মনোগামী দেখে কে কী বলছেন
চাঁদরাতে চরকিতে মুক্তি পায় ‘মনোগামী’। ফারুকী পরিচালিত এই ওয়েব ফিল্মের চমক ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। দীর্ঘদিন পর এই সিনেমা দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা আসে ফারুকী ও চঞ্চলের। এরপর জানা যায়, সিনেমাটিতে চঞ্চলের বিপরীতে অভিনয় করছেন সংগীতশিল্পী জেফার রহমান। তরুণ প্রজন্মের কাছে আলোচিত এই সংগীতশিল্পীর অভিনয়ে হাতেখড়ি বলা চলে এ সিনেমা দিয়েই। চাঁদরাতে মুক্তি পাওয়া এই ওয়েব ফিল্ম দর্শকদের অন্য রকম আনন্দ দিয়েছে। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, অনেক দিন পর একটা অসাধারণ ওয়েব ফিল্ম তাঁরা দেখেছেন।
গত বছরের ৩ আগস্ট এক জমকালো অনুষ্ঠানে চরকি ঘোষণা দেয় ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ নামের একটি প্রকল্পের। জানানো হয়, ১২ জন জনপ্রিয় নির্মাতা ১২টি ভালোবাসার গল্প নিয়ে চরকিতে ১২টি অরিজিনাল ফিল্ম বানাচ্ছেন। পুরো প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ‘মনোগামী’ ১২টি চরকি অরিজিনাল ফিল্মের একটি।
কোন ভাবনা থেকে সিনেমাটি নির্মাণ করছেন, এমন প্রশ্নে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলেন, ‘আমার প্রিয় একটা কাজ হচ্ছে মানুষের মনের ভেতর ছিপ ফেলে দেখা, কী কী ধরা পড়ে সেখানে। ছোট-বড়, তুচ্ছ-গুরুত্বপূর্ণ—সবই আমাকে নাড়া দেয়। “মনোগামী”তে অনেক দিন পর নারী-পুরুষ সম্পর্কের কিছু দিক নিয়ে এই রকম ছিপ ফেলার সুযোগ পেয়েছি।’ পরিচালকের ভাষ্যে, ‘ব্যাচেলর ছবিতে ব্যাচেলর জীবনের কিছু দিক কোনো রকম রাখঢাক ছাড়া দেখাতে পেরেছিলাম। এখানে বিবাহিত ও প্রবাহিত জীবনের কিছু দিক কোনো সুইট কোটিং ছাড়া দেখানোর সুযোগ পেয়েছি।’
নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তপু খানের কথায়ও যেন তেমনটাই উঠে এসেছে। তিনি ‘মনোগামী’ ওয়েব ফিল্ম দেখে তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘সরয়ার ভাইয়ার কাজ যখন প্রথম থেকেই দেখা শুরু করি, তখন থেকেই একটা জিনিস লক্ষ করি আমি, সাধারণ একটি গল্পের মধ্যে সুন্দরভাবে অসাধারণ কিছু বার্তা তিনি দিতে পারেন। আমাদের সবার মধ্যেই দুই রকম রিপু বাস করে—সুরিপু ও কুরিপু। ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলাম এই ব্যাপারে। সুরিপুকে আমরা প্রকাশ করি। কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিতভাবে প্রকাশ করি, যেন সাধারণ মানুষ আমার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে। আর কুরিপু যতই বেশি থাকুক না কেন আমাদের মধ্যে, সেটাকে আমরা নিবারণ করি বা লুকিয়ে রাখি। তারপরও দিন শেষে বিবেকের কাছে বাধা থাকে মানুষ। তাই একা হলেও মানুষ নিজের সাথে কথা বলে, নিজেকে জানতে চায়, নিজেকে শোধরাতে চায়। আবার নিজের ভেতরে থাকা সুপ্ত অবৈধ ইচ্ছাগুলোকে বাস্তবে রূপান্তর করতে চায় স্বল্প সময়ের সুখের আশায়। মানুষের মধ্যে থাকা এই অন্তর্দ্বন্দ্বকে এত সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে “মনোগামী”তে, যা আসলে সবার দেখা উচিত।’
চরকিতে “মনোগামী” দেখে ফেসবুকে তাইমুন পিয়া নামের একজন পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আধুনিক মনস্তত্ত্বকে মাত্রা ধরে বরাবর কাজ করেন তিনি। তাই তাঁর কাজ অনেক সময় আমার মাথার ওপর দিয়েও চলে যায়। আসলে এত সরল করে তিনি দৃশ্য তৈরি করেন যে পরবর্তীকালে দেখা শেষ হলেও ভাবতে হয়, ও আচ্ছা! এই দৃশ্য দিয়ে তিনি ও-ই বুঝিয়েছেন!’
