কত কেজি সোনা রেখে গেছেন বাপ্পি লাহিড়ী
গলায় সব সময় চারটির বেশি সোনার চেইনসহ নানা অলংকার পরতেন বাপ্পি লাহিড়ী। তবে এসব শখে নয়। এগুলোকে তিনি ‘আশীর্বাদ’ মনে করে ব্যবহার করতেন। তিনি মনে করতেন, সোনা-রুপা ব্যবহারের পর তাঁর ভাগ্য খুলতে থাকে; অর্থাৎ এগুলো ব্যবহার করলে তাঁর গান সুপারহিট হবে। সেই থেকেই তাঁর সোনা-রুপার ব্যবহার বাড়তে থাকে। সোনার প্রতি তাঁর অনুরাগ নিয়ে চর্চা হতো। এক অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা রাজ কুমারের সঙ্গে দেখা হয় বাপ্পির। সুরকারের গলায় ভারী ভারী সোনার গয়না দেখে হেসে ওঠেন রাজ। বলেছিলেন, ‘শুধু মঙ্গলসূত্রের অভাব রয়ে গেল দেখছি।’ সোনার অতিরিক্ত ব্যবহার কারও কাছে আবার ঠাট্টার বিষয়বস্তু ছিল। কিন্তু নিজেকে কোনো দিন বদলে ফেলার চেষ্টা করেননি বাপ্পি লাহিড়ী। আপনি কি জানেন, সদ্যপ্রয়াত এ সংগীতশিল্পীর রেখে যাওয়া সোনার পরিমাণ কত?
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর ব্যবহৃত সোনা-রুপার পরিমাণ ৫ কেজি ৩৫৪ গ্রাম। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এই গায়ক। সেই সময় মনোনয়নপত্রে সোনা-রুপার পরিমাণ উল্লেখ করেন। তখন জানা যায়, ভারতীয় এই গায়ক ৭৫৪ গ্রাম সোনা ও ৪ কেজি ৬২০ গ্রাম রুপার মালিক। এই সবই তাঁর গলার চেইন, ব্রেসলেট, হাতের ঘড়িসহ অন্যান্য ব্যবহৃত অলংকার বা গয়না। এসব গয়না ব্যবহার প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাপ্পি বলেন, ‘আমার স্রষ্টার নাম সোনা! যখন থেকে সোনার গয়না পরা শুরু করেছি, আমার একের পর এক গান হিট করা শুরু করেছে। সোনা আসলে আমার জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই এত সোনার গয়না কিনি আর পরি।’
বাপ্পির এসব গয়না তাঁর স্ত্রী চিত্রাণী লাহিড়ীও পরতে ভালোবাসেন। তবে বাপ্পি লাহিড়ীর থেকে তাঁর স্ত্রীর সোনার গয়নার পরিমাণ আরও বেশি। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চিত্রাণী ৯৬৭ গ্রাম সোনা, ৮ কেজি ৯০০ গ্রাম রুপার গয়না রয়েছে।
এলভিস প্রিসলির ভক্ত ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। প্রিসলি সোনার হার পরতেন। সেটা দেখেই উৎসাহিত হন বাপ্পি। প্রিয় গায়ককে দেখে তরুণ বাপ্পি ইচ্ছা পোষণ করতেন, যদি কোনো দিন সফল হন, তাহলে তিনিও গয়না পরবেন। পরে সত্তর দশকে সফলতার মুখ দেখতে থাকেন। তখন কিছুটা স্বর্ণ ব্যবহার করলেও, পরে আশির দশকের পর থেকে নিয়মিত সোনা ও রুপার ব্যবহার শুরু করেন। তবে এসব গয়না নিয়ে অনেকেই নানা রকম সমালোচনা করতেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একসময় মানুষ ভাবত, আমি সবাইকে দেখানোর জন্যই সোনার গয়না পরি; কিন্তু সেটা ঠিক নয়। সোনা আমার কাছে সৌভাগ্যের বাহক, আমার এগিয়ে যাওয়ার সাহস।’
মঙ্গলবার মধ্যরাতে মুম্বাইয়ের জুহুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। গত বছর এপ্রিল মাসে তাঁর করোনা ধরা পড়ে। সেই সময় মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় (ওএসএ) আক্রান্ত হয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।