বন্ধু খালিদের মৃত্যু, ফাহমিদা নবীর উপলব্ধি
একসঙ্গে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। সেই সূত্রে তাঁরা ছিলেন বন্ধু। ছিলেন ভালো সহশিল্পী। যে কারণে খুব কাছ থেকে গায়ক খালিদকে দেখেছেন গায়িকা ফাহমিদা নবী। পরবর্তী সময়ে তাঁরা একসঙ্গে গানও করেছেন। গতকাল খালিদ মারা যান। তাঁর প্রয়াণে ভক্তদের অজানা অনেক স্মৃতি ফেসবুকে ভাগাভাগি করলেন ফাহমিদা নবী।
খালিদকে নিয়ে ফাহমিদা নবী লিখেছেন, ‘সে গান গাইত সরলভাবে। জীবনের সরলতার আদলে। প্রাণবন্ত থাকত, চাইত হাসতে। কিন্তু প্রাণহীনতার আরেকটা দিক দেখেছি, যার কারণে স্যাড রোমান্টিক গানগুলো শ্রোতার হৃদয়ে একেকটা সুপারহিট গানের তালিকায় সুখের অনুভূতি। আমার আর খালেদের বেশ কয়েকটা ডুয়েট গান হয়েছে। “নিছক স্বপ্ন” অ্যালবামে। “ঘুমাও” গানটা তো অনেকের প্রিয় একটি গান। খালিদ বলত, নুমা, তুমি কিন্তু বেশ ভালো গেয়েছ! এখনো মনে পড়ে।’
খালিদ কিছুটা আড়ালে থাকলেও ছিলেন খোলামনের। গানপাগল মানুষ। তাঁর মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না। সর্বশেষ তাঁরা একসঙ্গে আবার দ্বৈত গান করতে চেয়েছিলেন। ‘এই তো সেদিনই কথা হলো, আরও ডুয়েট গান করতে চায়। বললাম করব। আমেরিকায় ওর ছেলের গান শুনেছি বলে খুশি হলো। দেখা হবে সে কথাও হলো। ওর অকালে যাওয়া খুব কঠিন করে দিল আমাদের সবাইকে। মানে আমাদের শিল্পীদেরকে। জীবনের প্রতি উদাসীনতা কেউ রাখবেন না, ছোট–বড় সব শিল্পীকে বলছি। নিজেকে ভালোবাসুন। আমাদেরকে আমাদেরই দেখতে হবে’—স্মরণ করে লিখেছেন ফাহমিদা।
খালিদের মৃত্যুকে ঘিরে সহকর্মীদের বলতে চান নিজের মতো ভালো থাকার কথা। হতাশা নয়, আনন্দের বাঁচার কথা। ফাহমিদা নবী লিখেছেন, ‘সত্যি বলতে কি, গান এখন হয় না। তাই জীবন নিয়ে অন্য কিছু ভাবুন। যেটুকু কাজ হয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট মনে করে অন্য কিছু ভাবুন, কাজ করুন কিন্তু হতাশাগ্রস্ত হবেন না। গানের জন্য ভালোবাসা, ভাবনা, সুর, কথার গভীরতা লাগে, যা এখন করপোরেট কালচার! সেখানে গান হয় না, হয় অ্যাড মার্কেটিং! সেটাকে গান বলা যায় না!’
গত সপ্তাহে গায়ক সাদি মহম্মদের হঠাৎ চলে যাওয়া ব্যথিত করেছে এই গায়িকাকে। এর মধ্যে খালিদের এভাবে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে ফাহমিদা নবী লিখেছেন, ‘সাদি ভাইয়ের চলে যাওয়া আর খালিদের মৃত্যু আমাকে আরও বুঝিয়ে দিয়েছে, শ্রোতা যে আসনে কাউকে বসায়, তাঁর জন্য বহুদিন কাজ করতে হবে না, একটা ভালো গানই হয়তো যথেষ্ট মনে রাখার জন্য, ভালোবাসার জন্য। হৃদয়ে আসন তৈরি করার জন্য।’
বর্তমান সময়ে শিল্পীদের অনেককে দেখা যায় অভিমানী হতে। অভিমান করে কেউ কেউ আড়ালে থাকেন, গান থেকে দূরে থাকেন। কারণ, প্রাপ্য সম্মানটাও অনেক সময় পান না অনেকে। কেউ যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ ক্ষেত্রে নিজেদের নিজেরাই ভালোবাসতে হবে। ফাহমিদা নবী লিখেছেন, ‘আমাদের প্রত্যেক শিল্পীকে ভালো থাকতে হবে। তাঁর নিজের জন্য, সমাজের জন্য, পরিবারের জন্য। আমাকে আমারই দেখতে হবে। অভিমান, অভিযোগ কোনো কাজে আসে না। মনে রাখতে হবে। আমাদের কষ্ট আছে কিন্তু পাশাপাশি অনুসরণীয় হয়ে বাঁচতে হবে। আমাদের দেখে অনেক কিছু শেখে অনেকেই। তাই সাহসী এবং সুস্থ হয়ে চলতে হবে। যত দিন আয়ু! খালিদের বউ শামিমা আর একমাত্র সন্তান ওদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। বন্ধু খালিদ ভালো থেকো ওপারে।’