চোখ ছলছল করে উঠল তাসরিফের, নিজেকে সামলিয়ে ভক্তদের যা বলে আশ্বস্ত করলেন
তাসরিফ খান আগেই জানিয়েছেন, তিনি ফেসিয়াল প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে তাঁর গাল, ঠোঁটের কিছু অংশ কাজ করছিল না। কারণ, নার্ভের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে মুখ কিছুটা বেঁকে যায়। বর্তমানে তাঁর মুখের বাঁ পাশটা কাজ করছে না। বাঁ চোখেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সামান্য জ্বালাপোড়া হচ্ছে। গতকাল প্রথম আলোতে রোগটির কথা প্রকাশ পেলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। ভক্তরা তাসরিফের এই খবরটি শুনে মুষড়ে পড়েন। কারণ, কেউ কেউ তাঁর রোগটি সম্পর্কে মনগড়া কথা লিখেছিলেন।
সেই প্রসঙ্গে তাসরিফ খান বলেন, ‘আমি যেটা দেখেছি, বেশির ভাগ নিউজই সঠিক। কিন্তু কয়েকটি গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমার জন্য অনেক কষ্টের। প্লিজ, আপনারা বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আত্মীয়স্বজন ও সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ভক্তরা দুশ্চিন্তা করছেন। উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন দিচ্ছেন। সবাইকে বলব, আমার জন্য দোয়া করবেন।’
পাঁচ দিন ধরে তাসরিফের মুখটা বেঁকে গেছে। গত সোমবার তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, রোগটি সম্পর্কে জানার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে যখন তাঁর কথা হয়, তখন তিনি ফিজিওথেরাপি নিতে কলাবাগান যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ‘নিয়মিত চিকিৎসকদের পরামর্শ নিচ্ছি। পঞ্চম দিনের মতো আজ ফিজিওথেরাপি নিতে যাচ্ছি নতুন একটি ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। পর্যবেক্ষণ করতে চাচ্ছি। এই কয় দিনের অভিজ্ঞতায় ফিজিওথেরাপি যেখানে সন্তোষজনক মনে হবে, এরপর সেখান থেকেই নিয়মিত এই থেরাপি নেব। সঙ্গে ওষুধও চলবে।’
তাসরিফ জানালেন, প্রতিদিন একবার করে তাঁর ফিজিওথেরাপি নিতে হবে।
মা–বাবা কিছুটা দুশ্চিন্তা করলেও তাসরিফ নিজেই তাঁদের বুঝিয়েছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, এ ধরনের ৯৫ ভাগ রোগীই সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে এক থেকে দুই মাস সময় লেগে যায়। তাসরিফ জানিয়ে রাখলেন, সব ধরনের পরিস্থিতির জন্যই তিনি তৈরি আছেন। বললেন, ‘কেউই বলেনি এটা শতভাগ ভালো হয়ে যাবে। এই রোগটা ঘাবড়ে যাওয়া মতো ব্যাপার। তবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, প্রপার ট্রিটমেন্ট হলে রোগী শতভাগ সুস্থ হয়-ই। সেই পথেই আমি হাঁটছি। ঝুঁকি নিতে চাইছি না। সবার দোয়া থাকলে হয়তো, এক মাসেও সুস্থ হয়ে যেতে পারি।’
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে ফেসবুকের লাইভে তাসরিফ বলেন, ‘আপনারা আমাকে ভালোবাসেন। আমিও আমার যেকোনো কিছু আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। আমি চাই, সবাই জানুক। এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যখন আয়নাতে নিজেকে দেখি, তখন খারাপ লাগলেও নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করি, ভালো হয়ে যাব। এখন আমি কিন্তু হাসতে পারি না। আমার মুখের এক পাশ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আমি এ–ও চিন্তা করি, অনেক মানুষের হাত-পা নেই, কত সমস্যায় রয়েছেন কত মানুষ। অথচ তারা থেমে নেই। তারা কিন্তু বড় বড় কাজ করছেন।’
তাসরিফের ব্যান্ড ‘কুঁড়েঘর’ থেকে প্রকাশিত ‘তাই তো আইলাম সাগরে’, ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’, ‘আমি মানে তুমি’সহ এমন অনেক গান ভক্ত-শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়েছে। সেই তাসরিফ ফেসবুক লাইভে ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি আমার রোগটি ভালো হয়ে যায় তাহলে খুশি হব। ভালো না হলে, ইটস...অল রাইট। কী হবে তা আল্লাহ ভালো জানেন। চিকিৎসক তার চিকিৎসা করবেন। আমার পক্ষ থেকে রোগ থেকে সেরে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে। আমার চেয়ে বিপদে থাকা মানুষও অনেক বড় কাজ করছেন। সুস্থ না হলেও আমার কোনো কিছুই থেমে যাবে না। যেভাবে কাজ করছি করে যাব।’
গতকাল ফেসবুক লাইভে ভক্তের উদ্দেশে কথা বলতে গিয়ে সদা হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণ গায়কের চোখ ছলছল করে ওঠে। কিছুটা থেমে তিনি বলতে থাকেন, ‘চেষ্টা করবেন কেউ যেন রোগটি নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ায়। আমাদের দেশে “ক” থেকে “কলা” আবার “ক” থেকে “কবুতর”—অনেক কিছু ছড়িয়ে যায়। কেউ কেউ লিখেছেন, আমার বডি প্যারালাইসিস হয়েছে। কিছু বিভ্রান্তির খবরের কারণে অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো অন্য কোনো সমস্যা। এসব আর কেউ লিখবেন না প্লিজ।’
গত বছর জুনে সিলেটের বন্যাদুর্গত বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। সেই লাইভ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সে সময় কোটি টাকার বেশি ফান্ড সংগ্রহ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘বাইশের বন্যা’ নামের একটি বই লিখেছেন তিনি। বর্তমানে নিজের গানের দল নিয়ে ব্যস্ত। পাশাপাশি মানুষের জন্য নানা কাজে দেখা যায় এই গায়ককে।