পুরনো ছবি দিয়ে ছোট ভাই শাফিনকে নিয়ে হামিনের আবেগঘন পোস্ট
ছোট ভাই শাফিন আহমেদের সঙ্গে তোলা শৈশবের কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন হামিন আহমেদ। তাঁরা পিঠাপিঠি ছিলেন; এক বছরের ছোট–বড়। ভাইয়ের সম্পর্কের বাইরে অনেকটা বন্ধুর মতো ছিলেন হামিন ও শাফিন।
২৫ জুলাই বাংলাদেশ সময় সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সংগীতশিল্পী ও বেজ গিটারিস্ট শাফিন আহমেদ। গত মঙ্গলবার বনানী কবরস্থানে বাবার কবরে সমাহিত করা হয় তাঁকে।
ভাইকে চিরবিদায় জানানোর পরদিন বুধবার ফেসবুকে হামিন লিখেছেন, ‘আমি তোকে হৃদয়ের গহিনে রেখেছিলাম, আজ সেটা নিবিড়ভাবে অনুভব করছি। তুই হয়তো চিরতরে চলে গেছিস, কিন্তু তুই চলে আসলে যাসনি; সব সময়ই আমার জীবনের অংশ হয়ে থাকবি। আমাদের দেখা হওয়ার আগে যতক্ষণ সূর্য আলো দেবে, হাওয়া বইবে, বৃষ্টি ঝরবে ততক্ষণ তুই আমার ভেতরে বেঁচে থাকবি।’
হামিন ও শাফিনের সঙ্গে মাইলসের নাম নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। মাইলসের বেশির ভাগ গানেই কণ্ঠ দিয়েছেন শাফিন।
এর আগে মঙ্গলবার ভাইকে নিয়ে প্রথম আলোকে লিখেছিলেন হামিন আহমেদ। তিনি লেখেন, ‘শাফিনের হঠাৎ চলে যাওয়ার খবরটা শোনার পর কেমন লেগেছিল, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যেটুকু বলতে পারি, ওর মৃত্যুর খবর শুনে আমার কলিজা ছিঁড়ে গেছে মনে হয়েছে। বিশ্বাসই হচ্ছিল না। সত্যি শুনছি তো? ভাবতে পারছি না। কীভাবে কী হয়ে গেল!’
হামিনের ভাষ্যে, ‘আমাদের বয়সের ব্যবধান এক বছরের। পিঠাপিঠি ছিলাম। আমার থেকে এক বছরের ছোট হলেও ছোটবেলা থেকে সবকিছু একসঙ্গেই ছিল। আমি যেখানে ছিলাম, সে ওখানে ছিল। সে যেখানে ছিল, আমি ওখানে। বন্ধু মহলও কমন ছিল। সেই সূত্রে আমি মাইলসে যোগ দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে সে-ও যোগ দেয়। এরপর মাইলসের যাত্রা তো সবারই জানা। শাফিন অনন্য ছিল, কারণ, সবকিছুতে খুব খুঁতখুঁতে ছিল, যেকোনো কাজ সূক্ষ্মভাবে করত। কাজ শুরুর আগে ব্যাপক প্রস্তুতি থাকত। বিস্তারিত মনোযোগ যেটাকে বলে, সেটাই শাফিন। কোনো শর্টকাট পদ্ধতি নয়, একদম কাজে গভীরতায় বিশ্বাসী ছিল। কোনো ফাঁকিজুঁকি ছিল না। প্রতিটি কাজে মনোযোগ ও আন্তরিকতা ছিল দেখার মতো।’
হামিন আরও লিখেছেন, ‘সময়মতো মহড়ায়, রেকর্ডিংয়ে আসা—এ ব্যাপারগুলো শাফিনের মধ্যে দারুণ ছিল। যেকোনো সমস্যায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা, সমাধানে সামনে থেকে কাজ করা। ব্যান্ডে শাফিনের একাগ্রতা, নিষ্ঠা, সময় দেওয়ার ব্যাপারটা চোখে পড়ার মতো ছিল। বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক যাত্রায় গায়কির ক্ষেত্রে যে জায়গা, শাফিন সেখানে একটা অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। প্রতিশ্রুতি তো তখন দাবানলের মতো জ্বলে উঠল। কেন? গানের কম্পোজিশন বটেই, শাফিনের কণ্ঠও একটা ব্যাপার ছিল। ওর গলায় যেভাবে ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘জাদু’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’—অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে, তা কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না।
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে ওর যে গায়কি, প্রক্ষেপণ ও গলার সুর—তা মানুষকে একদম পাগল করে দিয়েছিল। স্টুডিওতে রেকর্ডিং শেষে প্যানেলে যখন শাফিনের গান শুনতাম—বুঝতাম, ওর গায়কি কত সুন্দর। কত মাপা। গান গাওয়াটা শুধু তো সুর আর ছন্দ নয়—এর বাইরেও অনেক ব্যাপার আছে। এই ব্যাপার ওর মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রেই ছিল।