদের কাছে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করার জন্য এর আয়োজন, সচরাচর আয়তনকে ছাপিয়ে দাঁড়ায় ১৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে, তবু অপূর্ণতা বোধ করছি এর চিত্রায়ণে তুলে ধরতে, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে যে বাংলাদেশকে পার করতে হয়েছে অজস্র বন্ধুর পথ। গণতন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে হরহামেশা বেচাকেনা
চলেছে স্বদেশ ও গণমানুষের অধিকার। আশা করি শত সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতার পরও দর্শক–শ্রোতারা গানটি শুনে নিজের মনে একটি সত্য চিত্রপট খুঁজে পাবেন।
‘শহরতলী বরাবরই গান ও কবিতার সম্মিলনে অনুবাদ করেছে গণমানুষের কণ্ঠস্বর।
শহরতলীর বার্তা তনু-ফেলানী হয়ে পৌঁছে গেছে কাঁটাতারের ওপারে, যেখানে মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ নেই। এই গান যখন তৈরি হচ্ছিল, বাংলাদেশকে তখন গ্রাস করে নিয়েছিল ভয়ংকর এক স্বৈরশাসকের অপছায়া।
মানুষ হারিয়েছিল তার কথা বলার অধিকার। দেশ পরিণত হয়েছিল তৎকালীন স্পেনের মতো এক নরকরাজ্যে, যেখানে অহরহ মৃত্যু দেখতে দেখতে মানুষ ভুলে গিয়েছিল মৃত্যুতে আলোড়িত হওয়ার বোধ। তারপর দেশের আপামর জনসাধারণ একযোগে রুখে দাঁড়িয়েছিল ভয়ংকর সেই স্বৈরশাসকের বিপরীতে। স্বদেশ আবারও কলঙ্কমুক্ত হয়েছিল।
‘শহরতলী আবারও আস্থা রাখতে চায় মানুষের ওপর। শহরতলী বিশ্বাস করে, পথ যত বন্ধুর হোক না কেন, অন্ধকার যত গাঢ় হোক না কেন, মানুষ ঠিকই খুঁজে নেবে সত্য ও সুন্দরের পথ।’