গত বছরের ডিসেম্বরে ‘মোবারকনামা’ মুক্তির পর প্রশংসিত হয়েছিল। বিভিন্ন পুরস্কারেও মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নতুন কাজ করতে এক বছর লাগল কেন?
শাহনাজ সুমি : ভালো কাজ করলে একটা দল ঠিক করে, তাঁকে কাজ দেওয়া যাবে না। কারণ, তাহলে তো তাদের কাছের মানুষেরা আর কাজ পাবেন না। এসব নিয়ে আগে কথা বলিনি; কিন্তু দেখলাম, সব সময় পজিটিভ কথা বললে লাভ হয় না। কেউ ভালো করলে একটা দল সব সময়ই তাঁকে সাইড করে রাখতে চায়।
প্রথম আলো :
তাহলে ‘অন্ধকারের গান’-এ যুক্ত হলেন কীভাবে?
শাহনাজ সুমি : মোবারকনামার আগেই ভিকি জাহেদ ভাইয়ের সঙ্গে একবার মিটিং হয়েছিল। একসঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। পরে নানা কারণে করা হয়নি। এই কাজ শুরুর আগে গল্পের সারসংক্ষেপ পাঠান, এভাবেই যুক্ত হওয়া। তবে এই কাজের ক্ষেত্রে একটা অন্য রকম ব্যাপার আছে।
সেটা কী?
শাহনাজ সুমি : সিনেমায় আমার অভিনীত চরিত্রটি যে খুব শক্তিশালী বা অভিনয়ের অনেক জায়গা ছিল, এমন নয়। আগে সব চিত্রনাট্যে রাজি হওয়ার সময় এসব বিষয় খেয়াল করেছি। কিন্তু এবার আমি রাজি হয়েছি গল্পের দর্শন ভালো লাগায়। এখানে আমি, মোশাররফ (করিম) ভাই, (জাকিয়া বারী) মম আপু—তিনটি প্রধান চরিত্র। তিনটি চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্য, সেটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছে। জীবনে সুখ খুঁজতে খুঁজতে কখন যে আমরা কবরের আড়াই হাত মাটি খুঁড়ে ফেলি, সেটাই গল্পে উঠে এসেছে। গল্পের যে দর্শন, সেটা আমার ব্যক্তিজীবনের সঙ্গেও মেলাতে পেরেছি, সে জন্যই কাজটি করা।
প্রথম আলো :
ট্রেলার দেখে মনে হয়েছে, আপনি পোশাকশ্রমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন...
শাহনাজ সুমি : হ্যাঁ। শাপলা, পোশাকশ্রমিক। বাবা নেই। মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে সংসার। চরিত্রটির দৈর্ঘ্য খুব বেশি বড় নয়, তবে আমি বলব, ছাপ রাখার মতো ইমপ্যাক্টফুল।
মোশাররফ করিমের সঙ্গে পরপর দুটি কাজ করলেন। তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
শাহনাজ সুমি : খুবই ভালো। ‘মোবারকনামা’ তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ ছিল; কিন্তু সেটে কখনো সেটা মনে হয়নি। সেটে তাঁর মতো খুব কম শিল্পীই অন্যকে এতটা সহযোগিতা করেন। এবার তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার পরই বললেন, ‘এত দিন কোথায় ছিলি’ এ ছবিতে আমার সব কটি দৃশ্যই মোশাররফ ভাইয়ের সঙ্গে।
প্রথম আলো :
অভিনয় করেননি বুঝলাম। এক বছর তাহলে কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন?
শাহনাজ সুমি : পড়াশোনা আর নাচ। আমি গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সে স্নাতকের শিক্ষার্থী। আমি তো শুরুই করেছি নাচ দিয়ে, ক্লাস টেনে পড়ার সময় ‘সেরা নাচিয়ে’তে অংশ নিয়েছিলাম। সৌদি আরব সরকারের আয়োজনে রিয়াদে সাংস্কৃতিক আয়োজনে পারফর্ম করেছি। কয়েক দিন আগে ‘ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার’ ওটিটি অ্যাওয়ার্ডে পারফর্ম করলাম। নাচ আমার খুবই পছন্দের। বিরতির পর আবার নাচে ফিরলাম, মানে দর্শকের সামনে পারফর্ম করলাম। এমনিতে আমি নিজে নিজে প্রতিদিনই নাচি। নিজের নাচ নিজেরই দেখতে ভালো লাগে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে যেমন নিজের অভিনয় সহ্য করতে পারি না। মনে হয়, অভিনয়শিল্পী আমি এখনো হতেই পারিনি। এত ভুল, কত কিছু শেখার বাকি।
তাহলে অভিনয়ের উন্নতির জন্য কী করছেন?
