জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তার জন্য ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ শীর্ষক কনসার্টে গাইবেন জনপ্রিয় পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে কনসার্টটি আয়োজন করছে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম। ইতিমধ্যে কনসার্টের টিকিট বিক্রি শুরু করেছে আয়োজকেরা। এই কনসার্ট থেকে আয় হওয়া অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ দেওয়া হবে। জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ভূমিকার কারণে তাঁদের প্রতি সম্মান রেখে গতকাল ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহর থেকে টিকিট কেনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দিচ্ছে আয়োজকেরা।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাদেকুর রহমান, হাছিবুল হাসান, মহিউদ্দিন মুজাহিদ। আরও উপস্থিত ছিলেন নূর–এ আলম চৌধুরী, ওয়াহিদ উজ জামান, শাদমান নাজিব, রাইয়ান রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে কনসার্টের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। প্রথমত, ‘ভিআইপি’ টিকিটের মূল্য ১০ হাজার টাকা। এই টিকিটে ক্রেতারা মঞ্চের সামনে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ১৬ ডিসেম্বর ‘বিজয় দিবস’ স্মরণে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬ শতাংশ ডিসকাউন্ট (ছাড়সহ ৮ হাজার ৪০০ টাকা) দেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, ‘ফ্রন্ট রো’ টিকিটের মূল্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এই টিকিটে ক্রেতারা সামনের সারি থেকে কনসার্ট উপভোগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে গণ–অভ্যুত্থানের বছর ‘২০২৪ সাল’ স্মরণে শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ শতাংশ ডিসকাউন্ট (ছাড়সহ ৩ হাজার ৪২০ টাকা) দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, ‘জেনারেল’ টিকিটের মূল্য ২ হাজার ৫০০ টাকা। এ টিকিটে ক্রেতারা পেছনের সারি থেকে কনসার্ট উপভোগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ‘৩৬ জুলাই’ স্মরণে শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৬ শতাংশ ডিসকাউন্ট (ছাড়সহ ১ হাজার ৬০০ টাকা) দেওয়া হচ্ছে।
টিকিট কেনার সময় শিক্ষার্থীদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া ই–মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করতে হবে (যেসব শিক্ষার্থীর এ ই–মেইল নেই, তাঁরা অন্যদের সহযোগিতায় টিকিট কাটতে পারবেন)। রাজধানী ঢাকার পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৬ ডিসেম্বর থেকে বুথ বসানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতেও একটি বুথ আছে। এসব বুথ থেকে সহযোগিতা নিয়ে অথবা নিজেরাই অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
৯ ডিসেম্বর রাতে কনসার্টের টিকিট বিক্রি শুরু হয়, যা চলবে ১৯ ডিসেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত। এ কনসার্টে রাহাত ফতেহ আলী খান মূল আকর্ষণ হিসেবে তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করবেন। এ ছাড়া কয়েকটি দেশি ব্যান্ড আর্টসেল, চিরকুট, আফটারম্যাথ ও সিলসিলার শিল্পীরা পারফর্ম করবেন। এর বাইরে জনপ্রিয় র্যাপ সংগীতশিল্পী সেজান ও হান্নানের পরিবেশনাও দর্শক মাতাবে। সংগীত ছাড়াও কনসার্ট ইভেন্টে জুলাই বিপ্লব-সংক্রান্ত গ্রাফিতি প্রদর্শনী, মঞ্চনাটক, মুগ্ধ ওয়াটার জোনসহ বিভিন্ন কর্নার থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কনসার্টের দিন জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাহাঙ্গীর গেট এবং জিয়া কলোনির গেট বেলা ২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় গেট দিয়ে শুধু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, রোগীবাহী গাড়ি, বিদেশগামী যাত্রী এবং জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করা যাবে। এ ছাড়া একই দিনে যানজটে জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোল ফ্রি রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এদিন বেলা ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বনানী, আর্মি গলফ ক্লাব, এয়ারপোর্ট, কুড়িল বিশ্বরোড—এই চারটি প্রবেশপথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন টোল ফ্রি প্রবেশ করতে পারবে। তবে মোটরসাইকেল এই সুবিধার আওতাভুক্ত থাকবে না।
কনসার্টের দিন ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে স্টাফ রোড রেলগেট থেকে নেভি হেড কোয়ার্টার্স পর্যন্ত উত্তরা থেকে মহাখালী অভিমুখী রাস্তাটি বন্ধ থাকবে। তবে বিপরীতমুখী রাস্তা খোলা থাকবে। এ সময় যানজটের দুর্ভোগ এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করেছে আয়োজকেরা।