যে সাত কারণে মুক্তির পরেই আলোচনায় ‘ফরজি’
‘শোর ইন দ্য সিটি’, ‘গো গোয়া গান’, ‘স্ত্রী’ দিয়ে নির্মাতা-লেখক হিসেবে পরিচিতি পান রাজ ও ডিকে। তবে এই নির্মাতা জুটি নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ দিয়ে। আমাজন প্রাইমে মুক্তির পর থেকেই ঝড় তোলে সিরিজটি। গত বছর সিরিজটির দ্বিতীয় কিস্তিও সমানভাবে জনপ্রিয়তা পায়। এর পর থেকেই তাঁদের নতুন কাজ দেখার অপেক্ষায় ছিলেন ভক্তরা। সে বলা যায় কড়ায়গন্ডায় মিটিয়েছেন তাঁরা। গতকাল আমাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়া তাঁদের নতুন সিরিজ ‘ফরজি’ নিয়ে এখন সরগরম নেট দুনিয়া। মুক্তির পরই সিরিজটি এমন জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাব্য সাত কারণ দেখে নেওয়া যাক।
গল্পের জমাট বুনুন
রাজ ও ডিকে ভালোই জানেন গল্পটা কীভাবে বলতে হয়। সিতা মেনন, সুমন কুমারের সঙ্গে মিলে এমন গল্প লিখেছেন, যা আজকাল ছেলেমেয়েরা পছন্দ করবে। একই সঙ্গে তা খুব সমসাময়িকও বটে। সিরিজটির গল্প চিত্রশিল্পী সানিকে নিয়ে, যে খুব ভালো কপি করতে পারে। কিন্তু তার প্রতিভার কেউ কদর করে না। শেষমেশ হঠাৎ নেওয়া এক সিদ্ধান্তে সানি ঠিক করে নকল নোট বানাবে। কারণ, সে জানে তার চেয়ে ভালো কাজটি আর কেউ করতে পারবে না। এরপর শুরু হয় নতুন এক গল্প।
অনেকেই মনে করছেন কয়েক বছর আগে ভারতে পাঁচ শ ও এক হাজার রুপির নোট বাতিল থেকে সিরিজটির গল্প অনুপ্রাণিত হয়েছে। তবে পরিচালকদ্বয় জানিয়েছেন, সরকারের নোট বাতিলের অনেক আগেই গল্পটি ভেবেছিলেন তাঁরা। শুরুতে সিনেমা হওয়ার কথা ছিল ‘ফরজি’। কিন্তু এত বড় গল্প সিনেমায় বলতে গেলে দৈর্ঘ্য অনেক বড় হবে, তাই সিরিজ আকারেই ‘ফরজি’ হয়।
সঠিক অভিনেতা নির্বাচন
‘ফরজি’ দিয়েই ওটিটিতে অভিষেক হলো শহিদ কাপুরের। সিরিজটি দেখার পর অনেক সমালোচকই বলেছেন, তাঁর চেয়ে ভালো চরিত্রটি আর কেউ করতে পারত না। সিরিজের গল্প এগোনোর সঙ্গে শহিদের চরিত্রের নানা দিক সামনে আসে। সে অনুযায়ী অভিনেতাও পারফর্ম করেন। বিশেষ করে শেষ পর্বে তাঁর অভিনয় মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছেন ভক্তরা। রাশি খান্না, কে কে মেনন, অমল পালকারও তাঁদের চরিত্রে যথাযথ।
আট পর্বজুড়ে রোমাঞ্চ ধরে রাখা
‘ফরজি’ বেশ দীর্ঘ সিরিজ। প্রতি পর্বের দৈর্ঘ্য কমবেশি এক ঘণ্টা। প্রায় আট ঘণ্টার সিরিজ বানিয়ে দর্শক ধরে রাখা সহজ নয়। কিন্তু কঠিন কাজটি ভালোভাবেই করেছেন রাজ ও ডিকে। যাঁরা ‘ফরজি’ দেখেছেন তাঁরাই বলেছেন, শুরু করলে শেষ না করে ওঠা সম্ভব নয়।
অসাধারণ রসবোধ
রাজ ও ডিকের সিরিজে যতই অ্যাকশন, ড্রামা থাকুক সূক্ষ্ম রসবোধ থাকবে না, তা–ই কি হয়। এখানেও ব্যতিক্রম নয়। ‘ফরজি’র সিচুয়েশনাল কমেডি মুগ্ধ করেছে দর্শককে। যেমনটা করেছিল ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর ক্ষেত্রে। ট্রেলারে মন্ত্রী ও বিজয় সেতুপতির কথোপকথনে যার খানিকটা ইঙ্গিত মিলেছিল।
শহিদ কাপুর আর বিজয় সেতুপতি
দক্ষিণ ভারতে এক দশকের বেশি ক্যারিয়ার হলেও ‘ফরজি’ দিয়েই হিন্দিতে অভিষেক হলো বিজয় সেতুপতি। সিরিজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক খ্যাপাটে কর্মকর্তা মাইকেল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অনেকেই বলছেন, ‘ফরজি’র সেরা প্রাপ্তি বিজয় সেতুপতি। কেবল তাঁকে দেখার জন্যই নাকি সিরিজটি দেখা যায়। অনেক দর্শক ‘ফরজি’র মাইকেলকে নিয়ে আলাদা সিরিজের দাবিও তুলেছেন। এ ছাড়া শহিদ কাপুরকেও সিরিজটিতে অসম্ভব স্টাইলিস্ট লেগেছে। ‘কবীর সিং’ দিয়ে অভিনেতা হিসেবে ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ শুরু করা শহিদের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকবে ‘ফরজি’।
দুর্দান্ত নির্মাণ
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এ দুর্দান্ত অ্যাকশন আর দীর্ঘ ওয়ান টেক শট দিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন রাজ ও ডিকে। এবারের ‘ফরজি’তে তেমন কিছু না থাকলেও পুরো সিরিজ দেখার সময় দারুণ একটা অনুভূতি পাবেন দর্শক। প্রতিটি দৃশ্য দর্শকের কাছে আরও বিশ্বাসযোগ্য, আকর্ষণীয় করে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি নির্মাতাদ্বয়। ভারতের মুম্বাই, গোয়া, আলিবাগ ছাড়াও সিরিজটির শুটিং হয়েছে নেপাল ও জর্ডানে।
এবং সেই চমক
লোকেশ কঙ্গরাজ ইউনিভার্স, যশরাজ ইউনিভার্স—ভারতে এখন যেন নির্মাতাদের ইউনিভার্স তৈরির চল চলছে। ‘ফরজি’র ক্ষেত্রে এমন কিছুর ঘোষণা না দিলেও মুক্তির পর স্পষ্ট হয়ে গেছে রাজ ও ডিকেও ওয়েবে তাদের ইউনিভার্স তৈরি করতে চলেছেন। সেটা কীভাবে, সেটা জানতে হলে সিরিজটি দেখে নেওয়াই ভালো। আগের খুব চেনা চরিত্র আছে কি না বা ‘ফরজি’ কীভাবে রাজ ও ডিকের ইউনিভার্সের অংশ, সেটাও তখন ভালোভাবে বোঝা যাবে। ইউনিভার্সের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর থেকে ‘ফরজি’ নিয়ে আরও উচ্ছ্বসিত ভক্তরা। কারণ, তাঁরা আশা করছেন নির্মাতা আগামীতে হয়তো আরও বড় কিছু নিয়ে হাজির হবেন।