ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের ফেসবুক পেজে চিরকুটের ‘জাদুর শহর’

চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরা
ছবি : চিরকুটের ফেসবুক পেজ

‘আমাদের একটা খবর শুনেছেন? কী খবর? ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের ফেসবুক পেজ থেকে আমাদের গান শেয়ার করছে। কোন গান? “জাদুর শহর”। আপনাকে লিংকটা পাঠাচ্ছি।’ এভাবেই কথা হচ্ছিল চিরকুট ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য পাভেল আরীনের সঙ্গে। তাঁর মাধ্যমে জানা গেল, চিরকুট ব্যান্ডের ‘জাদুর শহর’ গানটি ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ কর্তৃপক্ষ তাদের ৬০ মিলিয়ন অনুসারীর ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছে।

চিরকুট ব্যান্ডের খবরটি দেখার পর অভিনন্দন জানাতেই কথা প্রসঙ্গে পাভেল জানান, তিনিও খবরটা জানতেন না। ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে খবরটি জানান। এরপর তিনি ব্যান্ড মেম্বার শারমীন সুলতানা সুমীর সঙ্গেও বিষয়টি শেয়ার করেন। ততক্ষণে তিনিও ভক্ত–শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে জেনেছেন বিষয়টি।

পাভেল বললেন, ‘নিঃসন্দেহে আমাদের ব্যান্ডের জন্য এটা দারুণ একটা সংবাদ। আমাদের সবার জন্য ভীষণ অনুপ্রেরণার। যে গান দেশ–বিদেশের বাঙালিদের প্রিয় তালিকায়, তা আজ ফিফা কর্তৃপক্ষও তাদের পেজে জায়গা করে দিয়েছে, এ আনন্দ প্রকাশের ভাষা জানা নেই।’

চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরা
ছবি : চিরকুটের ফেসবুক পেজ

পাভেলের কথার সূত্র ধরে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের ফেসবুক পেজে আজ শনিবার সকালে ঢুঁ মেরে দেখা যায়, ১৭ ঘণ্টা আগে ‘জাদুর শহর’ গানটি রিলস আকারে প্রকাশিত হয়। বাংলায় ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘ছোট্ট ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শনী এখন আমাদেরই মাঝে।’ পোস্টটিতে ৫০ হাজারের মতো রিঅ্যাকশন এসেছে। মন্তব্য করা হয়েছে ৫ হাজারের বেশি ও পোস্টটি শেয়ার হয়েছে সাড়ে ৪ হাজারের মতো।

‘জাদুর শহর’ গানটির কথা যৌথভাবে লিখেছেন আনন্দ ও সুমী। সংগীত পরিচালনা করেছেন সুমী, পিন্টু ঘোষ ও ইমন চৌধুরী। সাউন্ড প্রডিউসার হিসেবে ছিলেন পাভেল আরীন। ‘জাদুর শহর’ টিমের পিন্টু ঘোষ ও ইমন চৌধুরী এখন চিরকুট ব্যান্ডে নেই। তাঁরা তাদের মতো করে সংগীতে একক ক্যারিয়ার গড়েছেন।

এক দশক আগে প্রথম আলোর ফটোশুটে চিরকুট ব্যান্ডের তখনকার সদস্যরা

চিরকুট ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য সুমী জানালেন, ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের ফেসবুক পেজে যে গানটা শেয়ার হয়েছে, আমরা এটা জেনেছি আমাদের ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফোন, টেক্সট থেকে। পরে দেখলাম সত্যি।’ সুমী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, শুনে আসছি, বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই ফিফার কথা। সেখানে তাঁদের অফিশিয়াল পেজে একটা বাংলা গান গেছে, এটা ভালো লেগেছে। এভাবে আরও একবার “জাদুর শহর” গানটার খবর সবার সামনে যখন এল, তখন দেখলাম আমাদের চেয়ে ভক্তদের আনন্দটা বেশি। ভক্তদের এই ভালো লাগা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার।’

কথায় কথায় সুমী বলেন, ‘আমরা আমাদের ব্যান্ড থেকে যে গানগুলো বানিয়েছি, নিজেদের ভালোবাসা থেকে, আবেগ থেকে, সেই গানের যখন আন্তর্জাতিক উপস্থাপন হতে দেখি, ভালো লাগে আসলে। একটা ব্যান্ড, একটা গান, একটা দীর্ঘ ভ্রমণ—এটা অনেক মানুষের শ্রম, মেধা এবং সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় হয়। “জাদুর শহর” গানটি লিখেছি আনন্দ আর আমি। সুর করেছিলাম পিন্টু, আমি আর ইমন। সাউন্ড প্রযোজক ছিল পাভেল। আতিক (নুরুল আলম আতিক) ভাইয়ের ভাবনায় করা হয়েছিল গানটা। আমরা সব সময় আমাদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করেছি। সৃষ্টিকর্তা চায় তো যত দিন সম্ভব করে যাব। সেসবের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি, এটা ভালো লাগার।’

নারীপক্ষ-এর ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে চিরকুট ব্যান্ড, এ বছরের ৮ মার্চ ঢাকার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে
ছবি: প্রথম আলো

সুমী আরও বলেন, ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বাংলা গান, সবাই বলছে “আমাদের গান”। ব্যাপারটাতে আমাদের গান যাঁরা ভালোবাসেন তাদের যেমন লাগছে, আমাদেরও তেমন লাগছে। ভালো লাগছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানেও অনেক গানের পাশাপাশি এই গান ছাত্রদের সাহস জুগিয়েছে। সত্যিকারের প্রয়োজনে, দেশের সুনামে নিজেদের গান থেকে এর চেয়ে আর বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের যাঁরা ভালোবাসেন, সবার কাছে কৃতজ্ঞ। ভালোবেসে সব সময় পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞ।’

১১ বছর আগে পরিচালক নুরুল আলম আতিকের ‘জাদুর শহর’ ধারাবাহিকে ‘জাদুর শহর’ শিরোনামের গানটি করে চিরকুট। তার বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই চিরকুটের পথচলা হলেও ‘জাদুর শহর’ গান দিয়ে দলটি শ্রোতাদের কাছে বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে। দেশের সব জায়গায় বাজতে থাকে চিরকুটের গানটি।