প্রথমবার সিরিজের গল্প লিখলেন গুলতেকিন খান, বানাচ্ছেন নুহাশ
প্রথমবারের মতো কোনো সিরিজের গল্প লিখলেন কবি গুলতেকিন খান। মায়ের গল্পে চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’-এর দ্বিতীয় মৌসুম নির্মাণ করছেন নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন।
শৈশব থেকেই মায়ের নেওটা ছিলেন নুহাশ। স্কুলের হোমওয়ার্কেও মা-ই ছিলেন ভরসা। মায়ের কাছে বাংলা, ইংরেজি পড়ে, অঙ্ক কষে শৈশব কেটেছে। বহু বছর পর সেই হোমওয়ার্কের স্মৃতিকাতর দিনে ফিরেছেন মা ও ছেলে। আবারও হোমওয়ার্ক করতে বসেছেন তাঁরা। দুজন মিলে হিসাব কষে গল্প লিখেছেন।
মা ও ছেলে মিলে ‘পেট কাটা ষ’ সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুমের চারটি গল্পের মধ্যে তিনটি গল্প লিখেছেন। কবি গুলতেকিনকে প্রথমবারের মতো কোনো সিরিজের গল্পে পাওয়া যাবে।
গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই শৈশবের হোমওয়ার্কের দিনে ফিরলেন নুহাশ হুমায়ূন। তিনি বললেন, ‘আমি মায়ের হাতেই পড়াশোনা শিখেছি। চার-পাঁচ বছর থেকে আমাকে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক পড়াতেন। একসঙ্গে চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে সেসব দিনের কথা মনে পড়ছে। মা একটা বাক্য লিখছে, আমি আরেকটা বাক্য লিখছি।’
আমি মায়ের হাতেই পড়াশোনা শিখেছি। চার-পাঁচ বছর থেকে আমাকে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক পড়াতেন। একসঙ্গে চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে সেসব দিনের কথা মনে পড়ছে।নুহাশ হুমায়ূন
যখন গল্প ও চিত্রনাট্য লেখা চলছিল, তখন বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরেই ছিলেন নুহাশ। মায়ের সঙ্গে ফোনে ফোনে লেখাটা শেষ করেছেন। ‘মশারি’ নির্মাতা নুহাশের ভাষ্যে, ‘তখন মা দেশে ছিলেন, ফোনে আমরা সংলাপ বলে বলে লিখেছি। এটা ভীষণ মজার একটা অভিজ্ঞতা ছিল।’
নুহাশের নির্মাতা হিসেবে বেড়ে ওঠার সঙ্গে ছায়ার মতো জড়িয়ে আছেন মা গুলতেকিন খান। নির্মাতা হওয়ার পেছনে মায়ের অসামান্য ভূমিকার কথা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন নুহাশ। নুহাশের বড় সমালোচকও তিনি।
নুহাশের প্রতিটি চিত্রনাট্যের সঙ্গেই মিশে আছেন গুলতেকিন খান। কীভাবে? নুহাশ বলছিলেন, ‘যখনই কোনো চিত্রনাট্য লিখি, সেটা প্রিন্ট করে মা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। চিত্রনাট্যের ভালো-মন্দ নিয়ে আমরা আলোচনা করি। আমার চিত্রনাট্যের সঙ্গে মা ভীষণভাবে জড়িয়ে থাকেন।’
‘সৃজনশীল ক্ষেত্রে কাজ করলে অনেককে পরিবার বুঝতে চায় না। কিন্তু আমার পরিবার শুধু বুঝছেই না, আমার সঙ্গে কাজও করছে। এটা আমার জন্য গর্বের ব্যাপার, আমি ভীষণ সৌভাগ্যবান, ’ উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন নুহাশ।
এর আগে পরিবারের একাধিক সদস্যকে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ভাগনি (অভিনেত্রী শীলা আহমেদের মেয়ে) নাইরা ওনোরা সাইফকে নিয়ে মশারি নির্মাণ করেছেন নুহাশ। পরিবারের আরেক সদস্য প্রয়াত কবি আফতাব আহমেদের (গুলতেকিন খানের স্বামী) সঙ্গে পেট কাটা ষ সিরিজের প্রথম মৌসুমের ‘লোকে বলে’ গল্পটি লিখেছেন নুহাশ।
চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি প্রথম আলোকে জানান, পেট কাটা ষ সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুমের দৃশ্যধারণ শেষের পথে। এ বছরের শেষের দিকে সিরিজটি মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগের মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমের চিত্রনাট্য ভীষণ পরিণত। বিশেষ করে গুলতেকিন ম্যামের (খান) ইনপুট সিরিজটাকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে।’
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হুলুতে মুক্তি পেয়েছে নুহাশের স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘ফরেনারস অনলি’। এ বছর ‘পেট কাটা ষ’ ছাড়াও একাধিক আন্তর্জাতিক কাজ করেছেন তিনি।
গুলতেকিনের চোখে নির্মাতা নুহাশ
‘ছোটবেলা থেকেই নুহাশ ওর বয়সীদের থেকে একটু অন্য রকম। লিখত, আঁকত; ক্লাস এইটে শ্রেণিতে পড়ার সময় “ক্রিয়েটিভ রাইটিং” বিষয়ে ওকে নিয়মিত লিখতে হতো। ওর লেখাগুলো আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। লেখাগুলো দারুণ ছিল। ও পত্রিকায় কার্টুনও এঁকেছে, ’ গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নুহাশকে নিয়ে বলছিলেন মা গুলতেকিন খান।
গুলতেকিন বললেন, ‘নুহাশ চমৎকার গল্প লিখেছে। একজন নির্মাতা হিসেবে সেসব গল্পকে ভিজ্যুয়াল রূপ দিয়েছে।’
নির্মাতা নুহাশকে নিয়ে গুলতেকিন খান বললেন, ‘ও যখন যেটা করে, খুব মনোযোগ আর নিষ্ঠার সঙ্গে করে। মা হিসেবে বলছি না, দর্শক হিসেবে বলছি, নুহাশের নির্মাণ আমার খুব ভালো লাগে।’
‘ওর সব কাজই আমার ভালো লাগে। মশারি কাজটা খুবই চমৎকার। পেট কাটা ষ সিরিজটাও আমার খুব পছন্দের।গুলতেকিন খান
নির্মাতা নুহাশের কোন কাজটি আপনার পছন্দের? জবাবে কবি গুলতেকিন খান বললেন, ‘ওর সব কাজই আমার ভালো লাগে। ‘মশারি’ কাজটা খুবই চমৎকার। ‘পেট কাটা ষ’ সিরিজটাও আমার খুব পছন্দের। দুটি কাজই আমি বড় পর্দায় দেখেছি। বড় পর্দায় কোনো কাজ দেখার মধ্যে অন্য রকম আনন্দ আছে।’
প্রায় দুই দশক ধরে শিক্ষকতা করে পাঁচ বছর আগে স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন গুলতেকিন। এখন নিয়মিত লেখালেখি করছেন; কবি হিসেবে পাঠকদের কাছে সমাদৃত।
প্রথমবার কোনো সিরিজের গল্প লেখার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন গুলতেকিন বলেন, ‘এটা আমার জন্য অদ্ভুত সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা ছিল। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু নুহাশ যখন বলল সে পছন্দ করেছে, তখন মনে হলো, আমাকে খুশি করার জন্য ও “ভালো” বলবে না। গল্পটা ভালো না হলে ও বলত, “এখানে একটু ভালো করতে হবে। ” দুজন মিলে গল্পটা লিখেছি।’
সামনে আর কোনো সিরিজের গল্পে পাওয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে গুলতেকিন জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনো পরিকল্পনা করেননি। তবে লেখালেখিটা চালিয়ে যেতে চান।
গত বইমেলায় গুলতেকিনের ‘ছন্দে লেখা মানা’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে সামনের বইমেলার জন্য এখনো কোনো পরিকল্পনা করেননি বলে জানান তিনি।