শাহনাজ সুমি : অভিনয় আমার কাছে মনে হয় লক্ষ্য, চর্চা আর প্রতিভার সমন্বয়। আমার লক্ষ্য ঠিক আছে, চর্চাটা আরও বেশি দরকার। কোনো নির্মাতা যদি বলেন, টাকার অভাবে কাজ করতে পারছেন না, চিত্রনাট্য পছন্দ হলে পারিশ্রমিক ছাড়াই করব। টাকা বা খ্যাতির জন্য আমি কাজ করছি না, অভিনয়টা ভালো লাগে বলেই করছি।
প্রথম আলো :
চর্চার কথা বলছিলেন, কিন্তু আপনি তো কাজই করেন কম। নাটকেও কাজ করেন না...
শাহনাজ সুমি : আমি মঞ্চে কাজ করিনি, মঞ্চে কাজ করতে অনেক সময় দিতে হয়; পড়াশোনার জন্য সম্ভব হয়নি। এখন টিভিতে কাজ করি না। যাঁরা অনেক দিন টিভিতে কাজ করেন তাঁদের সুবিধা হলো ১০ থেকে ১২ বছর অভিনয়ের পর একটা চলনসই জায়গায় চলে আসেন। কিন্তু এ ধরনের চর্চা আমার পছন্দ নয়। কারণ, আমার মনে হয়, টানা গড়পড়তা নাটক করলে অভিনয় নিয়ে, শিল্পচর্চা নিয়ে আমার যে লক্ষ্য, যেটা হারিয়ে যাবে। আমার অনেক নাম হবে, প্রচুর রিলস হবে; কিন্তু আমার দর্শনটাই হারিয়ে যাবে। এসব নাটকের প্রস্তুতি অনেক কম থাকে, চরিত্রের গভীরতা বেশির ভাগ সময় কম থাকে। প্রস্তুতি ছাড়া কাজ করলে আসলে অভিনয়ের সঙ্গে বেইমানি করা হয়, এ জন্য করি না। এই ঘাটতি পোষাতে যখন যে কাজ করছি, সেটার জন্য নিজেকে তৈরি করেছি। ‘মোবারকনামা’য় ১৫ দিন শুটিংয়ের জন্য ১৫ মাসের শ্রম-মেধা দিয়েছি। আগে যেসব নাটক করেছি ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’, ‘প্রিয়ন্তির জন্য একটু ভালোবাসা’ বা ‘বোতল ভূত’—আমরা দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়েছি। যেমন ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’র জন্য আমরা দেড় মাস রিহার্সেল করেছিলাম, লোকেশনে থেকে শুটিং করেছিলাম। সেটা পর্দায় বোঝা গেছে, এখনো বাইরে গেলে মানুষ আমাকে ওই নাটকের ‘বিজলি’ নামে ডাকেন। ফলে যেসব জায়গায় অভিনয়ের প্রতি আমার ভালোবাসা ঠিক থাকবে, সেসব কাজই করি।
কোনো স্বপ্নের চরিত্র আছে?
শাহনাজ সুমি : ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র ‘কুসুম’। কয়েক দিন আগেই তো সিনেমাটির ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। দেখে মনে হলো, ইশ্! জয়া (আহসান) আপু আমার পছন্দের চরিত্রটি করে ফেললেন। এটা আমার খুব পছন্দের বই, অনেক বছর ধরে স্বপ্নের চরিত্র।
প্রথম আলো :
এর আগে সাক্ষাৎকারে কাস্টিং কাউচ নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এবার কাজ থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুললেন...
শাহনাজ সুমি : আগে ভাবতাম যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, সেটা নিয়ে খারাপ কথা বললে তো হবে না, শুধু ভালো ভালো কথা বলতে হবে। এখন মনে হচ্ছে, যেটা সত্যি বলা উচিত। সুযোগ যে পাচ্ছি না, এমন নয়; কিন্তু যে সুযোগগুলো পাচ্ছি, সেগুলো গ্রহণ করার মতো মানসিকতা আমার নেই।
কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে?
শাহনাজ সুমি : ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন স্তরের অসুস্থতা আছে। কোথাও আপনাকে হাসি বিক্রি করতে হবে, নাহলে বিয়ে বিক্রি করতে হবে। অথবা বাচ্চা, বিচ্ছেদ, প্রেমিক-প্রেমিকা, বয়স বিক্রি করতে হবে। শুধু অভিনয়ের বিবেচনায় আপনাকে কেউ দুই পয়সার দাম দেবে না।
প্রথম আলো :
তাহলে কী করবেন?
শাহনাজ সুমি : এখন পড়াশোনায় মন দিচ্ছি। ইচ্ছা আছে স্নাতক শেষে কোনো করপোরেট হাউসে কাজ করব। যেহেতু এক বছর পরপর কাজের সুযোগ হয়, অন্য কাজের ফাঁকে অভিনয় করা যাবে (হাসি)। আপাতত জীবন গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।