ফেরাটা রাঙিয়ে তুললেন সেলিন ডিওন

প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী আয়োজনে গাইছেন সেলিন ডিওনরয়টার্স

‘আমি যদি দৌড়াতে না পারি, হাঁটব। হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দেব। তবু আমি কোনোভাবেই থামতে চাই না।’ গত জুনে অ্যামাজনে মুক্তিপ্রাপ্ত আই অ্যাম: সেলিন ডিওন তথ্যচিত্রে বলেছিলেন বিশ্বসংগীতের মহাতারকা সেলিন ডিওন।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে জটিল স্নায়ুরোগ স্টিফ পারসন সিনড্রোমে আক্রান্তের খবর দেন ৫৬ বছর বয়সী এই গায়িকা। এর পর থেকে ডিওনের চেনা দুনিয়া বদলে গেছে। রোগের প্রভাবে গাইতে পারতেন না তিনি। এমনকি হাঁটতেও রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে।

জাতিসংঘের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তথ্যমতে, স্টিফ পারসন সিনড্রোমের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই। তবে ডিওন উদ্যম হারাননি। থেরাপির ফাঁকে গানের চর্চা চালিয়ে গেছেন।

শরীরের সায় মিলছিল না। তবু মঞ্চে ফিরতে মরিয়া ছিলেন ডিওন। তিনি ফিরলেনও। রোগ সামলে গত শুক্রবার মঞ্চে ফিরলেন এই কানাডিয়ান গায়িকা।

গাইছেন সেলিন ডিওন
রয়টার্স

কয়েক দিন ধরে চর্চা চলছিল, প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী আয়োজনে গাইবেন ডিওন। তবে অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খোলাসা করেনি। দর্শকদের জন্য চমক হিসেবে রাখতে চেয়েছিল।

শুক্রবার আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে অলিম্পিকের উদ্বোধনী আয়োজনে চমক নিয়েই হাজির হলেন তিনি। সাদা রঙের গাউনে অভিজাত লুকে মঞ্চে আসেন ডিওন। পাক্কা চার বছর পর মঞ্চে ফিরলেন তিনি। ফেরাটাকে রাঙিয়ে তুললেন গ্র্যামিজয়ী গায়িকা।

২০০৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকেও গেয়েছেন সেলিন ডিওন
ভিডিও থেকে

তাঁকে শুনতে বছরের পর বছর আকুল হয়ে অপেক্ষা করছিলেন ভক্তরা। তাঁকে মঞ্চে পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন শ্রোতারা। ডিওনকে অভিবাদন জানান দর্শকেরা।

২০২০ সালের মার্চে নিউ জার্সিতে শেষবারের মতো কনসার্ট করেন তিনি। মাঝে করোনাভাইরাস, এরপর জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আর মঞ্চে ওঠেননি।

মঞ্চে এসে ফরাসি সংগীতশিল্পী এদিথ পিয়াফের বিখ্যাত গান ‘হিম টু লাভ’ পরিবেশন করেন ডিওন। গায়কির মাদকতায় শ্রোতাদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছেন।

প্যারিস সেলিন ডিওন
রয়টার্স

সাধারণ মানুষ থেকে প্রধানমন্ত্রী—ডিওনের গানের অনুরাগীদের তালিকায় কে নেই! ডিওনকে মঞ্চে দেখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও আপ্লুত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ডিওন একজন কানাডিয়ান আইকন, দুর্দান্ত শিল্পী। তোমাকে মঞ্চে দেখে খুব ভালো লাগছে।’

ডিওনকে শুনে ইতালিয়ান সংগীতশিল্পী লরা পৌসিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় সেলিন ডিওনকে শুনতে শুনতে আমার চোখ অশ্রুতে ভরে আসে। আমি সত্যিই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।’

শো শেষে এক্সে ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ গায়িকা ডিওন লিখেছেন, ‘আজ রাতে প্যারিস অলিম্পিকে গান গাইতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। প্যারিস আমার প্রিয় শহর। এই শহরে ফেরাটা আমার জন্য সব সময় আনন্দের।’

অলিম্পিকে অংশ নেওয়া ক্রীড়াবিদদের উদ্দেশে ডিওন লিখেছেন, ‘তোমরা নিজের স্বপ্নের দিকে মনোযোগ দাও। মেডেল পাও কিংবা না পাও, নিজের পরিশ্রমের জন্য তোমরা গর্বিত বোধ করতে পারো। আমরা জানি, তোমরা সেরাদের সেরা হওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছ। এগিয়ে যাও, হৃদয় দিয়ে তোমাদের পাশে আছি।’

ফ্রান্সের মানুষের মধ্যে ডিওনের জনপ্রিয়তা একটু বেশিই
রয়টার্স

দুনিয়াজুড়েই ডিওনের খ্যাতি রয়েছে। তবে ফ্রান্সের মানুষের মধ্যে ডিওনের জনপ্রিয়তা একটু বেশিই। ফ্রেঞ্চ ভাষায়ও গান করেছেন তিনি। ফলে প্যারিসে নামার পর তাঁর হোটেলের সামনে ভিড় করতে থাকেন ভক্তরা।

উদ্বোধনী আয়োজনে গেয়েছেন পপ তারকা লেডি গাগাসহ আরও কয়েকজন।

গত ২৫ জুন অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে ডিওনকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র আই অ্যাম: সেলিন ডিওন। এতে স্টিফ পারসন সিনড্রোমের সঙ্গে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাসহ জীবনের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।

সেলেন ডিওন
রয়টার্স

চার দশকের বেশি সময় ধরে গান গাইছেন সেলিন ডিওন, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গায়িকাদের একজন তিনি। এ পর্যন্ত তাঁর অ্যালবাম ২৫০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে আছে ‘দ্য পাওয়ার অব লাভ’, ‘থিঙ্ক টোয়াইস’, ‘বিকজ ইউ লাভড মি’, ‘ইটস অল কামিং ব্যাক টু মি নাউ’, ‘দ্যাটস দ্য ওয়ে ইট ইজ’, ‘অ্যাই অ্যাম অ্যালাইভ’ ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন।

আরও পড়ুন