মোশাররফ ভাইয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন: শাহনাজ সুমি

শাহনাজ সুমি। ছবি: জাহিদুল করিম
গত বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইতে মুক্তি পাওয়া দুই সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’ ও ‘মোবারকনামা’ দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন শাহনাজ সুমি। নাচ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা সুমি এখন অভিনয়েও আলো ছড়াচ্ছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোর কার্যালয়ে তরুণ এই অভিনেত্রীর মুখোমুখি হয় বিনোদন। আলাপে উঠে আসে তাঁর ক্যারিয়ার, অভিনয়–দর্শনসহ অনেক কিছুই।

বছরের শেষের দিকে মুক্তি পাওয়া গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘মোবারকনামা’ আলোচনায় ছিল সিরিজটির সাহসী বিষয়বস্তুর জন্য। এতে ধর্ষণের শিকার এক তরুণী সুরাইয়ার চরিত্রে দেখা গেছে শাহনাজ সুমিকে। বড় বোনের স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করার পর উল্টো সুরাইয়াকেই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

আরও পড়ুন

তাঁর পোশাক, ‘চরিত্র’ থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়েই রায় দিয়ে দেয় সমাজ, এমনকি পরিবারও তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তবে গল্পের এই প্লট খুব চেনা, ধর্ষণের শিকার তরুণীর চরিত্র হননের বাস্তব উদাহরণের অভাব নেই। এমন একটি গল্পে সুরাইয়ার চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আলাদা ছিল?

‘মোবারকনামা’র দৃশ্য। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

সুমি বললেন, এ সময়ে এমন একটি বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত কাজটির অংশ হওয়া তাঁর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে জানালেন সিরিজটি নিয়ে নিজের ভাবনাও, ‘আমরা এখনো পর্দায় কোনো খোলামেলা দৃশ্য দেখলে সেটাকেই সাহসী বলি কিন্তু আমার কাছে এটা কোনো সাহসী ব্যাপার নয়। সাহসী হলো এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করা, যার কথা মানুষ শুনতে চায় না, কান বন্ধ করে রাখে। শুনেও না শোনার ভান করে থাকা এই কথাগুলো বলা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো, এ ধরনের দৃশ্য অভিনয় সেটাই সাহসকিতা।’

সিরিজটি মুক্তির পর থেকেই এর কিছু সংলাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আদালতের কাঠগড়ায় ধর্ষণের শিকার নারীকে করা বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে অনেক দর্শক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তি তুলেছেন। সুমি মনে করেন, দৃশ্যটিকে

শাহনাজ সুমি। ছবি: জাহিদুল করিম

যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে ওই সংলাপগুলো জরুরি ছিল। সংলাপগুলো শক্ত না হলে দৃশ্যগুলোর আবেদনই আর থাকত না, চরিত্রটির গাম্ভীর্য নষ্ট হতো। অভিনেত্রী মনে করেন, যৌন হয়রানির মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে এ ধরনের কাজ যত বেশি হবে, মানুষের সচেতনতা তত বাড়বে। এই সিরিজে তাঁকে দেখা গেছে মোশাররফ করিমের সঙ্গে অভিনয় করতে। তাঁর মতো একজন তারকার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সুমি বললেন, ‘মোশাররফ ভাইয়ের সঙ্গে কাজের সময় আসলে খুব ভালো করব এটা মাথায় থাকে না, কারণ, ওনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন। তাই এটা নিশ্চিত করি খুব খারাপ যেন না হয়, তাহলেই চোখে লাগবে।’

‘মোবারকনামা’র আগে গত বছর সুমি অভিনয় করেছেন আরেকটি সিরিজ তানিম রহমান অংশুর বুকের মধ্যে আগুন–এ। অনেকের মতে, তাঁর অভিনীত চরিত্রটি তৈরি হয়েছিল জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূরের আদলে। সিরিজটিতে স্বল্প উপস্থিতি দিয়েও নজর কেড়েছেন, বিশেষ করে শাবনূরের সঙ্গে তাঁর চেহারার মিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়। তবে সুমি জানালেন, শাবনূরের সঙ্গে তাঁর চেহারার যে মিল ‘আবিষ্কৃত’ হয়েছে আগেই। ছোটবেলায় যখন সাজতেন তখনই মা বলতেন, ‘তোকে তো শানূরের মতো লাগছে।’ বড় হতে হতে এ কথা শুনতে হয়েছে অনেকবারই।

‘মোবারকনামা’র দৃশ্য। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

নাচের কথা যখন উঠলই, তখন বলে দেওয়া যাক, হালে অভিনয়ের জন্য আলোচিত হলেও সুমির শুরুটা হয়েছিল নাচ দিয়েই। শুরুতে উৎসাহ বেশি ছিল মায়ের। তাই তিনি স্কুলে ভর্তির আগে সুমিকে নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। শাবনূর থেকে শুরু করে অপি করিম, বিজরী বরকতউল্লাহ, রিচি সোলায়মান—সবার নাচের ভক্ত ছিলেন সুমি। নাচ শিখতেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি বা বাফায়। তাঁর যে এক্সপ্রেশন ভালো, অভিনেত্রী হিসেবে ভালোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে—কাকতালীয়ভাবে এ কথা প্রথম বলেছিলেন অপি করিম। তাই অভিনেত্রী হিসেবে আজকের পরিচয়ের জন্য অপি করিমের কাছে কৃতজ্ঞ সুমি।

তিনি বলেন, ‘উনি খুব আন্তরিক একজন, সবার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেন। যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন আমার কোরিওগ্রাফারকে বলেছিলেন, “নাচ কমিয়ে ওকে অভিনয়ে চেষ্টা করে দেখো।” শুটিংয়ের আগে আমার মা অপি আপুর আম্মুর সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। কারণ, আমার পরিবারের কেউ অভিনয়ে নেই, জানতাম না কীভাবে কী হয়।’ দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় রিয়েলিটি শো ‘সেরা নাচিয়ে’তে অংশ নেন সুমি। একই সময়ে অভিনয় করেন সালাহউদ্দিন লাভলুর নাটক ‘সোনার পাখি রুপার পাখি’তে। এটি ছিল তাঁর প্রথম নাটক।

শাহনাজ সুমি। ছবি: জাহিদুল করিম

এরপর ‘পাপ পুণ্য’, ‘দামাল’সহ কয়েকটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তবে তাঁর কাজের সংখ্যা কম। কম কাজ করার কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি, ‘ভালো চিত্রনাট্য না পেলে কাজ করতে চাই না। আবার ভালো চিত্রনাট্যে আমাকেও তো নির্বাচন করতে হবে। চরিত্র্যের দৈর্ঘ্য আমার কাছে ব্যাপার না, বুকের মধ্যে আগুন–এ আমার মাত্র ৯টি দৃশ্য ছিল। গল্প ও চরিত্র পছন্দ হলে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করি, না হলে নয়।’

সুমি ছোট টিভি নাটকে কাজ করেন না। ফলে ওটিটি আর সিনেমায় এত কম কাজ করে কি আর্থিকভাবে টিকে থাকা সম্ভব? সুমি বললেন, তিনি এখনো শিক্ষার্থী; গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ফলে পড়াশোনা শেষে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেবেন, এটা এখনই ভাবছেন না। মনের আনন্দে বেছে বেছেই কাজ করতে চান। যেন পাঁচ বছর পর কোনো আফসোস না থাকে।