জীবন নিয়ে আক্ষেপ কমাতে পারে এই সিনেমা

‘ত্রিভুজ’-এর পোস্টার। প্ল্যাটফর্মের সৌজন্যে

জীবনের প্রতি কমবেশি আক্ষেপ আছে সবারই। সমস্যা, সম্ভাবনা, জয় ও পরাজয়ের বেড়াজালে জীবন আটকে থাকে। দেখা যায়, যাঁর কাছে অর্থ নেই, তাঁর সব সমস্যা হয়ে ওঠে অর্থকেন্দ্রিক। অর্থাৎ অর্থ হলেই সব সমস্যা তিনি মিটিয়ে ফেলতে পারেন। আবার যাঁর কাছে অর্থ আছে, তাঁর সমস্যাগুলো এমন হয়ে থাকে যে অর্থ দিয়ে তিনি তাঁর সমাধান করতে পারেন না। এসবই কি ওয়েব ফিল্ম ‘ত্রিভুজ’-এর অন্তরালের কথা?
গল্পে যাওয়া যাক। মালেক ও চম্পার সুখের সংসার। মাথার ওপর ঝাড়বাতি নেই, ঘরে সুন্দর কারুকাজের ছবির ফ্রেম নেই। বস্তিতে একটা টিন দিয়ে ঘেরা ঘরে থাকেন দুজন। ভালোবেসে মালেককে বিয়ে করেন চম্পা। পর্দায় চরিত্র দুটিকে ধারণ করেছেন সোহেল মণ্ডল ও মৌসুমী মৌ। সহজ-স্বাভাবিক অভিনয় দিয়েই নিম্নবিত্ত জীবনকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন দুজন।

অন্যদিকে মধ্যবিত্ত জীবন আসাদ ও মলি দম্পতির। আসাদ চাকরি করেন, তাঁর বেতনের টাকায় চলে সংসার। তাঁদের সংসারেও ভালোবাসার কমতি নেই। জীবনকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা দেখেন, তাঁদের স্বপ্নগুলো সেভাবেই বেঁধে রাখে তাঁদের। আসাদ ও মলি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও ফারিন খান।

‘ত্রিভুজ’–এর শুটিংয়ে মৌ ও সোহেল। ফেসবুক থেকে

এ ছাড়া আছেন মিথিলা আর তন্ময়। একপর্যায়ে মিথিলা তন্ময়ের সঙ্গে থাকতে চান না। ডিভোর্স চান। তন্ময় তাঁকে সময় দেন না, তন্ময়ের কাছে তাঁর গুরুত্ব নেই। তন্ময় অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। কষ্ট থেকেই মিথিলা তন্ময়ের আইনজীবী বান্ধবীকে ডিভোর্সের কথাটা জানান। পর্দায় অর্থ, বিত্ত আর বৈভবের পাহাড়ে বাস করা মানুষ মিথিলা আর তন্ময় দম্পতি। শাহরিয়ার নাজিম জয় ও আনিকা কবির শখ অভিনয় করেছেন চরিত্র দুটিতে। অভিনয়নৈপুণ্য দিয়ে চরিত্র দুটিকে ধারণ করতে কার্পণ্য করেননি এ জুটি। আইনজীবী চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর।

ওয়েব ফিল্মটির চমক আসলে কী? সমাজের তিন স্তরে বাস করা তিন দম্পতি একটি প্রশ্নে এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। তাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়। আর প্রশ্নটির সূত্রেই গল্প পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
এ ছাড়া সিনেমা সময়ের কথা বলে। সময়ের দিনলিপির কথা ফুটে ওঠে গল্প-উপন্যাস, নাটক-সিনেমায়। বর্তমান সময়ের একটি বাস্তবতার চিত্রও দেখা গেছে ওয়েব ফিল্মটিতে। শুরুর দিকের একটি দৃশ্যে দেখা যায়, আসাদ-মলি দম্পতির দীর্ঘদিন ভালো-মন্দ খাওয়াদাওয়া হয়নি। আসাদের শখ হলো, ভালো-মন্দ খাবেন। কিন্তু বাজারে গিয়ে বড় মাছ কেনার সময় দাম শুনে নানা ভাবনাচিন্তা করে মলিকে ফোন করেন তিনি। মলির সঙ্গে কথা বলে মাছ যদিও কেনেন কিন্তু রিকশায় উঠে বাসায় যাওয়ার সময় রিকশা থেকে নামেন দোকান থেকে কিছু জিনিস নেওয়ার জন্য। রিকশাওয়ালা তখন রিকশা টান দেন। আসাদ তাঁর পেছন পেছন ‘ধর ধর’ বলে দৌড়াতে শুরু করেন।

তিন দম্পতির এক জায়গায় এসে পৌঁছানোর দৃশ্যটা আরও একটু আকর্ষণীয় হতে পারত। সব মিলিয়ে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সমাজের এই তিন স্তরের মানুষের নীতিনৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মনস্তত্ত্বের গল্পই ফুটে উঠেছে ওয়েব ফিল্ম ‘ত্রিভুজ’-এ। গত ১০ অক্টোবর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দীপ্ত প্লেতে ওয়েব ফিল্মটি মুক্তি পেয়েছে। নির্মাতা আলোক হাসান।

আরও পড়ুন

হরর, থ্রিলার দেখতে দেখতে অভ্যস্ত যাঁরা ভিন্ন স্বাদের কনটেন্ট দেখতে চান, সোশ্যাল ড্রামা ঘরানার ‘ত্রিভুজ’ তাঁদের ভালো লাগবে। পাশাপাশি জীবনের প্রতি অভিযোগ, আক্ষেপও ওয়েব ফিল্মটি দেখলে কিছুটা কমবে।