সুকান্ত-অভিজিতের কণ্ঠে দিনেন্দ্রনাথের গান

অভিজিৎ মজুমদার ও সুকান্ত চক্রবর্তী
অভিজিৎ মজুমদার ও সুকান্ত চক্রবর্তী

কে এই দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর?
তাঁর নাম তেমন পরিচিত নয় অনেকের কাছেই। পদবি ঠাকুর জেনে হয়তো অনুমান হবে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির কেউ হয়তো। কিন্তু যদি বলি, রবীন্দ্রনাথের এত গান যে শিখছেন এখনও শিল্পীরা, তার পেছনে দিনু ঠাকুরের হাত, তবে হয়তো নড়েচড়ে বসবেন সবাই।
রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ গানের স্বরলিপিকার ছিলেন এই দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র দ্বীপেন্দ্রনাথ। আর দ্বীপেন্দ্রনাথের পুত্র দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সূত্রে দিনেন্দ্রনাথ ছিলেন রবীন্দ্রনাথের নাতি। তাঁর নামের আদি বানান ছিল ‘দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর’। রবীন্দ্রনাথই এই নামের বানান পরিবর্তন করে রেখেছিলেন ‘দিনেন্দ্র’।
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অশ্রুত নয়টি গান নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশের সুকান্ত চক্রবর্তী ও ভারতের অভিজিৎ মজুমদারের কণ্ঠে এই অ্যালবামের শিরোনাম ‘আমার বেদনা লহ বুঝি’। যন্ত্রানুষঙ্গ অম্লান হালদারের।
কলকাতায় থাকা শিল্পী সুকান্ত চক্রবর্তীর সঙ্গে ফেসবুকে কথা হলো। তিনি জানালেন, ‘দুই বাংলা মিলিয়ে এই প্রথম দিনেন্দ্রনাথের গানের সংকলন প্রকাশিত হলো। শিল্পী ও শিক্ষক ওয়াহিদুল হক প্রথম দিনেন্দ্রনাথের রচনার সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। আজ গাইতে গিয়ে বুঝছি, দিনেন্দ্রনাথ মেধায় একজন প্রায়-রবীন্দ্রনাথ ছিলেন।’
জিজ্ঞেস করি, এমনটা বলছেন কেন?
সুকান্ত লিখলেন, ‘দিনেন্দ্রনাথের কাব্যপ্রতিভা ও গানের ধারা রবীন্দ্রানুসারী। আবার রবীন্দ্রনাথও তাঁর এই নাতির দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ছিলেন গানের সুর করার ক্ষেত্রে। দিনেন্দ্রনাথের সব রচনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি ভূমিকাসহ দিনেন্দ্র রচনাবলী বের হয়েছিল, সেখানে রবীন্দ্রনাথই দিনেন্দ্রকে প্রায়-রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন।’
সুকান্ত জানালেন, দিনু ঠাকুরের মাত্র ১৪টি গান এখন স্বরলিপিসহ পাওয়া যায়। তারই ৯টি এই অ্যালবামে ঠাঁই পেয়েছে। বাকি গানগুলোর মুদ্রণে কিছু প্রমাদ ও অসংগতি দেখা যায় বলে সেগুলো অ্যালবামে রাখা হয়নি।

দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী কমলা দেবী
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী কমলা দেবী

অ্যালবামের নয়টি গান হলো—‘পথপাশে মোর রচিনু দেউল’, ‘পলাশরাঙা বাসনাগুলি’, ‘আজি আঁধার সাগর মগন’, ‘তোমার সুতায় গেঁথে লব’, ‘বুঝেছি বুঝেছি তব বাণী’, ‘আজি এ নিশীথে জাগে একাকী’, ‘তারে কেমনে ধরিব হায়’, ‘যারে ভালোবেসেছিলি’ ও ‘বলা যদি নাহি হয় শেষ’।
সুকান্তই জানালেন অ্যালবামের খবর শুনে কবি শঙ্খ ঘোষের অনুভূতি, ‘রবীন্দ্রসংগীতের যাঁরা অনুরাগী, তাঁরা অনেকেই সমান অনুরাগে মনে রাখেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। তিনি যে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র, এ কথার চেয়ে বেশি মনে থাকে এই তথ্য যে, রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলতেন তাঁর “গানের ভান্ডারী”। সুর দিয়ে ভুলে যেতেন নিজে, তাই সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দরকার হতো তাঁর স্নেহের দিনুর স্বর আর স্বরলিপির সহায়তা। তা না হলে কত গানই যে চলে যেত বিস্মরণে! তাই দিনেন্দ্রনাথের কাছে আমাদের অশেষ ঋণ।’