সন্ধ্যাতারা: প্রেম আর ব্যাকুলতার গান
‘গানটির জন্ম ২০১৯ সালে। সুনিধি একদিন আমাকে জানালেন যে ইমন রাগের ওপর ওস্তাদ বিলায়েত হোসেন খানের একটা খেয়াল আছে, সেই গানটা তিনি করছেন, মিউজিকটা আমাকেই করতে হবে। ব্যস, তারপর শুরু হলো ‘‘সন্ধ্যাতারা’’ গানের পথচলা।’
সম্প্রতি প্রকাশ হওয়া কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় মৌসুমের গান ‘সন্ধ্যাতারা’ সম্পর্কে এভাবেই বললেন সঙ্গীতায়োজক ও সুরকার অদিত রহমান। কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম মৌসুমের ‘নাসেক নাসেক’ গানটিরও সঙ্গীতায়োজক ছিলেন অদিত।
৮ জুলাই কোক স্টুডিও বাংলার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে অবমুক্ত হয় ‘সন্ধ্যাতারা’। গানটি যৌথভাবে গেয়েছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব ও সুনিধি নায়েক। সন্ধ্যাতারা গানটিতে বন্দিশ ও পপ গানের ফিউশন করা হয়েছে, এর সঙ্গে আছে অর্ণবের নিজের করা ইডিএমের (ইলেকট্রনিক ড্যান্স মিউজিক) আমেজ। বন্দিশ সাধারণত হিন্দি ও উর্দুতে লেখা হয়। এই প্রথমবারের মতো বাংলায় অনুবাদ করে বন্দিশ কোনো গান পরিবেশন করা হয়েছে।
ইমন রাগের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ‘ম্যায় ওয়ারি ওয়ারি জানুগি’ শিরোনামের বন্দিশটিকে এখানে বাংলায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আগ্রা ঘরানার আসল বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা হয়েছে। মূল গানটির সুর করেছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ওস্তাদ বিলায়েত হোসেন খান। আর একে বাংলায় রূপান্তর করেছেন দিবস কৃষ্ণ বিশ্বাস। বন্দিশ অর্থ ‘এক সুতোয় গাঁথা’। আর ‘সন্ধ্যাতারা’এমন একটি বন্দিশকে বাংলাদেশি ধরনে প্রকাশ করারই একটি প্রচেষ্টা।
কোক স্টুডিও বাংলার গানটিতে শাস্ত্রীয় ও লোকজ বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের চমৎকার মিশ্রণ ঘটেছে। চমৎকার ফিউশনটির সুর, সঙ্গীতায়োজন ও প্রযোজনা করেছেন অদিত রহমান। আর গানটির ‘বেলা হারায়’ অংশটির সুর করেছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব।
অদিত রহমান জানান, ‘সুনিধি নায়েক বন্দিশের মাধ্যমে তাঁর দৃষ্টিকোণ প্রকাশ করেন আর অর্ণব তাঁর সিগনেচার পপ স্টাইলের মাধ্যমে প্রেমের ব্যাপারে বিপরীত মতামত ব্যক্ত করেন। সন্ধ্যাতারা এই দুই বিপরীত মেরুকে একত্রিত করেছে। প্রেম সম্পর্কে এই বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি মঞ্চের দুটি ভিন্ন অংশের মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতাদের সামনে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়।’
‘সন্ধ্যাতারা’ প্রসঙ্গে সুনিধি নায়েক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গানটি প্রেমের গভীর অনুভূতি এবং রোমান্টিক মনের সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাকুলতা তুলে ধরে। শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন শিল্পী হিসেবে দর্শক-শ্রোতাদের সামনে এমন একটা গান নিয়ে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।’
অর্ণব বলেন, ‘এই গানে ফিউশনের মাধ্যমে অসাধারণভাবে শাস্ত্রীয় ও আধুনিক গানের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সুরের সঙ্গে আধুনিক বিট আর ইলেকট্রনিক সাউন্ডস্কেপ এখানে এক জায়গায় এসে মিলেছে। ফলে দুই ধারার গানকেই সম্মান জানানোর মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন কিছু সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দর্শক-শ্রোতারা প্রতিবারের মতো এবারও গানটি খুব উপভোগ করছেন।’
গানটির ভিডিও পরিচালক ছিলেন কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এই গানে অর্ণব ছিলেন রক ও পশ্চিমা অংশে, অন্যদিকে সুনিধি ছিলেন রাগ ও প্রাচ্য অংশে। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে আমাদের স্টেজ সাজাতে হয়েছে। সুনিধির অংশের প্রাচ্যদেশীয় স্থাপত্যশৈলী, চিত্রকর্ম ও সোনালি আলো শাস্ত্রীয় বন্দিশের বিশুদ্ধতা তুলে ধরে। আর অর্ণবের অংশটি ছিল জনপ্রিয় সংস্কৃতি বা পপ কালচারের উপাদান দিয়ে সাজানো। দুই শিল্পীর পরিবেশনার মাধ্যমে আধুনিক পপের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতের মিশেল ঘটেছে, যা দর্শক-শ্রোতাদের রিয়েল ম্যাজিকের স্বাদ দিয়েছে।’