অন্য যে কারণে সিনেমাটি আলোচনায়
লাতিন সাহিত্যের অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী উপন্যাস হুয়ান রুলফোর ‘পেদ্রো পারামো’। ১৯৫৫ সালে প্রকাশের পরপরই রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। এই উপন্যাসকে নিজের লেখালেখির অন্যতম প্রেরণা বলেছেন গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। এবার সেই জাদুবাস্তবতার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে মেক্সিকোর সিনেমা ‘পেদ্রো পারামো’। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারের পর ৬ নভেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে রদ্রিগো প্রিয়েতোর সিনেমাটি।
‘পেদ্রো পারামো’র প্রসঙ্গে উঠতেই ঘুরেফিরে আবার চর্চায় মার্কেস। তুমুল জনপ্রিয় এই কলম্বিয়ান লেখক নাকি হুয়ান রুলফোর উপন্যাসটির দাঁড়ি-কমাসহ মুখস্থ বলতে পারতেন। কেবল মার্কেসই নন, যুগে যুগে বহু স্প্যানিশ লেখকের অন্যতম প্রেরণা এই উপন্যাস। তো কেমন হলো বহুল চর্চিত এই উপন্যাসের চলচ্চিত্র-রূপ।
আগেই বলে নেওয়া যাক, এটিই ‘পেদ্রো পারামো’র প্রথম চলচ্চিত্র রূপায়ণ নয়। মূল উপন্যাস প্রকাশের ১২ বছর পর পেদ্রো পারামো সিনেমা নির্মাণ করেন কার্লোস ভেলো। সেটি ১৯৬৭ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। নতুন ছবিটির ঘোষণা আসে ২০২১ সালে। পরের বছর জানা যায়, সিনেমাটি বানাবেন মেক্সিকান চিত্রগ্রাহক রদ্রিগো পিয়েতো। এটিই তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা। এখানে ‘পেদ্রো পারামো’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন ম্যানুয়েল গার্সিয়া-রুলফো।
বাবার সন্ধানে মৃতদের গ্রাম কোমালায় এসেছে নায়ক। কে জীবিত, কে মৃত―এমন এক ধোঁয়াশার মধ্যে এগিয়ে যায় গল্প। মুক্তির পর থেকে সমালোচকদের প্রশংসা পাচ্ছে সিনেমাটি। রজারইবার্টডটকম-এ সিনেমাটি ৫-এ রেটিং পেয়েছে ৩. ৫। রিভিউতে বলা হয়েছে, নির্মাতা রদ্রিগো প্রিয়েতো চিত্রগ্রাহক। মার্টিন স্করসেজি, অ্যাং লি, আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতুর মতো নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
প্রখ্যাত নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ আর সিনেমাটোগ্রাফির অভিজ্ঞতা তাঁকে পর্দায় ঠিকঠাকভাবে জাদুবাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। চলচ্চিত্রবিষয়ক মার্কিন গণমাধ্যম ভ্যারাইটি অবশ্য ছবিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। অভিনয়, চিত্রগ্রহণ ভালো হলেও গণমাধ্যমটি মনে করে, সিনেমা হিসেবে ঠিক ক্লিক করতে পারেনি “পেদ্রো পারামো”।
‘নির্মাতা পুরোনো দিনের নির্মাণের ধাঁচে এটি বানিয়েছেন, হয়তো সেটা ছবির মেজাজের সঙ্গে যায়; কিন্তু দর্শকের চাওয়া পুরোপুরি পূরণ করতে পারেনি।’ বলছে ভ্যারাইটি।
সিনেমাটি মুক্তির আগে সাক্ষাৎকারে নির্মাতা রদ্রিগো প্রিয়েতো বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব মূল উপন্যাসের কাছাকাছি থাকতে। সিনেমায় প্রচুর সংলাপ আছে, যেগুলো হুবহু বই থেকে নেওয়া; এখানে শিল্পীদের ইম্প্রোভাইজেশান তেমন জায়গা ছিল না। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সিনেমাটি দেখে যেন কারও কৃত্রিম মনে না হয়।’