ফেসবুক পোস্টে তাইমুন পিয়া জানান, ফারুকীর বানানো ‘টেলিভিশন’, ‘ডুব’ দেখে তাঁর খুব ভালো লেগেছে। ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ দেখেও ভালো লাগছে। কিন্তু ‘ব্যাচেলর’ মুভি কেমন যেন রাডারের ওপর দিয়ে গেছে। এদিকে ‘মনোগামী’ মুভিতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন, চাইছেন, তা এখনো ভাবছেন।
তাইমুন পিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দুই প্রজন্ম—একজন কম বয়সী, নতুন স্বপ্নে ভরপুর এক মেয়ে—জেফার; আরেকজন সাধারণ সংসারী ভালো মানুষ, একজন স্বামী, একজন পিতা, বউ-বাচ্চার কাছে বিশ্বস্ত, সুখী মানুষ—চঞ্চল চৌধুরী। সেই ভদ্রলোকের পদস্খলন, যুবসমাজের কাছে একগামিতা এখন খেলো বিষয়—এসব দেখালেন। হাসতে হাসতেই দেখালেন। যদিও বাস্তবিক বিষয়গুলো হাসির থাকে না। খুবই জটিল ও বিশ্রী পর্যায়ে চলে যায়। ফারুকী ভাইয়ের মুনশিয়ানা এটাই যে তিনি খুব জাইত্যা ধইরা সমস্যা ও সমাধান বুঝাইতে বসেন না কোনো মুভিতে, যা হামেশা ঘটছে। জীবনের একঘেয়ে স্বাদের ভেতর একটু নতুনত্ব আশা করে মানুষ নির্দোষভাবেই। মিডলাইফ ক্রাইসিস হয়তো এমনই হয়। সারা জীবন ভালো মানুষ হয়ে কাটিয়ে দিতে দিতে মনের অদৃশ্য কোণে অবদমিত চাহিদারা তুমুল পরাক্রমশালী হয়ে ওঠে। মানুষ চাইলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না, এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে কেউ পাত্তাই দিলেন না! সবাই যা খুশি তা বলে যাচ্ছেন মুভির বিষয়ে। স্পয়লার দিচ্ছেন। মানছি কাহিনিতে নতুনত্ব নাই। অথচ সত্য তো এটাই, যার জীবনে ঘটে, তার জীবনে প্রতিটি ঘটনাই নতুন এবং জীবনের ঘটনাগুলো ছাড়া-ছাড়া হয়েই জমতে থাকে আমৃত্যু। সবার অভিনয় ভালো ছিল। আপনিও মুভিটা দেখতে পারেন, তবে ইতিবাচক মন নিয়ে দেখতে পারলে ভালো, নয়তো দেখিয়েন না।’
চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রযোজক ইফতেখার মুনিম ‘মনোগামী’ দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া ফেসবুকে লিখেছেন এভাবে, ‘মনে হলো অনেক দিন পর একটা খুব অসাধারণ ওয়েব ফিল্ম দেখলাম! নিকট অতীতে এমন পরিপূর্ণ ওয়েব ফিল্ম দেখিনি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অনবদ্য নির্মাণে ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’তে চঞ্চল চৌধুরী ও জেফার রহমানের অভিনয় আরও যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। উল্লেখ করার মতো ছিল, শিশু অভিনয়শিল্পী শুদ্ধ আর রাইয়ের অভিনয় প্রতিভা। ঈদে এমন উপভোগ্য একটি ওয়েব ফিল্ম উপহার দেওয়ার জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চরকিকে ধন্যবাদ।’
নূরে আলম নামের একজন ‘মনোগামী’ দেখে লিখেছেন, ‘পরিচালকের ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও কল্পনার সামাজিক বয়ান এটি। জীবনে চলার পথে আবেগ ও বিবেকের সংঘর্ষ অনিবার্য। এ সংঘর্ষের ফলাফল হলো মানুষের চরিত্র। এখানে আবেগ বা বিবেক কেউ জেতে না। জয়-পরাজয়ের চেয়ে মাঠে থাকাটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ এদের কাছে।’ পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কাজের গুণমুগ্ধ ভক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘মনোগামী’র চিত্রনাট্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। গল্প বলার ধরনে পরিচালক নিজস্ব ঢঙে এগিয়েছেন। চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে জেফার খারাপ করেননি।